সিএএ বিরোধী আন্দোলন সাংবিধানিক, এ লড়াই সংবিধান ও গণতন্ত্র রক্ষার, কেন্দ্রের নয়া আইনের বিরুদ্ধে কলম ধরলেন পিনারাই বিজয়ন

নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ সাংবিধানিক, সংবিধানের মূল কাঠামোকে রক্ষা করার জন্য লড়ছেন আন্দোলনকারীরা, এমনটাই মত কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের।
প্রথম থেকেই নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা করে আসছে কেরল সরকার। গত ৩১ ডিসেম্বর সর্বসম্মতভাবে কেরল বিধানসভায় একটি প্রস্তাবও পাশ হয়েছে। যাতে বলা হয়েছে, কোনওভাবেই সে রাজ্যে সিএএ চালু করা যাবে না। এই সম্পর্কে নিজের অবস্থান জানিয়ে এবার ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এ প্রতিবেদন লিখলেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী। ১৮ জানুয়ারি প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বিজয়ন লিখেছেন, কেন্দ্রের নয়া নাগরিক আইন দেশজুড়ে একটি আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। যার ফলে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ হচ্ছে। মানবতার প্রতি মূল্যবোধ থেকেই কেরল সরকার এই আইনের বিরোধিতা করছে।
বিজয়ন লিখেছেন,আমাদের সংবিধানের মূল ভিত্তি হল ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সমতা। কিন্তু ২০১৯ সালের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন সংবিধানের সেই মূল ভিত্তিতেই আঘাত করছে। সংবিধানের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ভারত একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে কোনও ধর্মীয় ভেদাভেদ অনুচিত। কিন্তু নয়া নাগরিকত্ব আইনে সেই ধর্মীয় বিভেদ স্পষ্ট। সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে ধর্মীয় ভিত্তিতে কেউ নাগরিকত্ব চাইলে কোনও অন্তর্ভুক্তি বা বহির্ভুক্তি মানদণ্ড নেই। কিন্তু কেন্দ্রের নয়া নাগরিক আইনে সেই ধর্মীয় ভেদাভেদ উল্লেখ করা হয়েছে।
বিজয়ন লিখেছেন, সংবিধানের ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদ দেশের প্রত্যেক নাগরিককে সমতার অধিকার দিয়েছে। সেটা তাঁর মৌলিক অধিকার। কিন্তু এই অধিকারকে অস্বীকার করছে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন। তিনি এনপিআর-কে নয়া নাগরিকত্ব আইন প্রয়োগের প্রথম পদক্ষেপ বলে দাবি করছেন। সেই সঙ্গে জানান, তাঁর রাজ্য কেরলে কোনওভাবেই নয়া নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসি হবে না। রাজ্যের কোথাও ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরির কোনও প্রশ্নই নেই। পাশাপাশি যে রাজ্যগুলি এনপিআর, এনআরসি ও সিএএ-এর বিরোধিতা করেছে তাদের স্বাগত জানিয়েছেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী। বিজয়নের দাবি, কেন্দ্রের এই নয়া আইনের ফলে বহির্দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খারাপ হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। যার প্রত্যক্ষ পড়বে দেশের অর্থনীতিতে। কারণ ভারতের জিডিপি বৈদেশিক বাণিজ্যের উপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল। তাই কেন্দ্রের নয়া নাগরিকত্ব আইন কেবল সামাজিক নয় অর্থনৈতিক উন্নতির পথেও বাধা হয়ে দাঁড়াবে বলে দাবি বিজয়নের।
তিনি আরও লিখেছেন, কেরলে কোনও ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। কেরলের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে সব সম্প্রদায়ের সমান কৃতিত্ব রয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিশেষ উন্নতি করা কেরলে ধর্মীয় ভেদাভেদ কোনও মানুষই গ্রহণ করবেন না বলে জানান তিনি।
লপ্রতিবেদনের শেষ অংশে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, আমাদের নবজাগরণ আন্দোলন ও প্রগতিশীল সংগ্রাম শিখিয়েছে কীভাবে নিজের অধিকারের জন্য দাঁড়াতে হয়। ভারতের গণতন্ত্র ও সংবিধান রক্ষার্থে প্রজাতন্ত্র দিবসে কেরল জুড়ে মানব শৃঙ্খল তৈরি হবে।

Comments are closed.