Coronavirus: বম্বে প্লেগ রুখতে তৈরি ব্রিটিশ আইন লাগু রাজ্যে, অমান্যকারীর ৬ মাস জেল, ১ হাজার টাকা জরিমানা
বিশ্বজুড়ে করোনা অতিমারির আবহে রাজ্যে জারি হয়েছে ‘দ্য এপিডেমিক ডিজিজেস অ্যাক্ট ১৮৯৭’ বা ‘মহামারি আইন’। এর আগে দেশের ১১ টি রাজ্যে জারি হয়েছে এই আইন। কিন্তু কী আছে এই শতাব্দী প্রাচীন আইনে? এই আইন প্রয়োগের তাৎপর্যই বা কী?
কোন পরিস্থিতিতে রাজ্যে মহামারি আইন?
বিশ্বজুড়ে হাহাকার ফেলেছে করোনাভাইরাস। ভাইরাসের ঢুকে পড়া রুখতে প্রত্যেকেই নিজের মতো করে ব্যবস্থা নিচ্ছে। থরো চেকিং চলছে বিমানবন্দরে। বিশেষ নজরে রাখা হচ্ছে সেই দেশগুলো থেকে আসা যাত্রীদের উপর, যেখানে করোনাভাইরাসের প্রকোপ রয়েছে। রবিবার কলকাতা বিমানবন্দরে নামার পরই তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় রাজারহাটের কোয়রান্টিনে। যদিও যাত্রীদের প্রশ্ন, তাঁদের শরীরে করোনাভাইরাসের লক্ষণ নেই। তাও কেন তাঁদের জোর করে কোয়রান্টিনে রাখা হচ্ছে? এটা কি বেআইনি নয়? রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের সামনেই রীতিমতো বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। অতিমারি ছড়িয়ে পড়তে পারে এমন পরিস্থিতিতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তাঁদের কোয়রান্টিনে রাখার কথাই বারবার বলেন কর্তারা। কিন্তু তাতে খুশি হতে পারেনি যাত্রীদল। একইরকম ঘটনা পরপর কয়েকবার ঘটার পর রাজ্যে ১২৩ বছরের পুরনো ‘মহামারি আইন’ জারি করার সিদ্ধান্ত নেয় নবান্ন।
কী আছে আইনে?
এই আইনের সেকশন ২ রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোকে বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করেছে। সেকশন ২ বলছে, কোনও ধরনের রোগের ছড়িয়ে পড়া রুখতে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলো বিশেষ ব্যবস্থা নিতে পারে এবং জনজীবনে প্রয়োজনীয় বিধি নিষেধ আরোপ করতে পারে।
এই আইনের সেকশন ২ বলছে, যদি কোনও ভয়ঙ্কর রোগ ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার মনে করে সাধারণ নিয়ম বিধি এক্ষেত্রে কার্যকরী হচ্ছে না। তাহলে কোনও ব্যক্তি বা সংস্থাকে এই বিশেষ আইনের প্রয়োগাধিকার দিতে পারে রাজ্য সরকার।
এক্ষেত্রে সেকশন ২ য়ে স্পষ্ট করা আছে, রেল কিংবা অন্য কোনও মাধ্যমে যাত্রা করা কোনও ব্যক্তিকে দেখে যদি সরকারের মনে হয়, রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে, তাহলে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি সেই ব্যক্তিকে বিভিন্ন বিধি নিষেধের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিতে পারে। তাঁকে পৃথক রেখে চিকিৎসার বন্দ্যোবস্ত করবে সরকার।
এই আইন অমান্যে সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৮৮ ধারা প্রয়োগ করে শাস্তির সংস্থান রয়েছে।
ইন্ডিয়ান পেনাল কোডের ১৮৮ নম্বর ধারা বলছে, এই ধারা লঙ্ঘনে কোনও ব্যক্তির সাধারণভাবে সর্বোচ্চ ১ মাসের জেল এবং ২০০ টাকা জরিমানা কিংবা উভয় হয়। বিশেষ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৬ মাসের কারাদণ্ড এবং ১ হাজার টাকা জরিমানা কিংবা দুই-ই একসঙ্গে হতে পারে।
এই আইনের প্রয়োগকর্তার বিরুদ্ধে কোনও আইনি পদক্ষেপ করা যাবে না বলেও রক্ষাকবচ প্রদান করা আছে শতাব্দী প্রাচীন এই আইনে।
সাম্প্রতিক অতীতে এই আইনের প্রয়োগ
১. ২০১৮ সালে গুজরাতের গ্রামে কলেরার প্রকোপ রুখতে জারি হয়েছিল এই আইন
২. ২০১৫ সালে চণ্ডীগড়ে ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়া মোকাবিলায় জারি হয়েছিল এই আইন
৩. ২০০৯ সালে সোয়াইন ফ্লু ছড়িয়ে পড়া আটকাতে পুণেতে জারি করা হয় এই আইন
কীভাবে এল এই আইন?
১৮৯০ সালের শেষদিকে তৎকালীন বম্বেতে প্লেগের প্রাদুর্ভাব হয়। রোগের ভয়ে শহর থেকে পালিয়ে যান বহু মানুষ। আর বাকিরা পড়ে থাকেন মৃত্যুমিছিল দেখতে কিংবা তাতে সামিল হতে।
তা বলে গবেষণা তো আর বন্ধ ছিল না। ১৮৯৬ সালের সেপ্টেম্বরে বম্বেতে গবেষণায় প্রথম ধরা পড়ে প্লেগের একটি বিশেষ ধারার কথা। নাম দেওয়া হয় বুবোনিক প্লেগ। কিন্তু সেই সময় রোগ এতই ছড়িয়ে পড়েছিল, যে মৃত্যুমিছিল ঠেকানো যায়নি।
বম্বেতে প্লেগ মহামারির খণ্ডচিত্র
কত লোকের মৃত্যু?
বম্বে প্লেগে মৃত্যুর সঠিক সংখ্যা জানা যায় না। তবে একটি পরিসংখ্যান পাওয়া যায়। তা হল, সেপ্টেম্বরে ধরা পড়ার পর বুবোনিক প্লেগের শিকার হয়ে সপ্তাহে গড়ে ১৯০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। আর এটা চলেছিল ১৮৯৬ সালের সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাস ধরে। এবার হিসাব করে নিন।
তারপরই এমন আইনের প্রয়োজনীয়তার কথা অনুভব করে ভারতের শাসনকর্তা ব্রিটিশ সরকার। তার পরের বছরই তৈরি হয় ‘দ্য এপিডেমিক ডিজিজেস অ্যাক্ট ১৮৯৭’।
Comments are closed.