খাদ্যাভ্যাসের কথা যদি বলা হয়, তাহলে আমাদের প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু পছন্দের খাবার আছে। আর যারা খাদ্যরসিক তাঁদের পাতে যে খাবারই পড়ুক না কেন, চেটে পুটে প্লেট একদম সাফ। কিন্তু এমন অনেক মানুষ আছেন যাঁদের বেশ কিছু খাবারে রয়েছে অ্যালার্জি। মানে সে সব খাবার খেলে তাঁদের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অনেকেই আছেন যাঁরা হাঁপানির সমস্যায় ভুগছেন। হাঁপানি রুগীদের ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট খুবই মারাত্মক আকার নিতে পারে। সঠিক চিকিৎসা না পেলে প্রাণহানিও ঘটতে পারে। তাই যাঁদের হাঁপানি বা এই জাতীয় কোনও রোগ আছে, তাঁদের কিছু খাবার এড়িয়ে চলাই ভাল। আর নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা অবশ্যই করাবেন। অ্যালার্জি টেস্ট করালেই জানা যাবে কী কী ধরনের খাবারে আপনার শরীরে অ্যালার্জির উপসর্গ দেখা দিতে পারে। আর সে ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ মতো asthma diet মেনে চলুন।
দুধ
অনেকেই আছেন যাঁরা দুধ বা দুধ জাতীয় কোনও খাবার সহ্য করতে পারেন না। তাঁদের আমরা ল্যাকটোজ ইনটলারেন্ট বলে থাকি। সে ক্ষেত্রে এই জাতীয় কোনও খাবার না খাওয়াই ভাল।
দুধ বা ওই জাতীয় কিছু খাবার খেলে অনেক মানুষের মধ্যেই পেট ব্যাথা, ডায়রিয়া, বমির মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও আমবাত, শ্বাস প্রশ্বাসে অসুবিধা বা শরীরে অ্যালার্জি জাতীয় সমস্যা দেখা দিতে পারে। আপনার যদি এই জাতীয় কোনও রোগ থাকে, তাহলে দুধ বা এই জাতীয় কোনও খাবার এড়িয়ে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ।
ডিম
অ্যালার্জি জাতীয় খাবারের তালিকায় ওপরের দিকে থাকছে ডিম। মূলত বাচ্চাদের মধ্যেই ডিম থেকে অ্যালার্জি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এবং যে কোনও ডিম থেকেই তা হতে পারে। ডিম খাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই এর রিঅ্যাকশন শুরু হয়ে যায়। মারাত্মক ত্বকের সমস্যা, চুলকানি, আমবাত বা নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া ও শ্বাসপ্রশ্বাসে অসুবিধা হতে পারে। তাই যাঁদের ডিমে অ্যালার্জি, তাঁদের ডিম বা ডিম রয়েছে এমন খাবার এড়িয়ে চলাই ভাল।
চিনাবাদাম
চিনাবাদামের মত খাবার খেলেও অনেকের মধ্যে অ্যালার্জির উপসর্গ দেখা দেয়, যেমন নাক দিয়ে জল গড়ানো, শরীরে লাল লাল চাকা চাকা দাগ, মুখ বা তাঁর আশেপাশে বা গলায় জ্বালা অথবা চুলকানি। এছাড়াও পেট খারাপ, ডায়েরিয়া, পেট ব্যাথা, শ্বাসকষ্টের মত উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তাই যাদের চিনাবাদামে অ্যালার্জি রয়েছে বা যাদের হাঁপানির মত রোগ রয়েছে তাঁদের চিনাবাদাম বা এই জাতীয় খাবার খাওয়া একেবারেই উচিত নয়।
আমন্ড, পাইন নাট জাতীয় খাবার
আমন্ড বা পাইন নাট জাতীয় খাবার থেকেও অনেক সময় অ্যালার্জি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেক্ষেত্রে একদিকে যেমন চুলকানি, ডায়রিয়া বা বমির সম্ভাবনা থাকে, তেমনই অন্যদিকে শরীরের বিভিন্ন অংশ ফুলে যাওয়া থেকে শুরু করে আমবাত বা নাক দিয়ে জল গড়ানো বা গা গোলানোর মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই শুধুমাত্র যাদের অ্যালার্জি রয়েছে তাঁরাই নন, হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট রয়েছে এমন মানুষেরও এই সমস্ত খাবার থেকে দূরে থাকা উচিৎ।
মাছ
অনেক মাছ রয়েছে যা খেলে মানুষের শরীরে অ্যালার্জির উপসর্গ দেখা দেয়। যেমন চিংড়ি। এছাড়াও বেশ কিছু সামুদ্রিক মাছ আছে যা খেলে অধিকাংশ মানুষ এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন। আবার অনেক সময়, এই ধরনের অ্যালার্জি এতটাই মারাত্মক হয় যে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই অ্যালার্জি হতে পারে এই জাতীয় মাছ, বিশেষত সামুদ্রিক মাছ বা মাছ থেকে তৈরি কোনও খাদ্য যেমন ফিস গেলাটিন, ফিস অয়েল দিয়ে তৈরি খাবার থেকে দূরে থাকুন। আর হ্যাঁ, অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শমতো asthma diet মেনে কী মাছ খাবেন আর কী খাবেন না, তা ঠিক করুন।
মাংস
অনেক মানুষ আছেন যাদের বিশেষ কোনও ধরনের প্রাণীর মাংস যেমন মটন, বিফ, চিকেন বা পর্কে অ্যালার্জি রয়েছে। তাই সেই দিকে আমাদের সকলের খেয়াল রাখা উচিত। বিশেষত কোন মাংস আমাদের শরীরে কী ধরনের অসুবিধা সৃষ্টি করছে, সেই দিকগুলো খেয়াল রাখতে হবে। আর হ্যাঁ, অবশ্যই এই ব্যাপারে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।
অতিরিক্ত মশলাদার খাবার
অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে মানুষের বেশ কিছু মশলায় অ্যালার্জি থাকে। সে ক্ষেত্রে রান্নায় কী ধরনের মশলা ব্যবহার হচ্ছে বা বাজার থেকে আপনি যেই মশলার প্যাকেট কিনে আনলেন, তাতে সেই অ্যালার্জিক কিছু রয়েছে কিনা তা দেখে নেওয়া খুব জরুরি। আর যাঁদের হাঁপানি রয়েছে তাঁদের অতিরিক্ত মশলাদার খাবার এড়িয়ে চলাই উচিত।
অনেক মানুষের মধ্যে ধোনে গুঁড়ো বা কোরিয়েন্ডারের মত মশলায় অ্যালার্জি থাকে। তাই সেই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। ঠিক একই ভাবে অনেকেরই রসূন ও সর্ষেতেও অ্যালার্জি থাকে। যার ফলে খাওয়া দাওয়ার পর শ্বাসকষ্ট বা শরীরে চাকা চাকা লাল দাগ দেখা যায়, চুলকানিও হতে পারে। এছাড়াও মাথা ঘোরানো, পেট ব্যথা বা ডায়রিয়ার মত সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাই রান্নায় মশলা মেশানোর আগে অবশ্যই কী মেশাচ্ছেন তা ভালো করে দেখে নেবেন।
যদি উপসর্গ না কমে আরও বাড়তে থাকে, তাহলে দ্রুত ডাক্তারকে খবর দিন ও রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
Comments are closed.