কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে যেতে মরিয়া বঙ্গ সিপিএম। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের দাবি, একদিকে বিজেপি অন্যদিকে তৃণমূল, এই দুই শক্তিকে রুখতে বামপন্থীদের কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে লড়া ছাড়া উপায় নেই। সিপিএম পলিটব্যুরোতে এই মতের সমর্থক যেমন আছেন, তেমনই আছে বিরোধিতাও। বঙ্গ সিপিএমের কংগ্রেস ঘনিষ্ঠতা মানতে পারেননি পার্টির প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট। একই সুরে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের বিরোধিতা করেছে কেরল সিপিএমও। তবুও ২০১৬ সালের বিধানসভায় বাংলায় জোট বেঁধে লড়েছিল কংগ্রেস ও সিপিএম। ২০১৯ সালে অবশ্য জোট হয়নি।
২০২১ বিধানসভা ভোটে জোটে যেখানে জোটে মরিয়ে সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসুরা, সেখানে কংগ্রেসের নরম হিন্দুত্বের লাইন নিয়ে তীব্র কটাক্ষ এল সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য তথা কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের কাছ থেকে। রাম মন্দিরের ভূমিপুজোর দিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিজয়ন বললেন, ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে কংগ্রেস নিজের অবস্থান পরিষ্কার করলে ভারতের নিয়তি অন্যরকম হোত।
ভোট আসছে বাংলায়। একই সময় নির্বাচন কেরল বিধানসভায়। এই পরিস্থিতিতে বাংলায় যে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করতে মরিয়া আলিমুদ্দিন স্ট্রিট, পিনারাই বিজয়নদের মূল লড়াই সেই কংগ্রেসের বিরুদ্ধেই। কেরল বরাবরই কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলানোয় আপত্তি জানিয়ে এসেছে। রাম মন্দিরের ভূমিপুজোর দিন সেই আপত্তির ভিত্তিও স্পষ্ট করে দিলেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। সাফ জানালেন, ভারতে ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতির রমরমার নেপথ্যে রয়েছে কংগ্রেসের নরম হিন্দুত্বের লাইন। সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্যের দাবি, কংগ্রেস যদি ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে নিজের অবস্থান সাফ করত তাহলে আজ ভারতের নিয়তি অন্যরকম হতে পারত।
সাংবাদিকরা রাম মন্দিরের ভূমিপুজোর প্রেক্ষিতে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর রাম-বন্দনা করে ট্যুইটের বিষয়ে বিজয়নের কাছে প্রতিক্রিয়া চেয়েছিলেন। তার উত্তর দিতে গিয়ে দক্ষিণের বর্ষীয়ান সিপিএম নেতা বলেন, কংগ্রেসের অবস্থান কী ছিল তা কারও অজানা নয়। রাজীব গান্ধী এবং নরসিংহ রাওয়ের ভূমিকা তো ইতিহাস খুঁজলেই বেরিয়ে আসবে। সেক্যুলারিজম নিয়ে কংগ্রেস নিজের অবস্থান পরিষ্কার করলে দেশের নিয়তি অন্যরকম হোত। তাই আজ যখন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বা রাহুল গান্ধী রাম বন্দনায় মেতে ওঠেন, অবাক হই না। কারণ এতে নতুনত্ব কিছু নেই।
সিপিএম বরাবরই বিজেপিকে সাম্প্রদায়িক দল হিসেবে চিহ্নিত করে এসেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের হাত ধরে বিজেপিকে ভোটের লড়াইয়ে হারাতে চাইছে বাংলা সিপিএম। তাতে শুরু থেকেই আপত্তি ছিল কারাট সহ সিপিএম নেতৃত্বের একাংশের। বিরোধিতা ছিল কেরল সিপিএমের দিক থেকেও। যদিও এতদিন কংগ্রেস নিয়ে দলের সার্বিক মূল্যায়নের প্রভাব জোটে পড়তে দেয়নি আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। কিন্তু রাম মন্দিরের ভূমিপুজোর প্রেক্ষিতে ফের সামনে চলে এল বাংলা-কেরলের বিভেদ। কেরল যেখানে ভারতের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য কংগ্রেসের নরম হিন্দুত্বের লাইনকে দায়ী করছে, সেখানে পশ্চিমবঙ্গে সেই কংগ্রেসের সঙ্গেই হাত মেলানোর পণ করে বসে আছেন সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসুরা।
এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিজেপিকে হারাতে নরম হিন্দুত্বের পোক্ত খেলোয়াড় কংগ্রেসের হাত ধরার যৌক্তিকতা নিয়ে। কংগ্রেস তো নিজেই ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতি চালিয়ে এসেছে বলে দাবি করছেন সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য তথা কেরলের মুখ্যমন্ত্রী, এখন সেই কংগ্রেসেরই সাহায্য নিয়ে আর এক রাজনৈতিক দলের মোকাবিলা কি আদৌ সম্ভব? রাম মন্দিরের ভূমিপুজোর দিন সেই প্রশ্নই তুলে ধরে ঘুরিয়ে বঙ্গ সিপিএমকে কোনও বার্তা দিলেন কি পিনারাই বিজয়ন?
Comments are closed.