প্রপিতামহ ফাঁসি দিয়েছিলেন ভগৎ সিংহকে! নির্ভয়া কাণ্ডে দোষীদের ফাঁসির প্রস্তুতিতে মিরাটের পবন জল্লাদ

১৬ ডিসেম্বর নির্ভয়া ধর্ষণের সাত বছর হল। ২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বরের এক শীতের রাতেই দিল্লিতে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের শিকার হন এক বছর তেইশের প্যারা-মেডিকেল ছাত্রী। ২৯ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।
নির্ভয়া গণধর্ষণ ও খুনের মামলায় চার অপরাধীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। এর মধ্যে অক্ষয় কুমার সিংহের রিভিউ পিটিশনের শুনানি রয়েছে ১৮ ডিসেম্বর। অন্যদিকে অপরাধীর রিভিউ পিটিশনের বিরোধিতা করে ধর্ষকদের ফাঁসির দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছেন নির্ভয়ার মা।
সূত্রের খবর, নির্ভয়ার ধর্ষকদের ফাঁসির জন্য বক্সার জেলে শুরু হয়েছে ফাঁসির দড়ি পাকানোর কাজ। পাশাপাশি, তিহার জেল কর্তৃপক্ষের কাছে এই মুহূর্তে কোনও ফাঁসুড়ে না থাকায় উত্তরপ্রদেশ সরকারের কাছে শীঘ্রই ফাঁসুড়ে চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে মিরাটের পবন জল্লাদ জানিয়েছিলেন, তিনি তৈরি। নির্দেশ পেলেই নির্ভয়ার ধর্ষকদের ফাঁসি দিতে দিল্লি পৌঁছে যাবেন তিনি।
জানেন কি, কে এই পবন জল্লাদ?
৫৭ বছর বয়সী পবন জল্লাদ চার পুরুষ ধরে ফাঁসুড়ের কাজ করছেন। পবনের প্রপিতামহ লক্ষ্মণ রাম ব্রিটিশ শাসনে ফাঁসুড়ের কাজ করতেন। স্বাধীনতা সংগ্রামী লালা লাজপৎ রায়ের হত্যার প্রতিশোধ নিতে এক ব্রিটিশ পুলিশ অফিসারকে গুলি করে হত্যা করেন বিপ্লবী ভগৎ সিংহ। বিচারে ফাঁসি হয় তাঁর। ভগৎ সিংহের ফাঁসির দায়িত্বে ছিলেন পবন জল্লাদের প্রপিতামহ।
পবনের দাদু কাল্লুও ছিলেন পেশায় ফাঁসুড়ে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর হত্যাকারী সৎবন্ত ও বিয়ন্ত সিংহকে ফাঁসি দেন তিনি। এছাড়া ১৯৭৮ সালে গীতা ও সঞ্জয় চোপড়া অপহরণ ও হত্যা মামলায় রঙ্গা খুস ও জসবীর সিংহ ওরফে বিল্লার ফাঁসির দায়িত্বে ছিলেন পবনের দাদু। ওই সময় তাদের পরিচিতিই ছিল কুখ্যাত রঙ্গা-বিল্লা বলে। পবন জানান, দাদুকে পাঁচটা ফাঁসির কাজে সহায়তা করেছেন তিনি।
পবনের বাবা মাম্মু উত্তরপ্রদেশ সরকারের হয়ে ৪৭ বছর ফাঁসুড়ের কাজ করেছেন। ২০১১ সালের ১৯ মে মৃত্যু হয় তাঁর। এরপর ২০১৩ সালে উত্তর প্রদেশ ডিরেক্টরেট অফ প্রিজনসের ফাঁসুড়ে হিসেবে পেশা শুরু হয় পবনের।
নির্ভয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় দোষীদের সম্পর্কে বিশেষ কিছু না জানলেও এমন ঘৃণ্য কাজের জন্য মৃত্যুদণ্ডই যোগ্য শাস্তি বলে মনে করেন পবন জল্লাদ। তাঁর কথায়, একজন ফাঁসুড়ে হিসেবে আমার কাজ সমাজের অমঙ্গলকারীদের শাস্তি দেওয়া। আর সেই কাজের জন্য আমি সদা প্রস্তুত। নির্ভয়ার চার ধর্ষকের ফাঁসি দিয়ে দাদুর রেকর্ড ভাঙতে চান তিনি।
ফাঁসি দেওয়ার আগে কীভাবে নিজেকে প্রস্তুত করেন? কোনও মানসিক চাপ অনুভব করেন? পবন জানান, এই কাজের ঘণ্টা তিনেক আগে নিজেকে প্রস্তুত করেন তিনি। তবে বাড়তি চাপ অনুভব করেননি কখনও। তিনি জানেন, এটাই তাঁর কাজ।
পবন জল্লাদের পারিশ্রমিক কত? ২০১৮ সাল পর্যন্ত মাসে মাত্র তিন হাজার টাকা বেতন মিলত। সরকারের কাছে আবেদনের পর তা এখন বেড়ে পাঁচ হাজার টাকা হয়েছে। পবনের কথায়, আমার চাকরিতে কোনও নিরাপত্তা নেই। সরকারের কাছে আবেদন করেছিলাম, প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা করে দিতে। আপনারাই বলুন, পাঁচ হাজার টাকায় আজকালকার দিনে সংসার চলে? আকাশের দিকে তাকিয়ে পবন বলেন, চার পুরুষের পেশা এখানেই শেষ হওয়া দরকার। আমি চাই না, আমার সন্তানরা এই পেশায় আসুক।

 

Comments are closed.