বিজেপির জয় শ্রীরাম ধ্বনির সমালোচনার পরই ‘দুর্নীতি’র ভুয়ো খবর ছড়িয়ে ফের অমর্ত্য সেনের চরিত্রহনন সোশ্যাল মিডিয়ায়
বিজেপির ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনির সমালোচনার পর ফের সোশ্যাল মিডিয়ায় আক্রমণের মুখে নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন।
নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য থাকার সময় অমর্ত্য সেন প্রচুর টাকার দুর্নীতিতে যুক্ত ছিলেন এবং স্বজনপোষণ করেছেন বলে ফের সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর চরিত্রহননে নেমেছে একটা অংশ।
এবছর এপ্রিল মাসে অমর্ত্য সেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে একাধিক ট্যুইট করেছিলেন ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’র সাংবাদিক ভারতী জৈন। তাঁর অভিযোগ ছিল, অমর্ত্য সেন মাসে ৫ লক্ষ টাকা বেতন ছাড়াও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পেতেন নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ২০১৪ সালে মোদী সরকার ক্ষমতায় এসে অমর্ত্য সেনের দুর্নীতি ধরে ফেলায়, নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তারপর থেকেই নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অকারণে নরেন্দ্র মোদীর সমালোচনায় নেমেছেন। এ নিয়ে বিতর্ক হলে দুঃখপ্রকাশ এবং ক্ষমাপ্রার্থনা করে এই ট্যুইটগুলি ভুল ছিল বলে স্বীকার করেন ভারতী জৈন।
তখনকার মতো বিতর্ক থামলেও গত শুক্রবার অমর্ত্য সেন কলকাতায় ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগানের সমালোচনা করার পর ফের প্রকাশ্যে এল সেই নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গ।
মোদী সরকারের তীব্র সমালোচক অমর্ত্য সেন গত সপ্তাহে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে বিজেপির ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনির সমালোচনা করেছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর সমালোচনায় নামেন রাজ্য বিজেপি নেতারা এবং অমর্ত্য সেনকে বেনজিরভাবে কটাক্ষ করেন মেঘালয়ের রাজ্যপাল তথাগত রায়ও। আর সেই সঙ্গে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য থাকাকালীন অমর্ত্য সেন বিপুল অঙ্কের দুর্নীতি এবং স্বজনপোষণ করেছেন বলে একগুচ্ছ ভুয়ো তথ্য ফের সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো শুরু হল।
১১ জুলাই নিউজ পোর্টাল boomlive.in এ প্রকাশিত ‘Amartya Sen And Fake News: A Love Story’ শীর্ষক প্রতিবেদনে অমর্ত্য সেনের বিরুদ্ধে এই আর্থিক দুর্নীতি সহ অন্যান্য অভিযোগের খবরকে সম্পূর্ণ ভুয়ো বলে দাবি করা হয়েছে। অমর্ত্য সেনের বিরুদ্ধে ওঠা প্রত্যেকটি অভিযোগকে বিশ্লেষণ করেছে boomlive.in।
অভিযোগ ১, নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য থাকাকালীন অমর্ত্য সেন ৫ লক্ষ টাকা বেতন নিতেন, সরকারি টাকায় বিদেশ ভ্রমণ করতেন।
সত্যি ঘটনা হচ্ছে, ৫ লক্ষ তো দূর, আচার্য থাকাকালীন কোনও বেতন নেননি অমর্ত্য সেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে boomlive.in কে জানানো হয়, নোবেল জয়ের পর অমর্ত্য সেনকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ি ফ্রি এয়ার ইন্ডিয়া পাস দিয়েছিলেন। যার সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্ক নেই।
অভিযোগ ২, নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ হাজার ৭২৯ কোটি টাকার দুর্নীতিতে যুক্ত অমর্ত্য সেন।
সত্যি ঘটনা হচ্ছে, ২০১৫ সালে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী ভি কে সিংহ জানান, নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে ২ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা অনুমোদন দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু পরে মাত্র ৪৭ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা দেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়কে। সুতরাং ২ হাজার ৭২৯ কোটি টাকার যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে তা ভিত্তিহীন ও হাস্যকর।
অভিযোগ ৩, স্বজনপোষণ। ডঃ গোপা সাভরওয়াল, ডঃ অঞ্জনা শর্মা, নয়নজ্যোৎ লাহিড়ি ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের কন্যা উপিন্দর সিংহকে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে সুযোগ করে দেওয়া।
boomlive.in এর দাবি, ডঃ গোপা সাভরওয়াল ও ডঃ অঞ্জনা শর্মা যথাক্রমে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলার ও ফাউন্ডিং ডিন থাকলেও, নয়নজ্যোৎ লাহিড়ি বা উপিন্দর সিংহের নামের কোনও উল্লেখ নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে। পাশাপাশি, মনমোহন সিংহের অন্য দুই মেয়ে দমণ সিংহ ও অমৃতা সিংহেরও সঙ্গে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অভিযোগ ৪, ২০১৪ সালে মোদী সরকার ক্ষমতায় এসে অমর্ত্য সেনের দুর্নীতি ধরে ফেলে এবং তাঁকে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
সত্যি ঘটনা হচ্ছে, নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩ বছরের জন্য আচার্য নিয়োগ করা হয়। ২০১৫ সালের ১৩ ই অগাস্ট রাজ্যসভায় এক প্রতিক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী ভি কে সিংহ নিজেই জানিয়েছিলেন, ২০১২ সালে নালন্দা বিশ্ববিদ্যায়ের আচার্য হওয়ার পর দ্বিতীয়বারের জন্য সেই পদ নিতে নারাজ ছিলেন অমর্ত্য সেন। তাই দুর্নীতির অভিযোগে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের পদ থেকে অমর্ত্য সেনকে সরিয়ে দেওয়া হয়, এই খবরেরও কোনও ভিত্তি নেই।
Comments are closed.