গত সোমবার পর্যন্ত দেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যু হওয়া ১২৫ জনের গড় বয়স ৬০ বছর, বিভিন্ন রাজ্য থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এমনই দাবি করেছে ইংরেজি দৈনিক দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া। বুধবার দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ইতালি সহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে করোনায় মৃতের গড় বয়স যেখানে ৮০ বছর, সেখানে ভারতে মৃতদের গড় বয়স ৬০।
ইউরোপ, আমেরিকার চেয়ে ভারতে কমবয়সীদের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণেই এই ফলাফল বলে মনে করা হচ্ছে। সোমবার পর্যন্ত দেশে ৪ হাজার ৯৫ করোনা আক্রান্ত ও ১০৯ জনের মৃত্যুর সরকারি তথ্য বিশ্লেষণ করে করোনায় মৃত্যুহারের গড় বয়স সমীক্ষা করা হয়েছে।
কোন বয়সে কত মৃত্যু?
কেস রিপোর্ট ফর্ম বা CRF বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন বয়সী করোনা আক্রান্তের মৃত্য হার দেখানো হয়েছে প্রতিবেদনে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, দেশে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে গড় মৃত্যুহার ২.৭ শতাংশ।
৪০ বছর বয়সী করোনা আক্রান্তদের গড় মৃত্যুর আশঙ্কা ০.৪ শতাংশ, ৫০ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের গড় মৃত্যুর আশঙ্কা ২.৪ শতাংশ এবং ষাটোর্ধ্ব করোনা আক্রান্তদের গড় মৃত্যুর শঙ্কা ৮.৯ শতাংশ। এটাই এই মুহূর্তে দেশে করোনা আক্রান্তের গড় মৃত্যুর ট্রেন্ড বলে দাবি করেছে দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া।
সমীক্ষা বলছে, কেন্দ্র থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে, ৬ এপ্রিল পর্যন্ত ৪০ বছর বয়সের নীচে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৯১১ জন, যার মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের।
৪০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৩৮৩ জন, মারা গিয়েছেন ৩৩ জন।
৬০ এর উপর করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৭৭৩ জন, এঁদের মধ্যে ৬৯ জনকে বাঁচানো যায়নি।
মহিলা ও পুরুষ আক্রান্তের সংখ্যা ও গড় মৃত্যুহার
৬ এপ্রিল পর্যন্ত দেশে ৩ হাজার ৯১ জন পুরুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, যার মধ্যে ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। মহিলা আক্রান্তের সংখ্যা ৯৭৬ এবং মৃত্যু হয়েছে ২৯ জনের। ভারতে করোনায় আক্রান্ত পুরুষের গড় মৃত্যুর হার ২.৬ শতাংশ এবং মহিলাদের হার ৩ শতাংশ।
করোনায় মৃতদের মধ্যে সাধারণ অসুখ
দেশে করোনায় মৃতদের তথ্য অনুসন্ধান করে দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়ার রিপোর্ট বলছে, তাঁদের মধ্যে যে শারীরিক সমস্যা বা অসুখ কমন, তা হল ডায়াবেটিস এবং হাইপারটেনশন। ভারতে করোনায় মৃতদের মধ্যে যেমন এই দুটি রোগ সাধারণ, তেমনই চিনে মৃতদের মধ্যে অধিকাংশের হৃদরোগ ও ফুসফুসের সমস্যা লক্ষ্য করা গিয়েছে।
ভারতে করোনায় মৃতদের মধ্যে ৫৬ শতাংশের ডায়াবেটিসের সমস্যা ছিল এবং ৪৭ শতাংশ হাইপারটেনশনে ভুগতেন। প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজনের ছিল শ্বাসকষ্টের সমস্যা। মৃতদের ১৬ শতাংশের মধ্যে হৃদযন্ত্রের সমস্যার সঙ্গে ডায়াবেটিস অথবা হাইপারটেনশন ছিল।
যদিও ওই মৃতদের মধ্যে ডায়াবেটিস ও হাইপারটেনশনের সমস্যা কতটা বেশি ছিল, তাদের হৃদরোগই বা কতটা সিরিয়াস ছিল তার সুনির্দিষ্ট তথ্য মেলেনি এই রিপোর্টে। তবে চিকিৎসকদের মতে ডায়াবেটিস ও হাইপারটেনশন এই দুই সমস্যাই যদি কোনও করোনা আক্রান্তের থেকে থাকে, তা বিশেষ উদ্বেগজনক এবং এই সমস্যা বয়স্কদের মধ্যেই বেশি। ভারতে ৫৫ বছর পেরনো মানুষের ৬০ শতাংশ হাইপারটেনশন এবং ৩০ শতাংশের মধ্যে মধুমেহ রোগ বা ডায়াবেটিসের লক্ষণ দেখা যায়।
Comments are closed.