কতদিন চলতে পারে করোনা? প্রতিষেধক তৈরি হলেও কোন দেশ তা আগে হাতে পাবে? কী বলছেন গবেষকরা, কী বলছে ইতিহাস
করোনাভাইরাস অতিমারির রেশ চলতে পারে আগামী ২ বছর পর্যন্ত। আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অফ মিনেসোটার সেন্টার ফর ইনফেকশাস ডিজিস রিসার্চ অ্যান্ড পলিসির (CIDRAP) রিপোর্ট বলছে, বিশ্বের দুই তৃতীয়াংশ মানুষ যতক্ষণ না এই রোগে ইমিউন হয়ে উঠছেন, ততদিন মুক্তি নেই। সেই সময়টা হতে পারে ২ বছর।
কিন্তু কেন একথা বলা হচ্ছে?
রিপোর্ট বলছে, এই মারণ ভাইরাস এমন মানুষের মধ্যেও ছড়াচ্ছে, যাঁদের কোনও উপসর্গ পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁরা অসুস্থও হচ্ছেন না। ফলে কে ভাইরাসে সংক্রমিত তা বোঝা যাচ্ছে না। ইউনিভার্সিটি অফ মিনেসোটার রিপোর্ট বলছে, পর্যবেক্ষণে দেখা গিয়েছে, উপসর্গ প্রকাশ পাওয়ার আগেই কিছু মানুষ সংক্রমণের চূড়ান্ত জায়গায় পৌঁছে যাচ্ছেন। এবং সেই হারে আশেপাশে সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।
রিপোর্টটি তৈরি করেছেন ইউনিভার্সিটি অফ মিনেসোটার CIDRAP এর ডিরেক্টর মাইকেল অস্টারহম এবং মেডিক্যাল ডিরেক্টর ক্রিস্টেন ম্যুর।
ভাইরাসের শৃঙ্খলকে ভাঙতে বিশ্বজুড়ে মানুষকে গৃহবন্দি করা হয়েছে। কিন্তু কতদিন? এই পর্যায়ে এসে বিভিন্ন দেশের সরকার বিভিন্ন ছাড় দিচ্ছে, যাতে থমকে যাওয়া অর্থনীতির চাকা একটু হলেও ঘোরানো যায়। কিন্তু তা সত্ত্বেও করোনাভাইরাসের প্রকোপ ২০২২ সাল পর্যন্ত জারি থাকবে বলে মনে করছেন গবেষকরা।
তাঁরা বলছেন, ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিস্কারের জন্য সময় লাগে। কিন্তু যদি ধরেও নেওয়া যায় এ বছরের শেষ নাগাদ ভ্যাকসিন তৈরি হয়ে যাবে, তাহলে আসবে আরও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। তা হল, সেই ভ্যাকসিন কি সব মানুষের হাতে পৌঁছে দেওয়া যাবে? এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সব মানুষের হাতে ভ্যাকসিন পৌঁছে দিতে কত সময় লাগবে?
কবে আসবে ভ্যাকসিন, কে প্রথম হাতে পাবে
ভ্যাকসিন আবিস্কার হলেও তা সর্বজনীন করে তুলতে কত সময় লাগবে, তা নিয়ে সন্দিহান মার্কিন মুলুকের হেলথ অ্যাডভোকেটরা। কারণ তাঁরা জানেন, প্রতিষেধক আবিস্কারের পর তা বিশ্বজুড়ে বিপণনের ইতিহাস সুমধুর নয়।
আর করোনাভাইরাস অতিমারির সময় যখন প্রতিটি দেশ তাদের মানুষের প্রাণ রক্ষায় মরিয়া, তখন প্রতিষেধকের সুষম বিপণন যে ভয়ঙ্কর কঠিন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু কেন?
আজ থেকে দু’দশকেরও বেশি আগে এইচআইভির (HIV) ওষুধের আকাশছোঁয়া দামের কারণে এইডস আফ্রিকার বিভিন্ন গরিব দেশে মহামারির আকার নিয়েছিল। ওই দেশগুলোর সরকারের ওষুধ কেনার টাকা ছিল না। রসিকতার সুরে বিশেষজ্ঞরা বলেন, কোনও ভ্যাকসিন তখনই সর্বজনীন, যখন আমেরিকার সমস্ত মানুষ তা গ্রহণ করে ফেলেছেন, তার আগে নয়। এক্ষেত্রেও রসিকতার সুরে মিশে আছে অর্থের ঝলকানি।
বিশেষজ্ঞরা ভয় পাচ্ছেন, ধনী দেশগুলো নিজেদের মানুষকে সুরক্ষা দিতে এই ভ্যাকসিনকে বিশ্বব্যাপী পৌঁছে দেওয়ায় গড়িমসি করতে পারে। এই আশঙ্কার কথা মাথায় রেখেই সম্প্রতি জার্মানি চ্যান্সেলর মর্কেল এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাঁকর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে একটি আগাম চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছেন। যে চুক্তি সম্পাদিত হলে ভ্যাকসিনকে সর্বজনীন করার পথ পাওয়া যাবে।
ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির অ্যাসোসিয়েট ভাইস চ্যান্সেলর তথা ভ্যাকসিন বিশেষজ্ঞ মাইকেল কিঞ্চ বলছেন, সব জায়গায় ভ্যাকসিন পৌঁছে দিতে দরকার দুনিয়ার কোণে কোণে তার উৎপাদন কেন্দ্র। তাঁর মতে, ভাইরাস কোনও সীমান্ত মানে না। তাই ভাইরাসের প্রতিষেধকেও সীমান্ত দিয়ে আটকে রাখা যাবে না। তাকে ছড়িয়ে দিতে হবে মানুষের মধ্যে।
স্যানোফি, মডার্না আইএনসি বা জনসন অ্যান্ড জনসনের মতো একাধিক ওষুধ নির্মাতা সংস্থা করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরিতে মগ্ন। তাদেরও চিন্তায় ফেলেছে গবেষণা সফল হলে তার বিপণনের দিক। এককদম এগিয়ে ইংল্যান্ডের ওষুধ প্রস্তুতকারক গ্ল্যাক্সো বিভিন্ন দেশের সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। তাদের দাবি, একমাত্র সরকারি পরিকাঠামো ব্যবহার করেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছনো সম্ভব।
কিন্তু ভ্যাকসিন আবিস্কার হবে কবে, সেটাই এই মুহূর্তের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। শুধু বেসরকারি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানই নয়, বিশ্বের তাবড় বিশ্ববিদ্যালয়েও চলছে ভ্যাকসিনের খোঁজ।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভ্যাকসিন প্ল্যান্ট ভারতে। পুণেতে সরকারি সেরাম ইনস্টিটিউটের একার যা উৎপাদন ক্ষমতা, তা আমেরিকার সমস্ত উৎপাদন প্ল্যান্ট মিলিয়ে এক বছরের উৎপাদনের চেয়েও অনেক বেশি। এই প্রেক্ষিতে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সেরাম উৎপাদন করবে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন।
Comments are closed.