কবিতার মুহূর্তকে শব্দহীন করে, না ফেরার দেশে শঙ্খ ঘোষ, কবির স্মৃতিচারণায় বিশিষ্টরা
বারংবার গর্জে ওঠা কবির কলম থমকে গেল!
‘এত বেশি কথা বল কেন? চুপ করো
শব্দহীন হও’
কবিতার মুহূর্তকে শব্দহীন করে দিয়ে চলে গেলেন বাংলা সাহিত্যের বটবৃক্ষ কবি শঙ্খ ঘোষ। বারংবার গর্জে ওঠা কবির কলম থমকে গেল! শোকস্তব্ধ সাহিত্য কুল।
বুধবার সকালে কলকাতায় নিজের বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কবি। বয়স হয়েছিল তাঁর ৯০ বছর। এদিন বিকেলে নিমতলা মহাশ্মশানে কবি শঙ্খ ঘোষের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষ হয়।
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শুরুর আগে কবির ভাই নিত্যপ্রিয় ঘোষের বাড়িতে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়। তার পর সেখান থেকেই নিমতলা মহাশ্মশানে নিয়ে আসা হয় শঙ্খবাবুর মরদেহর গাড়ি।
বয়সে দু’দশকের ফারাক! অভিভাবকসম শঙ্খ ঘোষের প্রয়াণে ভেঙে পড়েছেন জয় গোস্বামী। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কন্ঠরোধ হয়ে আসছিল তাঁর। এক সাক্ষাৎকারে বললেন, বাংলা সাহিত্যজগতে মহা বটবৃক্ষের পতন ঘটল। তরুণ কবি এবং লেখকদের মাথার উপর পিতা এবং অভিভাবকস্বরূপ বিরাজ করছিলেন উনি। জাতির বিবেক হিসেবে ছিলেন। মাথার উপর থেকে সেই আশ্রয় সরে গেল। নিঃস্ব হলাম আজ।
শেষ দিন কবির মুখে অস্পষ্ট ভাষায় ‘ভাল আছি’ টুকু শুনে স্বস্তি বোধ করেছিলাম। সেই মানুষটা আজ অতীত। শঙ্খ ঘোষকে হারিয়ে আজ ভারাক্রান্ত শীর্ষেন্দু মুখার্জি। শরীর বিকল ছিল। কিন্তু যে জিনিস দু’টো তখনও সতেজ ছিল তা হল স্মৃতিশক্তি এবং মনোবল, যা এই বয়সেও ওঁনাকে অটুট রেখেছিল। সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখার্জির কথায়, অত্যন্ত ভারাক্রান্ত বোধ করছি আজ। এই কৃষ্ণগহ্বর সহ্য করতে পারছি না। বহু দিন ধরে দেখছি মানুষটিকে। যুবক বয়স থেকে চিনি। শান্ত, স্থিতধী, কখনও মেজাজ হারাতে দেখিনি। হাসির কথা শুনলেই খিলখিল করে হেসে উঠতেন। তবে নিজে বরাবরই কম কথা বলতেন। শঙ্খদাকে শুধু কবি বললে ব্যাপারটা একপেশে হয়ে যায়। শীর্ষেন্দুর মুখেও ছিল অভিভাবকের তকমা। বললেন, তিনি আসলে সাহিত্যের অভিভাবক। সত্যিকারের অভিভাবক সবাই হতে পারে না, এক বার দেখলাম, জুনিয়র এক কবির কবিতা সংশোধন করছেন। এত বড় মাপের কবির কি এটা কাজ? কী দরকার ওঁনার? কিন্তু ওই যে! দায়িত্ববোধ আর স্নেহটাই আসল।
এদিন শঙ্খ ঘোষের সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলি স্মৃতিচারণা করে কবি অমর মিত্র বললেন, তিনি মৃদুভাষী ছিলেন। তাঁর বাড়িতে সাহিত্যিকদের আড্ডা বসত। সেই আড্ডায় অংশ নিতাম আমিও। তবে আজকাল আর যাওয়া হত না তেমন। দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। অমর মিত্রের আরও সংযোজন, বরাবর বটগাছের মতো ছায়া দিয়ে এসেছেন আমাদের। একটা বটগাছ উপড়ে গেলে মাথার উপরটা যেমন খালি হয়ে যায়, ঠিক তেমনটাই অনুভূত হচ্ছে আজ।
নাট্যকার তথা রাজনীতিবিদ ব্রাত্য বসু বলেন, একটা যুগের অবসান হল। শুধু কবি নন, ওনার রবীন্দ্রশিক্ষা, চর্চা, অধ্যাপনা, স্বতন্ত্র রাজনীতি সব মিলিয়ে একটা বিরাট অধ্যায়। তাঁর পরলোকগমনের সঙ্গে একটি যুগের অবসান হল। তাঁর প্রয়াণে আমি গভীর ভাবে শোকাহত। ওঁর পরিবার-পরিজন এবং অসংখ্য সাহিত্যানুরাগীদের প্রতি রইলো সহমর্মিতা। স্যোশাল মিডিয়ার দেওয়ালে শঙ্খ ঘোষের সঙ্গে কাটানোর মুহূর্তকে শেয়ার করেছেন তিনি।
এছাড়াও কবির মৃত্যুতে শোকজ্ঞাপন করে ট্যুইট করেছেন অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য, পরমব্রত চ্যাটার্জি।
শুধু প্রস্থানের দ্বারটিই খোলা।
প্রবেশ দ্বারে শয়তান ও সংখ্যা।— Anirban Bhattacharya (@AnirbanSpeaketh) April 21, 2021
অকল্পনীয় অভাবনীয় অপূরণীয় ক্ষতি … ভালো থাকবেন কবি … #ShankhaGhosh #শঙ্খঘোষ
— parambrata (@paramspeak) April 21, 2021
রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষ বিদায় জানানো হল প্রয়াত কবি শঙ্খ ঘোষকে। তবে গান স্যালুটে আপত্তি থাকায় বাদ রাখা হল তাঁর শেষকৃত্যে। দীর্ঘ সাহিত্যজীবনে একাধিক সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন শঙ্খ ঘোষ। সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার, রবীন্দ্র পুরস্কার, সরস্বতী সম্মান, জ্ঞানপীঠ পুরস্কার পেয়েছেন। ২০১১ সালে তাঁকে পদ্মভূষণে সম্মানিত করে তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার।
Comments are closed.