নির্বাচন কমিশনার অশোক লাভাসার ছেলের বিরুদ্ধে ইডি তদন্ত, স্ত্রী-বোনকে আয়কর নোটিসের পর এবার ছেলের বিরুদ্ধে ফেমা আইনে মামলা

লোকসভা ভোটের সময় নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে বারবার নির্বাচনী বিধি ভঙ্গের অভিযোগ করেছিল বিরোধীরা। কিন্তু একের পর এক মামলায় ক্লিনচিট পেয়েছেন মোদী, শাহেরা। সেই সময় জানা গিয়েছিল, অভিযোগের নিষ্পত্তি করতে বসে প্রতিবারই বাকি দুই নির্বাচন কমিশনারের থেকে ভিন্ন মত পোষণ করেছিলেন নির্বাচন কমিশনার অশোক লাভাসা। আর নির্বাচন মিটে যেতেই লাভাসার স্ত্রীকে নোটিস ধরিয়েছিল আয়কর দফতর। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছিলেন, কমিশনার হিসেবে লাভাসার অবস্থানের কারণেই কি তাঁর পরিবারের পিছনে কেন্দ্রীয় এজেন্সির এই উঠেপড়ে লাগা? পরবর্তীকালে আয় নিয়ে প্রশ্ন তুলে লাভাসার বোন এবং পুত্রকেও আয়কর নোটিস দেওয়া হয়েছে। এবার লাভাসা-তনয় আবির ও তাঁর সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে দিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।
ইংরেজি দৈনিক দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সূত্রের খবর, আবির লাভাসার বিরুদ্ধে ফেমা আইনে তদন্ত শুরু করেছে ইডি। এবছর মার্চে মরিশাসের সামা ক্যাপিটাল থেকে ৭.২৫ কোটি টাকা লগ্নি হয় আবির লাভাসার সংস্থা নৌরিশ অর্গানিক ফুডস প্রাইভেট লিমিটেডে। ইডির তদন্ত মূলত এই লেনদেন নিয়েই বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।
২০১৭ সালে আবির এই সংস্থার ডিরেক্টর পদে যোগ দেন। গত সপ্তাহে এই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবিরকে তলব করে ইডি। ব্যবসায় ক্ষতির মুখে পড়া একটি সংস্থায় কেন বিদেশ থেকে আচমকা এত পরিমাণ লগ্নি হবে, তা নিয়ে তদন্ত চলছে। এই সূত্রেই আবির লাভাসাকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এক ইডি আধিকারিককে উদ্ধৃত করে এমনই দাবি করা হয়েছে সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে। ইডিতে হাজিরা দেওয়ার কথা নিজেও স্বীকার করে নিয়েছেন আবির।
গত সপ্তাহেই জানা যায়, অশোক লাভাসা শক্তি মন্ত্রকে থাকাকালীন তাঁর কাজ খতিয়ে দেখার জন্য কেন্দ্রের তরফে ভিজিল্যান্স অফিসারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেক্ষেত্রে যুক্তি দেওয়া হয়েছিল, লাভাসার স্ত্রী নভেল সিঙ্ঘল যেহেতু ব্যাঙ্কের চাকরি থেকে স্বেচ্ছাবসর নিয়ে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে কাজে যোগ দিয়েছিলেন, তাই স্ত্রীকে কোনও বাড়তি সুবিধা অশোক লাভাসা যুগিয়েছেন কি না, তা খতিয়ে দেখতেই ভিজিল্যান্সের নজরদারি।

এখানেই শেষ নয়, অশোক লাভাসার স্ত্রী নভেল সিঙ্ঘলকে আয়কর দফতরের জেরার মুখে পড়তে হয়। অশোক লাভাসার বোন, পেশায় ডাক্তার শকুন্তলা লাভাসাকে তাঁর আয় নিয়ে প্রশ্ন তুলে আয়কর দফতর থেকে নোটিস করা হয়। একইভাবে অগাস্ট মাসে আয়কর নোটিস পান অশোক লাভাসার ছেলে আবির। আর গত সপ্তাহে সেই আবির লাভাসা এবং তাঁর সংস্থার বিরুদ্ধে ফেমা আইনে তদন্ত শুরু করে দিল ইডি।

২০১৯ লোকসভা ভোটের সময় অন্তত ৫ টি ক্ষেত্রে বাকি নির্বাচন কমিশনারদের থেকে ভিন্নমত পোষণ করেছিলেন অশোক লাভাসা। সবকটি মামলাই ছিল নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহের বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ সংক্রান্ত। প্রতিটি ক্ষেত্রেই ক্লিনচিট পান মোদী-শাহরা। কিন্তু বারবার নিজের আপত্তি নথিভুক্ত করিয়েছিলেন অশোক লাভাসা।

Comments are closed.