টিআরপি জালিয়াতির জন্য অর্ণব ১২ হাজার ডলার ও ৪০ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়েছেন! জেরায় দাবি পার্থ দাশগুপ্তর
আরও বিপাকে অর্ণব গোস্বামী
এবার রিপাবলিক টিভির কর্ণধার এবং সাংবাদিক অর্ণব গোস্বামীর বিরুদ্ধে মুখ খুললেন BARC-এর প্রাক্তন CEO পার্থ দাশগুপ্ত। সূত্রের খবর, অর্ণব গোস্বামী তাঁকে ১২ হাজার মার্কিন ডলার এবং ধাপে ধাপে ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন বলে মুম্বই পুলিশকে জানিয়েছেন পার্থ দাশগুপ্তক। এমনই চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন খোদ BARC প্রাক্তন CEO।
এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই রিপাবলিক টিভির টিআরপি কেলেঙ্কারি নয়া মোড় নিল। মুম্বই পুলিশের দাবি, জেরায় পার্থ দাশগুপ্ত স্বীকার করে নিয়েছেন যে, তিনি গত ৩ বছরে অর্ণব গোস্বামীর থেকে এই পরিমাণ টাকা নিয়েছেন।
সূত্রের খবর, মুম্বই পুলিশের কাছে লিখিতভাবে পার্থ দাশগুপ্ত অভিযোগ করে বলেছেন, চ্যানেলের রেটিং বাড়ানোর জন্য অনৈতিকভাবে তাঁকে লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন অর্ণব গোস্বামী। টিআরপি মামলায় সোমবার এক ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে রিপাবলিক টিভির সম্পাদক অর্ণব গোস্বামীর বিরুদ্ধে ‘রিমান্ড নোট’জমা দেয় মুম্বই পুলিশ। যে অভিযোগপত্রে দাবি করা হয়েছে, পার্থ দাশগুপ্ত রিপাবলিক টিভির টিআরপি একাধিকবার হেরফের করেছেন।
ডিসেম্বরেই টিআরপি জালিয়াতি মামলার গ্রেফতার হন রেটিং সংস্থা ‘ব্রডকাস্ট অডিয়েন্স রিসার্চ কাউন্সিল’(BARC)-এর প্রাক্তন CEO পার্থ দাশগুপ্ত। টিআরপি কেলেঙ্কারির তদন্তে নেমে রিপাবলিক সহ তিনটি টিভি চ্যানেলের বিরুদ্ধে রেটিং-রিগিংয়ের অভিযোগ আনে মুম্বই পুলিশ। শুরু হয় তদন্ত। এই জালিয়াতি কাণ্ডে রিপাবলিক টিভির প্রধান সম্পাদক অর্ণব গোস্বামীরও নাম উঠে আসে।
অর্ণব গোস্বামী এবং (BARC) এর প্রাক্তন সিইও পার্থ দাশগুপ্তের হোয়াটসআপে কথোপকথনের স্ক্রিনশট ট্যুইটারে আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ তুলে ধরেন। এই কথোপকথনের স্ক্রিনশটের মারফত জানা যায়, বার্কের কিছু গোপন নথি ও কিছু চিঠিপত্র অর্ণবকে পাঠিয়েছিলেন পার্থ দাশগুপ্ত। এরপরেই রিপাবলিক টিভির কর্ণধার তথা সম্পাদকের কাছে সাহায্য চান বার্ক-এর প্রাক্তন সিইও পার্থ দাশগুপ্ত। অর্ণব গোস্বামী পার্থ দাশগুপ্তকে আশ্বাস দেন, বিজেপির একাধিক নেতা–মন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও যোগাযোগ রয়েছে। এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করবেন বলেও আশ্বাস দেন অর্ণব গোস্বামী। এছাড়াও ট্রাইয়ের নতুন নিয়ম লাগু হলে রিপাবলিক টিভি ও বিজেপির সমস্যা হতে পারে বলে অর্ণব গোস্বামীকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন পার্থ দাশগুপ্ত। অর্ণবকে তাঁর প্রভাব খাটিয়ে ট্রাইয়ের এই সংস্কার আটকাতে বলেছিলেন পার্থ দাশগুপ্ত।
মুম্বই পুলিশের কাছে পার্থ দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, তিনি ২০০৪ সাল থেকে অর্ণব গোস্বামীকে চিনতেন। তাঁরা “টাইমস নাউ”তে একসঙ্গে কাজ করতেন। ২০১৩ সালে তিনি BARC এর সিইও হিসাবে যোগ দেন। অর্ণব গোস্বামী ২০১৩ সালে রিপাবলিক টিভি চালু করেন। তার আগেই অর্ণব তাঁর সঙ্গে টিভির ভালো রেটিং-এর বিষয়ে আলোচনা করতেন। গোস্বামী খুব ভাল করেই জানতেন যে, টিআরপি সিস্টেম কীভাবে কাজ করে তা আমি জানি। তিনি ভবিষ্যতে আমাকে সাহায্য করারও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
মুম্বই পুলিশের দাবি, পার্থ দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, রিপাবলিক টিভি চালু হওয়ার পরেই তিনি অর্ণব গোস্বামীকে আশ্বাস দেন কারসাজি করে রিপাবলিক টিভিকে ১ নম্বর করে দেবেন।
পুলিশের দাবি, পার্থর পাশাপাশি BARC-এর আরেক প্রাক্তন সিইও রমিল রামঘরিয়াকেও মোটা অঙ্কের ঘুষ দিতেন অর্ণব গোস্বামী। ঘুষের টাকায় পার্থ মূল্যবান সামগ্রীও কিনতেন, যা পুলিশ তাঁর ফ্ল্যাট থেকে বাজেয়াপ্ত করেছে। মামলার আরও তদন্তের জন্য পার্থ দাশগুপ্তকে আরও কিছুদিনের জন্য জেল হেফাজতে চেয়েছে মুম্বই পুলিশ।
Comments are closed.