প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা পর ৫ দিন ধরে ফিস্কাল স্টিমুলাস বা অর্থনৈতিক প্যাকেজের ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। শনিবার চতুর্থ কিস্তির ঘোষণার সময় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী কয়লা, খনিজ পদার্থ, প্রতিরক্ষা সামগ্রী উৎপাদন, এয়ারস্পেস ম্যানেজমেন্ট, বিমানবন্দর, এমআরও (রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত), কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে বিদ্যুৎ বণ্টন, মহাকাশ এবং পরমাণু শক্তি ক্ষেত্রে সংস্কারের ঘোষণা করেছেন।
যে সমস্ত সংস্কারের ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে শুধুমাত্র বড় শিল্প সংস্থাই বিপুলভাবে লাভবান হবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। সবচেয়ে বেশি লাভবান হতে পারে এমন সংস্থাগুলোর মধ্যে টাটা পাওয়ার, জেএসডব্লু স্টিল, জিভিকে, হিন্ডালকো এবং জিএমআরের মতো সংস্থা ছাড়াও রয়েছে আদানি গোষ্ঠী, অনিল আম্বানীর রিলায়েন্স গ্রুপ, বেদান্ত এবং কল্যাণীর মতো বড় বড় শিল্প সংস্থা।
আদানি গোষ্ঠী কয়লা, খনিজ, প্রতিরক্ষা, বিদ্যুৎ বণ্টন এবং বিমানবন্দরের মতো ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে, অন্যদিকে বেদান্ত বা আদিত্য বিড়লা গ্রুপের হিন্ডালকো কয়লা এবং খনিজ পদার্থ খননের কাজে বাকিদের শক্ত প্রতিযোগিতার মুখে ফেলবে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে।
কোল মাইনিংয়ে নয়া সংস্থার অন্তর্ভুক্তি
সীতারমন জানিয়েছেন, কোল ইন্ডিয়া লিমিটেডের খাদানও প্রাইভেট সেক্টরের হাতে তুলে দেওয়া হবে। কোল ইন্ডিয়ার ৫০ টি কোল ব্লক নিলামে তোলা হবে।
পাশাপাশি, আরও ৬ টি এয়ারপোর্টের নিলাম হবে। এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার মাধ্যমে চলবে নিলাম প্রক্রিয়া। এর ফলে দেশের মোট ১২ টি বিমানবন্দরের নিলাম প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। যদিও এই পরিকল্পনা দীর্ঘমেয়াদি। ফলে করোনা সঙ্কট মোকাবিলায় এর থেকে কী সহায়তা মিলবে তা স্পষ্ট নয়।
সরকারের এই ঘোষণার পর আদানি পাওয়ার, টাটা পাওয়ার, জেএসডব্লু এনার্জি এবং রিলায়েন্স পাওয়ারের মতো সংস্থা কোল ব্লকের বরাত পেতে দর হাঁকবে। স্বভাবতই এই সেক্টরকে চাঙা করতে যে সরকারি সুবিধা, তা পাবে সংশ্লিষ্ট বৃহৎ সংস্থাগুলোই। জানা যাচ্ছে, কয়েকটি স্টিল কোম্পানিও কোকিং কোল ব্লকের নিলামে অংশ নিতে পারে।
নিলামে ৫০০ মাইনিং ব্লক
কেন্দ্র চায়, কয়লা এবং বক্সাইট খাদানের নিলামকে একসঙ্গে মিলিয়ে দিতে। যাতে অ্যালুমিনিয়াম নির্মাতারা একবারে নিলামে অংশ নিতে পারেন। সরকারের এই পদক্ষেপে সুবিধা পাবে হিন্ডালকো বা বেদান্ত অ্যালুমিনিয়ামের মতো সংস্থা। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, মোট ৫০০ টি মাইনিং ব্লককে নিলামে তোলা হবে। করা যাবে মাইনিং লিজের ট্রান্সফারও।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী শনিবারই জানিয়েছেন, ক্যাপ্টিভ ও নন ক্যাপ্টিভ মাইনের সংজ্ঞা বদলে যাচ্ছে। এর অর্থ হল বর্তমান ক্যাপিটাল ইউজার বা টাটা পাওয়ার, রিলায়েন্স পাওয়ার এবং টাটা স্টিলের মতো সংস্থার কয়লা খননের লাইসেন্স চালু রাখতে নিয়মিত দর হেঁকে যেতে হবে।
বিমানবন্দরে আদানি গোষ্ঠীর রমরমা
আগেই দেশের ৬ টি বিমানবন্দর, আহমেদাবাদ, তিরুবনন্তপূরম, লখনউ, গুয়াহাটি, ম্যাঙ্গালুরু এবং জয়পুর বিমানবন্দরের রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার ভার পেতে সবচেয়ে বেশি দর ডেকে বাকিদের থেকে বরাত ছিনিয়ে নিয়েছিল আদানি গোষ্ঠী। এবার নতুন নিলাম প্রক্রিয়াতে স্বভাবতই তারা আবার অংশ নেবে। আগেরবারের বরাত পাওয়ায়, এবারও যে আদানি বাকিদের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে দৌড় শুরু করবে, বলাই বাহুল্য।
অন্যদিকে, গত বছর অনিল আম্বানীর রিলায়েন্স ইনফ্রা রাজকোট বিমানবন্দরের পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণের ৬৪৮ কোটি টাকার কন্ট্রাক্ট পেয়েছিল। তারাও থাকবে এবারের দৌড়ে। এছাড়া জিএমআর ও জিবিকে আন্তর্জাতিকক্ষেত্রে এই কাজের জন্য স্বীকৃত সংস্থা। ফলে বরাত পাওয়ার দৌড় খুব একটা সহজ হবে না। যদিও গোটা প্রক্রিয়াটি কয়েকটি সংস্থার মধ্যেই ঘোরাফেরা করবে।
প্রতিরক্ষা সামগ্রী উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ ৪৯ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭৪ শতাংশ করে দিয়েছে মোদী সরকার। বিদেশি সংস্থার সঙ্গে জোট বেঁধে ইতিমধ্যেই আদানি গ্রুপ অস্ত্রশস্ত্র তৈরিতে বাকিদের পিছনে ফেলে দিয়েছে। অনিল আম্বানীর রিলায়েন্সও খুব পিছিয়ে নেই। পুণের কল্যাণী গ্রুপের কাছে ইতিমধ্যেই রয়েছে বিশাল বরাত।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোতে বিদ্যুৎ সংস্থাগুলোর বেসরকারিকরণ করা হবে। এর ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়বে বলে মনে করছে কেন্দ্র। উপভোক্তাদের সুবিধার জন্য প্রিপেড মিটার লাগানো হবে। এই সেক্টরে আদানি ও টাটা পাওয়ার ‘বিগ প্লেয়ার’। ২০১৭ সালে আদানি রিলায়েন্স ইনফ্রার মুম্বইয়ে বিদ্যুৎ বণ্টনের ব্যবসা কিনে নেয়। এর ফলে বাজারে ব্যাপ্তি বহুগুণ বেড়ে যায় আদানি গোষ্ঠীর। অন্যদিকে অনিল আম্বানী দিল্লিতে বিদ্যুৎ বণ্টনের ব্যবসা বিক্রি করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন।
Comments are closed.