গুরুং হাতছাড়া হওয়ার পর পাহাড় জিততে বিজেপির প্ল্যান বি GNLF! কী পরিকল্পনা শাহ-নাড্ডার?
বিজেপিকে টক্কর দিতে তৈরি তৃণমূল
বিমল গুরুং ও রাজেশ লাকরাকে নিজেদের দিকে টেনে পাহাড় ও তরাই-ডুয়ার্সে আলগা হয়ে যাওয়া মুঠো ফের শক্ত করেছে তৃণমূল। স্বভাবতই লোকসভা ভোটে এলাকায় দুর্দান্ত ফল করা বিজেপি এই অগ্রগতিতে চিন্তায়। এই অবস্থায় প্ল্যান বি তৈরি গেরুয়া শিবিরের। কী সেই প্ল্যান? কোন মন্ত্রে বিধানসভায় পাহাড় ও তরাই-ডুয়ার্সে পদ্মফুল ফোটানোর পরিকল্পনা করছে বিজেপি?
লোকসভা ভোটে পাহাড় এবং তরাই-ডুয়ার্স, গোটা এলাকাতেই তৃণমূলকে কার্যত সাফ করে দিয়েছিল বিজেপি। তারপর তিস্তা-তোর্ষা-মহানন্দা দিয়ে বহু জল বয়ে গেছে। পাহাড়ের পাশাপাশি ব্যাপক বদল এসেছে তরাই-ডুয়ার্সের রাজনীতিতেও।
যে ভোটের কাঁধে ভর করে লোকসভায় বাজিমাত করেছিল শাহ-নাড্ডার দল, বিধানসভায় তা কি গেরুয়া শিবিরের ঝুলিতেই আছে? এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না মিললেও বিজেপি প্ল্যান বি নিয়ে তৎপর হওয়ায় রাজনৈতিক মহল মনে করছে সেই সমীকরণে বদল এসেছে তা মেনে নিচ্ছেন খোদ বিজেপির দিল্লির নেতৃত্বও।
এবার দেখে নেওয়া যাক লোকসভার পর থেকে উত্তরবাংলার উত্তরতম অংশে কী কী গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে। পাহাড়ের ভোটের সবচেয়ে বড়ো নিয়ন্ত্রক হিসেবে যার নাম করা হয় সেই বিমল গুরুং এবার তৃণমূলের সঙ্গে। অন্যদিকে তরাই-ডুয়ার্সে আদিবাসী নেতা রাজেশ লাকরা ওরফে টাইগার তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তৃণমূলের দাবি, এর ফলে পাহাড় ও ডুয়ার্সে তাঁদের শক্তি বেড়েছে বহু গুণ।
বসে নেই বিজেপিও। বিজেপি সূত্রের খবর, মমতা সরকার যেভাবে ডুয়ার্সের আদিবাসী চা শ্রমিকদের জন্য চা সুন্দরী প্রকল্প এনে বাহবা কুড়িয়েছেন তেমনই কোনও জনমোহিনী পদক্ষেপের মধ্যে দিয়ে পাহাড়ের মন জয় করতে চান মোদী-শাহরা। আর তা করতে গিয়ে বিজেপির প্ল্যান বি’র সবচেয়ে বড়ো হাতিয়ার হতে চলেছে জিএনএলএফ। বিজেপির সঙ্গে থাকাকালীন যে বিমল গুরুঙ্গের চাপে পাহাড়ছাড়া হতে হয়েছিল জিএনএলএফ প্রধান সুবাস ঘিসিংকে। বদলে গেছে পরিস্থিতি। এখন গুরুংকে ঠেকাতে বিজেপির অন্যতম অস্ত্র হয়ে উঠেছে সেই জিএনএলএফ।
বিজেপির পরিকল্পনা
পাহাড়ের দার্জিলিং, কার্শিয়ং, কালিম্পংয়ের বাসিন্দাদের মন জয় করতে কী পদক্ষেপ করা যায় তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা জারি রয়েছে। সূত্রের খবর, পাহাড়ের ১১ টি জনজাতিকে তপসিলি জাতির স্বীকৃতি দেওয়ার কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। ভোটের ঠিক মুখে ঘোষণা হতে পারে বলে মনে করছেন পাহাড়ের বিজেপি নেতাদের একাংশ।
এছাড়া পাহাড়ের আঞ্চলিক দলগুলোকে একজোট করে পদ্মের আওতায় আনার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ইতিমধ্যেই জিএনএলএফ, সিপিআরএম, গোর্খা লিগ সহ পাহাড়ের বেশ কয়েকটি দলের সঙ্গে দিল্লিতে বৈঠক করেছেন অমিত শাহ। ঠিক হয়েছে বিজেপির সহযোগী হিসেবে বিধানসভা ভোটে লড়াই করবে তারা।
এক্ষেত্রে একটি শর্ত চাপিয়েছে জিএনএলএফ। পাহাড়ে দার্জিলিং, কার্শিয়ং, কালিম্পং, এই ৩ টি বিধানসভা আসন এবং তরাই-ডুয়ার্সে কালচিনি, মাল, কুমারগ্রাম, নাগরাকাটা ও মাদারিহাট, মোট ৮ আসনে গোর্খা প্রার্থী দিতে হবে। এই সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন সুবাস ঘিসিংয়ের উত্তরসূরিরা।
প্রসঙ্গত এই গোর্খা ইস্যুতেই বিমল গুরুঙ্গের আপত্তিতে সুরেন্দ্র সিংহ আলুওয়ালিয়ার বদলে ২০১৯ সালে রাজু বিস্তাকে প্রার্থী করতে বাধ্য হয়েছিল বিজেপি।
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, পাহাড়ের ৩ টি আসনে গোর্খা প্রার্থী দেওয়া যতটা সহজ তরাই-ডুয়ার্সে অত সহজ নয়। কারণ সেখানে বিপুল সংখ্যায় আদিবাসী, রাজবংশী, কামতাপুরি সম্প্রদায়ের মানুষ বাস করেন। তাই জিএনএলএফের শর্ত বিজেপির দিল্লির নেতৃত্ব কতটা মানবেন তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। যদিও একটি শিবির থেকে দাবি করা হচ্ছে পাহাড়ের ৩ টি আসন জিএনএলএফকে ছাড়তে আপত্তি নেই বিজেপির। কিন্তু এক্ষেত্রে শর্ত, প্রার্থীকে লড়তে হবে পদ্মফুল প্রতীকে। যাতে সংখ্যা গরিষ্ঠতা প্রমাণের সময় সমস্যা না হয়। সবমিলিয়ে বিমল গুরুং হাতছাড়া হলেও পাহাড়ের ভোট যাতে বিজেপি-ছাড়া না হয় তা নিশ্চিত করতে সব পথই খোলা রাখছেন অমিত শাহ-জেপি নাড্ডারা।
Comments are closed.