নির্বাচন কমিশন ছাড়ছেন অশোক লাভাসা, যোগ দিচ্ছেন এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাঙ্কে, এপ্রিলেই হতেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার
এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কে যোগ দিতে নির্বাচন কমিশনারের পদ ছাড়ছেন অশোক লাভাসা। লোকসভা ভোটের আগে মোদী-অমিত শাহকে কমিশনের ক্লিনচিট পর্বে অশোক লাভাসা লাগাতার অসম্মতি নথিভুক্ত করিয়েছিলেন। বর্তমান মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের মেয়াদ শেষে অশোক লাভাসারই সেই পদে বসার কথা ছিল। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অশোক লাভাসা নির্বাচন কমিশন থেকেই সরে যাচ্ছেন।
২০১৯ লোকসভা ভোটের আগে একাধিক নির্বাচনী বিধিভঙ্গে অভিযুক্ত নরেন্দ্র মোদী ও তৎকালীন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহকে ক্লিনচিট দিলেও নির্বাচন কমিশনের প্যানেলে তিনিই একমাত্র বিরোধিতা করেছিলেন। সেই নির্বাচন কমিশনার অশোক লাভাসা এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক (ADB) এর ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়ে পদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সরে যাচ্ছেন। গত বুধবার দুপুরে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের এক বিবৃতিতে নতুন ভাইস প্রেসিডেন্টের পদে অশোক লাভাসার নাম ঘোষণা করা হয়। ম্যানিলার সদর দফতর থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, সংস্থার বেসরকারি বিভাগ ও সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব সংক্রান্ত বিভাগের দায়িত্বে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে যোগ দিতে সম্মত হয়েছেন অশোক লাভাসা। আগামী ৩১ অগস্ট এই পদ থেকে অবসর নিতে চলেছেন বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট দিবাকর গুপ্তা। তাঁরই স্থলাভিষিক্ত হবেন লাভাসা।
এডিবিতে গেলে তিনি আর দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার হতে পারবেন না। আগামী বছর এপ্রিলেই মেয়াদ শেষ হচ্ছে বর্তমান মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরার। তারপর লাভাসাই হতেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার। কিন্তু তিনি এডিবিতে যোগ দিলে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার হবেন সুশীল চন্দ্র। অর্থাৎ ২০২১ সালে বাংলা, উত্তরপ্রদেশ, মণিপুর, গোয়া, পাঞ্জাব, ও উত্তরাখণ্ড বিধানসভা ভোটের সময় সম্ভবত নির্বাচন কমিশনার পদে থাকবেন সুশীল চন্দ্র।
১৯৮০ ব্যাচের হরিয়ানা ক্যাডারের এই আইএএস অফিসার অর্থ সচিব-সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় সরকারি দফতরের দায়িত্ব সামলেছেন। ২০১৮ সালের ২৩ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশনার হিসাবে যোগ দান করেন তিনি। তাঁর পদের মেয়াদ আছে আরও দু’ বছর। কিন্তু লাভাসার ঘনিষ্ঠমহল থেকে জানা যাচ্ছে, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের মর্যাদাপূর্ণ পদে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব গ্রহণ করতে চলেছেন বর্তমান নির্বাচন কমিশনার। এক প্রাক্তন যুগ্ম সচিব সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এই পদের মেয়াদ ৩ বছর, যা নির্বাচন কমিশনে লাভাসার মেয়াদের প্রায় সমতুল্য।
লাভাসা সত্যিই এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে গত ৪০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কোনও দায়িত্বে বহাল নির্বাচন কমিশনার তাঁর পদ ছাড়বেন। এর আগে ১৯৭৩ সালে তৎকালীন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নগেন্দ্র সিং আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) যোগ দেওয়ার জন্য ইস্তফা দিয়েছিলেন।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের প্রচারে নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহের বিরুদ্ধে প্ররোচনামূলক ভাষণ দেওয়ার অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাঁদের ক্লিনচিট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশনের তিন সদস্যের প্যানেল। তাতে একমাত্র অশোক লাভাসা বিরোধিতা করেছিলেন। তার কিছুদিনের মধ্যেই লাভাসার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে আয়কর ফাঁকি দেওয়ার একাধিক অভিযোগ ওঠে। তাঁর ছেলে যে সংস্থার ডিরেক্টর, সেখানেও হানা দেন আয়কর দফতর ও ইডি আধিকারিকরা। লাভাসার স্ত্রীয়ের বিরুদ্ধেও তদন্ত শুরু করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট।
২০২২ সালের অক্টোবরে অবসর নেওয়ার আগে ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা ভোট করানোর কথা ছিল অশোক লাভাসার। আগামী দু’বছরে উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, পঞ্জাব, মণিপুর, গোয়া-সহ আরও বেশ কিছু রাজ্যের নির্বাচনের দায়িত্বও পড়ার কথা ছিল তাঁরই হাতে। তার আগেই নাটকীয়ভাবে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কে তাঁর নিযুক্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে রাজনৈতিক মহলে। বাংলায় গুরুত্বপূর্ণ ভোটের আগে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে কমিশনার পদে নিজের লোক বসানোর অভিযোগ করছেন বিরোধীরা।
যদিও এডিবিতে যোগ দেওয়া নিয়ে লাভাসা নিজে কোনও মন্তব্য করেননি। তিনি ইতিমধ্যেই পদত্যাগ করেছেন কি না, তাও নির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি।
Comments are closed.