গৌরি লঙ্কেশ খুনের কোডনেম ‘ইভেন্ট’, চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তি খুনে অভিযুক্ত শরদ কালাসকরের, খবর এনডিটিভি সূত্রে

মহারাষ্ট্রের নাল্লাসোপারার বেআইনি অস্ত্র কারখানা থেকে পুলিশের হাতে ধরা পড়া শরদ কালাসকরের একের পর এক চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তির জেরে নতুন মাত্রা পেয়েছে যুক্তিবাদী ও সমাজকর্মী নরেন্দ্র দাভোলকর এবং গোবিন্দ পানসারে হত্যাকাণ্ড। বৃহস্পতিবারই এনডিটিভির প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছিল, শরদ কালাসকর কীভাবে গুলি করে খুন করেছিল নরেন্দ্র দাভোলকরকে। আর এবার স্বীকারোক্তিতে উঠে এল সাংবাদিক গৌরি লঙ্কেশের খুনের প্রেক্ষাপট। কর্ণাটক পুলিশ সূত্রে খবর, গৌরি লঙ্কেশের খুনের কোডনেম দেওয়া হয়েছিল ‘ইভেন্ট’।

এনডিটিভিতে প্রকাশিত প্রতিবেদন জানাচ্ছে, স্বীকারোক্তিতে পুলিশের কাছে ধৃত শরদ কালাসকর জানিয়েছে, আরও কয়েকজনের সঙ্গে সাংবাদিক গৌরি লঙ্কেশকে খুনের পরিকল্পনা এবং অস্ত্র যোগাড়ের দায়িত্ব বর্তেছিল তার উপরও। গৌরি লঙ্কেশকে গুলি করে খুন করে পরশুরাম ওয়াঘমারে। সেই ওয়াঘমারের কাছে অস্ত্র পৌঁছে দিয়েছিল শরদ কালাসকর। ‘ইভেন্ট’ শেষে পিস্তল হাপিশ করার ভারও তারই ছিল, স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছে শরদ কালাসকর।

২০১৭ র ৫ ই সেপ্টেম্বর কাজ সেরে ঘরে ফেরার পথে, বাড়ির সদর দরজার কাছেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় সাংবাদিক গৌরি লঙ্কেশের। পরপর ৪ টি বুলেট শরীর ফুঁড়ে দিয়েছিল গৌরি লঙ্কেশের। বাড়ির সামনেই রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন তিনি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় সাংবাদিকের।

শরদ কালাসকর স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছে, ২০১৬ সালের অগাস্টে মহারাষ্ট্রের বেলগামে একটি বৈঠকে হাজির হয়েছিল সে। সেই বৈঠকেই ভারতে হিন্দুত্বের জন্য বিপজ্জনক ব্যক্তিদের নামের তালিকা তৈরি করা হয়। সেখানেই গৌরি লঙ্কেশকে নিকেশের পরিকল্পনা করা হয়, জানিয়েছে শরদ কালাসকর।

এরপর খুনের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে, গোটা ষড়যন্ত্রে মুখ্য ভূমিকা পালনকারী ভারত কুরনের বাড়িতে ফের মিলিত হয় শরদ কালাসকররা। সেই বৈঠকের প্রথম দিন সবার মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে দেয় অমোল কালে। সেখানেই গৌরি লঙ্কেশকে খুনের কোডনেম দেওয়া হয় ‘ইভেন্ট’। তারপরের দিন শরদ কালাসকর, পরশুরাম ওয়াঘমারে ওরফে বিল্ডার এবং মিঠুন নামে একজনকে নিয়ে ভারত কুরনে চলে যায় পাহাড়ের কাছে। সেই নির্জন পাহাড়ি এলাকায় চলে লাগাতার শ্যুটিং প্র্যাকটিস। স্বীকারোক্তিতে শরদ কালাসকর জানিয়েছে, প্রত্যেকে ১৫ থেকে ২০ রাউন্ড গুলি চালায়। নিশানা অনুশীলন শেষে অমোল কালে তাদের বলে, ‘আপাতত নিজের নিজের গ্রামে ফিরে যাও। ইভেন্টের দিন একেবারে মোলাকাত হবে’। অমোল কালেকেও পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

এভাবেই নিখুঁত প্ল্যানিংয়ের মধ্যে দিয়ে ২০১৭ র ৫ ই সেপ্টেম্বর পরশুরাম ওয়াঘমারের গুলিতে খুন করা হয় সাংবাদিক গৌরি লঙ্কেশকে। সফল ‘ইভেন্ট’ শেষে খুনে ব্যবহৃত অস্ত্র খুলে ফেলে শরদ কালাসকর। তারপর অস্ত্রের বিভিন্ন অংশ মুম্বই-নাসিক হাইওয়ের ধারের খাঁড়িতে ফেলে দেয় সে। মামলার তদন্তকারী সিবিআই, সেই অস্ত্রের অংশ বিশেষ উদ্ধার করতে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেবে বলে সূত্রের খবর।

গত বছরের অক্টোবরে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে মহারাষ্ট্রের নাল্লাসোপারায় একটি বেআইনি অস্ত্র কারখানায় হানা দেয় মুম্বই পুলিশ। ধরা পড়ে শরদ কালাসকর। জিজ্ঞাসাবাদ করে মুম্বই পুলিশ জানতে পারে, কেবল অস্ত্র কারখানা নয়, একটি কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের হয়েও কাজ করে শরদ। সেই সংগঠনই গৌরি লঙ্কেশ খুনে জড়িত। পরবর্তীতে শরদ কালাসকরকে কর্ণাটক পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। গৌরি লঙ্কেশ খুনে শরদ কালাসকরকে অন্যতম অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করে পুলিশ। এরপর জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। পুলিশ জানতে পারে, শুধুমাত্র সাংবাদিক গৌরি লঙ্কেশই নয়, সমাজকর্মী এবং যুক্তিবাদী নরেন্দ্র দাভোলকর এবং গোবিন্দ পানসারেকে খুনের ঘটনাতেও সরাসরি শরদ কালাসকরের যোগ পায় কর্ণাটক পুলিশ।

Comments are closed.