করোনা সংক্রমিত পুরুষের মৃত্যুহার মহিলাদের তুলনায় বেশি। এর নেপথ্যে হরমোন, লাইফস্টাইল, ইমিউনিটিকেই দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু পুরুষদের মহিলাদের তুলনায় বেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কারণ কী?
এবার এজন্য একটি বিশেষ এনজাইম বা উৎসেচককে চিহ্নিত করে ফেললেন ইউরোপীয় গবেষকরা। যা নোভেল করোনাভাইরাস সংক্রান্ত গবেষণার ক্ষেত্রে খুলে দিতে পারে এক নব দিগন্ত, মনে করা হচ্ছে।
ইউরোপের গবেষকরা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসে রক্তের কোষগুলিকে সংক্রমিত করার পিছনে রয়েছে একটি এনজাইম। যা মহিলাদের তুলনায় পুরুষের শরীরে রয়েছে অনেকটাই বেশি মাত্রায়। এ জন্যই পুরুষদের করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি, দাবি ইউরোপীয় গবেষণায়।
সোমবার ইউরোপিয়ান হার্ট জার্নালে প্রকাশিত এই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, মানুষের হৃদযন্ত্র, কিডনি, ফুসফুস-সহ বিভিন্ন প্রত্যঙ্গে এনজিওটেস্টিন (Angiotensin) কনভার্টিং এনজাইম-২ (ACE-2) থাকে। এই এনজাইমটি করোনা ভাইরাসকে ফুসফুস-সহ মানব শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে আক্রমণের ক্ষেত্রে সাহায্য করছে বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের।
সোমবার আল জাজিরা, রয়টার্স-সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদনে এই রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে।
সেখানে বলা হয়েছে, এই বিশেষ এনজাইমটি করোনা ভাইরাসকে ফুসফুস ও মানব শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে আক্রমণের ক্ষেত্রে সাহায্য করে।
কীভাবে হয় এই আক্রমণ?
বলা হয়েছে, এই এনজাইম ACE-2 কোষের বাইরের অংশে অবস্থান করে এবং রিসেপটর হিসেবে কাজ করে। যা করোনাভাইরাসকে মানবদেহের কোষে প্রবেশে সাহায্য করে। শুধু হৃৎপিণ্ড, কিডনি কিংবা ফুসফুস নয়, পুরুষের টেস্টিকলেও উচ্চমাত্রায় এসিই-২ থাকে। টেস্টিকল এর উপস্থিতির জন্য কোভিড-১৯ এ পুরুষের মৃত্যুহার মহিলাদের থেকে বেশি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
রিপোর্টে এও বলা হয়, হৃদযন্ত্র, কিডনি, ডায়াবেটিস চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত ACE ইনহিবিটরস বা এনজিওটেনিজম রিসেপ্টর ব্লকার্স (ARB) ওষুধগুলো শরীরে ACE-২ এনজাইমের মাত্রা বাড়াতে পারে না। সংশ্লিষ্ট গবেষণার নেতৃত্বে থাকা নেদারল্যান্ডসের ইউনিভার্সিটি মেডিক্যাল সেন্টার (UMC)-এর কার্ডিওলজির অধ্যাপক অ্যাড্রিয়ান ভোর্স জানান, হৃদযন্ত্র, কিডনি, ডায়াবেটিস বা এই সংক্রান্ত কোনও অসুখে ভুগছেন এমন কেউ যদি চিকিৎসার প্রয়োজনে ACE ইনহিবিটর বা অ্যানজিওটেনসিন রিসেপটর ব্লকার্স (ARB) ওষুধ সেবন করেন এবং তিনি যদি করোনায় আক্রান্ত হন, সেক্ষেত্রে এই ওষুধ সেবন বন্ধ করা যাবে না।
বিশ্বজুড়ে কোভিড ১৯ অতিমারিতে সংক্রমিত হয়েছেন ৪২ লক্ষ মানুষ, মৃত্যু হয়েছে প্রায় ২ লক্ষ ৮৩ হাজার মানুষের। প্রতি মুহূর্তেই বদলে যাচ্ছে পরিসংখ্যান। কিন্তু একটা জিনিস সকলেরই চোখে পড়ছে তা হল প্রায় সব দেশেই মহিলার চেয়ে পুরুষদের মধ্যে করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যুহার বেশি।
এর কারণ হিসেবে আগে বহু মতামত প্রকাশ করেছেন বিশ্বের তাবড় বিশেষজ্ঞরা। এবার তাতে আরও একটি তত্ত্ব যুক্ত হল। মনে করা হচ্ছে, যা বদলে দেবে নোভেল করোনাভাইরাস গবেষণার গতিপ্রকৃতিকেই।
প্রসঙ্গত, করোনা প্যানডেমিক আকার নেওয়ার বেশ আগেই এই গবেষণা শুরু হয়েছিল। কিন্তু অন্যান্য গবেষণার মোড় ঘুরে যায় যখন থেকে করোনায় বিশেষ এনজাইমের ভূমিকা পরিলক্ষিত হয়।
Comments are closed.