সূর্যগ্রহণে কমবে করোনা! চেন্নাইয়ের ‘বৈজ্ঞানিকের’ দাবির পর ১৫ দিনে সংক্রমিত ৩ লক্ষ মানুষ, গ্রহণের আগের তুলনায় ব্যাপক বৃদ্ধি করোনায়
গত বছর ২৬ ডিসেম্বর হওয়া সূর্যগ্রহণের সঙ্গে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছিলেন তিনি। এতেই অবশ্য থামেননি চেন্নাইয়ের বৈজ্ঞানিক কে এল সুন্দরকৃষ্ণ। নিদান দিয়েছিলেন, ২১ জুনের সূর্যগ্রহণেই করোনার খেলা সাঙ্গ হতে চলেছে। যা নিয়ে তোলপাড় পড়ে যায় দেশে। বিদেশের বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন চেন্নাইয়ের অনামী এই বৈজ্ঞানিক। তারপর কেটেছে ১৫ দিনের বেশি সময়। সংক্রমিতের সংখ্যায় বিশ্বে তৃতীয় স্থানে পৌঁছেছে ভারত।
বুজরুকি-তুকতাকের প্রাচীন আখড়া ভারতে যে কোনও দুর্যোগের সময় তা থেকে মুক্তি পেতে বিভিন্ন অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতির অনুশীলন চলে। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবেও তার অন্যথা হয়নি। কিন্তু পরিসংখ্যান কী বলছে? সত্যিই কি গ্রহণের আগের তুলনায় ২১ জুন পরবর্তী পর্যায়ে সংক্রমণ কমছে?
পড়ুন: ২১ জুন সূর্যগ্রহণের পরই বিদায় নেবে করোনা! চেন্নাইয়ের বৈজ্ঞানিকের দাবি ঘিরে চাঞ্চল্য
২১ জুন, রবিবার ছিল সূর্যগ্রহণ। তার ঠিক একদিন আগে ভারতে মোট করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা ছিল ৪,১০,৯২৩। ২০ জুন অর্থাৎ শনিবার ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ১৪,৫১৬ জনের সংক্রমণ ধরা পড়ে।
ভারতে প্রথম ১ লক্ষ মানুষ সংক্রমিত হতে সময় লেগেছিল ১০৯ দিন। সেখানে ৩ লক্ষ থেকে ৪ লক্ষে পৌঁছতে সময় লাগে মাত্র ৮ দিন। এর অর্থ হল দৈনিক গড়ে সাড়ে ১২ হাজার সংক্রমণ।
সূর্যগ্রহণের দিন অর্থাৎ রবিবার ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণ ধরা পড়ে ১৫,৪১৩। প্রথমবার সংক্রমণ ১৫ হাজারের গণ্ডি ছাড়ায়।
নিজেকে বৈজ্ঞানিক পরিচয় দিয়ে চেন্নাইয়ের কে এল সুন্দরকৃষ্ণের দাবি ছিল, গ্রহণের কিরণে ভাইরাস ভেঙে যাবে। মানব সভ্যতা মুক্তি পাবে মারণ ভাইরাসের কবল থেকে। অর্থাৎ রবিবারের পর থেকেই সংক্রমণ হ্রাস পাওয়ার কথা। কী বলছে পরিসংখ্যান?
২২ জুন, সোমবার ২৪ ঘণ্টায় ভারতে নতুন করে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে ১৪,৮২১ টি। গ্রহণের দিনের চেয়ে কম। ২৩ জুন সংক্রমণের পরিমাণ সামান্য বৃদ্ধি পায়। সেদিন ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন সংক্রমিত ছিলেন ১৪,৯৩৩। সোমবারের চেয়ে মঙ্গলবার সংক্রমণ বৃদ্ধি পায় ১১২ টি।
এখানেই স্রেফ হাওয়ায় উড়ে গিয়েছে স্বঘোষিত বৈজ্ঞানিক সুন্দরকৃষ্ণের দাবিদাওয়া। ২৩ জুনের পর থেকে ভারতে শুরু হয় সংক্রমণের অভূতপূর্ব উত্থান। যা এখনও অব্যাহত। ২১ জুনের পর থেকে ১৫ দিনের হিসেব দেখলে বোঝা যায়, সংক্রমণ কমা তো দূর অস্ত, বরং তা লাফিয়ে-লাফিয়ে বেড়ে চলেছে। গ্রহণের পর ১৫ তম দিন, অর্থাৎ ৬ জুলাই ভারতে একদিনে ২৪,২৪৮ টি নতুন সংক্রমণ ধরা পড়ে। মোট সংক্রমিতের সংখ্যা পৌঁছয় ৬,৯৭,৪১৩ য়।
এই পরিসংখ্যান থেকে একটা ব্যাপার স্পষ্ট, ভারতে সংক্রমণ ৩ লক্ষ থেকে ৪ লক্ষে পৌঁছতে সময় লেগেছিল ৮ দিন। ২১ জুন রবিবার ভারতে মোট করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা ছিল ৪,২৬,৭৩৬। সূর্যগ্রহণের ১৫ দিন পর ৬ জুলাই ভারতে মোট সংক্রমিতের সংখ্যা ৭ লক্ষ ছুঁই ছুই। ১৫ দিনের মধ্যে ভারতে সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৩ লক্ষ। অর্থাৎ দৈনিক গড়ে প্রায় ২০ হাজার সংক্রমণ। বুধবার ভারতে মোট সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ৭,৬৭,২৯৬।
সদ্য অবসর নেওয়া আইসিএমআরের মুখ্য এপিডেমিওলজিস্ট অধ্যাপক রমণ গঙ্গাখেদকর সাংবাদিক করণ থাপারকে এক ইন্টারভিউতে জানিয়েছেন, ভারতে এখনও করোনাভাইরাসের পিক আসেনি। তাঁর মতে এক একটি অঞ্চলে এক এক সময় পিক আসবে। তাই সারা ভারতে একটি পিক হবে না। তবে দৈনিক যে হারে সংক্রমণের পরিমাণ বাড়ছে তাতে তিনি মনে করছেন, পিক আসার প্রক্রিয়া শুরু হয়ত শুরু হওয়ার পথে।
দেশের অন্যতম এপিডেমিওলজিস্ট যেখানে পিক আসার অপেক্ষায় সেখানে চেন্নাইয়ের বৈজ্ঞানিক ভাইরাস শেষ হওয়ার দাবি করছেন কী করে? পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, নিজেকে ষোলো আনা বৈজ্ঞানিক বলে দাবি করা চেন্নাইয়ের সুন্দরকৃষ্ণের করোনা-দাবি ঘিরে বিভ্রান্তি বেশি, কারণ তিনি বৈজ্ঞানিক ধ্যানধারণার মধ্যে মিশিয়ে দিয়েছেন বিজ্ঞান বহির্ভূত তত্ত্ব। গ্রহণ শেষ হয়ে যাওয়ার পর থেকে অবশ্য কোনও উচ্চবাচ্যই করেননি চেন্নাইয়ের বৈজ্ঞানিক। ফলে মত বদল করেছেন কি না তাও জানা যায়নি।
Comments are closed.