শ্রমিক-কৃষক প্রতিনিধিহীন হল সিপিএম রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী! জোট বিরোধী দুই নেতা বাদ, কৃষক ফ্রন্টের নেতা নেই কেন, উঠল প্রশ্ন
এক কথায় বললে, শ্রমিক এবং কৃষক প্রতিনিধি মুক্ত হল জ্যোতি বসু, হরেকৃষ্ণ কোঙারের পার্টি।
আর তার সঙ্গে আরও একটা বিষয় যুক্ত করলে দাঁড়ায়, কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বা আসন সমঝোতার বিরোধী দুই কট্টর নেতা দীপক দাশগুপ্ত এবং নৃপেন চৌধুরীকে দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী থেকে ছেঁটে ফেলল আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। হ্যাঁ, এই হল লোকসভা ভোটে চূড়ান্ত বিপর্যয়ের পর সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে রদবদলের নির্যাস। কেন কৃষক ফ্রন্টের কোনও প্রতিনিধি সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে নেই, তা নিয়ে সূর্যকান্ত মিশ্রকে প্রশ্ন করলেন দুই রাজ্য কমিটি সদস্য।
বৃহস্পতিবার সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী থেকে চারজন নেতা বাদ গিয়েছেন। দীর্ঘদিনের অসুস্থতার জন্য গৌতম দেবের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী থেকে সরে যাওয়া এক প্রকার নিশ্চিতই ছিল। পাশাপাশি, গত কয়েক মাস ধরে মানব মুখার্জির শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। এক বিরল রোগে ভুগছেন মানব মুখার্জি। রাতে ঘুমের সময় মানববাবুর শরীরে অক্সিজেন প্রবেশের পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। যা থেকে আরও কিছু জটিল রোগে তিনি আক্রান্ত, অনেক কথাই মনে রাখতে পারছেন না। তাই গত বছরই সম্পাদকমণ্ডলীতে জায়গা পাওয়া মানব মুখার্জিকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে এই কমিটি থেকে।
কিন্তু দীর্ঘদিনের শ্রমিক নেতা দীপক দাশগুপ্ত এবং কৃষক নেতা নৃপেন চৌধুরীকে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী থেকে সরিয়ে কী বার্তা দিলেন সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসুরা, তা নিয়েই এখন চর্চা সিপিএমের অন্দরে।
২০১৬ বিধানসভা ভোটের আগে থেকে সিপিএমের অন্দরে যে বিষয়টি নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা, বিতর্ক হয়েছে তা হল, কংগ্রেসের সঙ্গে দলের সম্পর্ক কী হবে। কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার তত্ত্ব প্রথম এনেছিলেন গৌতম দেব এবং তাতে সিলমোহর দেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। প্রথমদিকে রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের ব্যাপারে গররাজি থাকলেও, পরে তিনি আসন সমঝোতার পক্ষ নেন। এবং আস্তে আস্তে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতার জন্য দৃঢ়তার সঙ্গে দলের অন্দরে সওয়াল শুরু করেন। সেই সময় থেকেই আজ পর্যন্ত রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে যে দু’জন নেতা লাগাতার কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের বিরোধিতা করেছেন, তাঁরা হলেন দীপক দাশগুপ্ত এবং নৃপেন চৌধুরী। ২০১৮ সালে সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতাপন্থী মানব মুখার্জি, আভাস রায়চৌধুরী, সুমিত দে, অনাদি সাহুরা রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে জায়গা পেয়েছিলেন। সিপিএম রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটপন্থী নেতার সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে শুরু করলে স্বাভাবিকভাবেই আরও একা হয়ে পড়ছিলেন দীপক দাশগুপ্ত, নৃপেন চৌধুরী। শেষ পর্যন্ত দুই সম্মেলনের মাঝে শ্রমিক এবং কৃষক ফ্রন্টের সঙ্গে যুক্ত এই দুই নেতাকে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট ছেঁটেই ফেলল রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী থেকে। বদলে জায়গা পেলেন কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতাপন্থী শমীক লাহিড়ি এবং পলাশ দাস। যদিও সম্পাদকমণ্ডলীতে সুযোগ পাওয়া কল্লোল মজুমদার কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্কের প্রশ্নে সূর্যকান্ত মিশ্রর মতের বিরোধী।
রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী থেকে বাদ যাওয়া এবং অন্তর্ভুক্ত নেতাদের নাম বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজ্য কমিটির মিটিংয়ে ঘোষণা করেন দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। এরপরই দলের এই গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে কেন কৃষক ফ্রন্টের কেউ নেই তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন রাজ্য কমিটির দুই সদস্য। হাওড়া জেলার সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার কৃষক নেতা তুষার ঘোষ প্রশ্ন তোলেন, কৃষক ফ্রন্টের কোনও প্রতিনিধি সিপিএম রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে নেই, এটা ঠিক হচ্ছে না। দু’জনেই বলেন, কৃষক সভার নেতা অমল হালদারকে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে নেওয়া হোক। পাশাপাশি, সুদর্শন রায় চৌধুরী বলেন, কম বয়স যদি মাপকাঠি হয়, তবে হুগলি জেলার সম্পাদককে সম্পাদকমণ্ডলীতে নেওয়া হোক। তবে কোনও প্রস্তাবই গ্রহণ করেননি সূর্যকান্ত মিশ্র।
Comments are closed.