জানেন, দুনিয়ার কোন ৩৩ টি দেশ এখনও করোনা মুক্ত? কী মিল এই দেশগুলির মধ্যে?

করোনাভাইরাস ত্রাসে কাঁপছে গোটা বিশ্ব। দেশে-দেশে, মহাদেশে-মহাদেশে করোনাভাইরাসের মারণ থাবায় মৃত্যুমিছিল। থমকে গিয়েছে অর্থনীতি। অভূতপূর্ব সঙ্কটের মুখে মানব সভ্যতা। দুনিয়াজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা পেরিয়েছে ৩০ লক্ষ।
কিন্তু জানেন কি, এই দুনিয়াতেই আছে এমন দেশও, যেখানে প্রবেশাধিকার পায়নি মারণ ভাইরাস? বালাই নেই লকডাউনের। নিষিদ্ধ নয় আলিঙ্গন।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানাচ্ছে, একটি-দুটি নয়, এই পৃথিবীর বুকেই এখনও এমন ৩৩ টি দেশ আছে, যেখানে কোভিড ১৯ এখনও প্রবেশ করেনি।
রয়টার্সের প্রতিবেদন বলছে, এ বছরের ২০ এপ্রিল পর্যন্ত রাষ্ট্রপুঞ্জের তালিকায় থাকা মোট ২৪৭ টি দেশের মধ্যে ২১৪ টি দেশেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত অন্তত একজন রোগীর সন্ধান মিলবে। তার মধ্যে ১৯০ টি দেশ স্থানীয়ভাবে সংক্রমণ ছড়ানোর সাক্ষী। অর্থাৎ, সেখানে করোনাভাইরাস স্টেজ টু পর্যন্ত পৌঁছেছে।
আর যে ২১৪ টি দেশে করোনার উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে, তার মধ্যে অন্তত ১৬৬ টি দেশে কমপক্ষে একজনের মৃত্যু হয়েছে ওই রোগে।
যদিও রয়টার্স বলছে, কোনও দেশে একটিও সংক্রমণ নথিভুক্ত হয়নি, তার মানে এটা নয় যে সেখানে কেউ আক্রান্ত হননি। উদাহরণ হিসেবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, উত্তর কোরিয়ার কথা। কিম জং উনের দেশ চিন, রাশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সীমান্ত ভাগাভাগি করে। যে দেশগুলোর প্রতিটিতেই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা অনেক। অর্থাৎ, এটা স্পষ্ট নয় যে কিমের দেশ সত্যিই করোনা মুক্ত কিনা।
এবার আসুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, বিশ্বের কোন সেই ৩৩ টি দেশ, যা মারণ ভাইরাসের থাবা এড়াতে সক্ষম হয়েছে?

 

ইউরোপ
১. আলান্দ আইল্যান্ডস
২. ভালবার্ড অ্যান্ড জেন মায়ে আইল্যান্ডস

 

লাতিন আমেরিকা
৩. ব্যুভে আইল্যান্ডস
৪. সাউথ জর্জিয়া অ্যান্ড সাউথ স্যান্ডউইচ আইল্যান্ডস

 

এশিয়া
৫. উত্তর কোরিয়া
৬. তাজিকিস্তান
৭. তুর্কমেনিস্তান

 

আফ্রিকা
৮. ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান ওশান টেরিটোরি
৯. কোমোরোস
১০. ফ্রেঞ্চ সাউদার্ন টেরিটোরিস
১১. লেসোথো
১২. সেন্ট হেলেনা

 

ওশিয়ানিয়া
১৩. আমেরিকান সামোয়া
১৪. ক্রিসমাস আইল্যান্ড
১৫. কোকোস আইল্যান্ডস
১৬. কুক আইল্যান্ডস
১৭. হার্ড আইল্যান্ড অ্যান্ড ম্যাকডোনাল্ড আইল্যান্ড
১৮. কিরিবাতি
১৯. মার্শাল আইল্যান্ডস
২০. মাইক্রোনেশিয়া
২১. নাউরু
২২. নিউই
২৩. নরফোক আইল্যান্ড
২৪. পালাউ
২৫. পিটকাইন
২৬. সামোয়া
২৭. সলোমন আইল্যান্ডস
২৮. টোকেলাউ
২৯. টোঙ্গা
৩০. টুভালু
৩১. ইউনাইটেড স্টেটস মাইনর আউটলেয়িং আইল্যান্ডস
৩২. ভানুয়াতু
৩৩. ওয়ালিজ অ্যান্ড ফুটুনা আইল্যান্ডস

রয়টার্সের প্রতিবেদন জানাচ্ছে, উত্তর আমেরিকা ও মিডল ইস্টের প্রতিটি দেশে একজন হলেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
এই জায়গাগুলো বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, যে দেশগুলোতে করোনার প্রকোপ শূন্য, সেগুলো অবশ্যই আয়তনে ছোট এবং সেখানে পৌঁছনো কঠিন। যেমন প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দ্বীপগুলো। নাউরু, তুভালু, পিটকাইন, টোকেলাই প্রভৃতি বিশ্বের সবচেয়ে কম জনবসতিওয়ালা জায়গা।
ওশিয়ানিয়ার ২৯ টি দেশের মধ্যে মাত্র ৮ টি দেশে করোনা আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে।
বিশ্বের ম্যাপে অঞ্চল ধরে ধরে দেখলে বোঝা যায়, কীভাবে ভাইরাস এক দেশ থেকে অন্যদেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
সর্বপ্রথম মারণ ভাইরাসের থাবা এসে পড়ে এশিয়ায়। সেখান থেকে স্পষ্ট দুটো ধারা বেরিয়ে প্রথমটি ইউরোপে প্রবেশ করে। ফেব্রুয়ারির শেষ দিক থেকে মার্চের শুরুর মধ্যে ইউরোপে এই ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সন্ধান পাওয়া যেতে থাকে। এদিকে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে লাতিন আমেরিকা এবং আফ্রিকা থেকে ভাইরাস আক্রান্তের সন্ধান মেলেনি। তারা ততদিন করোনা মুক্ত ছিল। কিন্তু তারপর ওই দুই অঞ্চলেও প্রবেশ করে করোনাভাইরাস।
এছাড়াও আনগুইল্লা, গ্রিনল্যান্ড, সেন্ট বার্থেলেমি এবং সেন্ট লুসিয়ায় করোনা আক্রান্তরা পুরোপুরি সেরে উঠেছেন। নতুন করে সংক্রমণের খবরও নেই। এদিকে যে গতিতে করোনাভাইরাস গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ছে, তার দিকে খেয়াল রেখে ওই ৩৩ টি দেশ বা অঞ্চল কিছু কিছু ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। বন্ধ করা হয়েছে সীমান্ত। এখন দেখার করোনা-বধ অবধি এই দেশ বা অঞ্চলগুলো করোনা মুক্ত থাকতে পারে কিনা।

Comments are closed.