যে দেশে দেবী পূজিতা হন আর মহিলারা নিজের বাড়িতেই যথেচ্ছ নিপীড়নের শিকার হন, সে দেশে অনুপ্রেরণা হতে পারেন হর্ষিণী। দেশের প্রথম মহিলা ফায়ার ফাইটার হর্ষিণী কানহেকর।
জন্ম মহারাষ্ট্রের নাগপুরে। ছোট থেকেই ইচ্ছে ছিল সেনা বাহিনীতে যোগ দেওয়ার। নাসিক থেকে স্কুল পাশ করার পর লেডি অমৃতাবাঈ দাগা কলেজ থেকে বিএসসি। ছিল এনসিসি ট্রেনিংও। বাড়ির কথায় এমবিএ কোর্সে ভর্তি হলেও, তাঁর ইচ্ছে ছিল সেনার উর্দি গায়ে তোলার। হর্ষিণীর অনুপ্রেরণা দেশের প্রথম মহিলা পাইলট শিবানী কুলকার্নি। তাই এমবিএ অসমাপ্ত রেখেই ভর্তি হন নাগপুরের ন্যাশনাল ফায়ার সার্ভিস কলেজে (এনএসএফসি)। দীর্ঘ প্রশিক্ষণ শেষে ২০০৬ সালে দেশের প্রথম মহিলা দমকলকর্মী হিসেবে ইতিহাস তৈরি করলেন হর্ষিণী কানহেকর।
কতটা কঠিন ছিল তাঁর লড়াই? হর্ষিণীর কথায়, এনএসএফসির এন্ট্রান্স পরীক্ষায় পাশ করার খবর পাওয়ার দিনটা ছিল তাঁর কাছে স্বপ্নের মতো। যদিও তিনি জানতেন না, প্রথম মহিলা হিসেবে যোগ দিতে চলেছেন এনএফএসসিতে। এরপরও কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকে তাঁকে প্রায়শই একই প্রশ্নের মুখে পড়তে হোত। পুরুষের পেশায় একজন মহিলা কী করছেন! হর্ষিণী বলছেন, কলেজের প্রশিক্ষকরা বলতেন, পুরুষের জগতে ঢুকে পড়েছেন তিনি। তাঁর উচিত অন্য কোনও পেশায় যাওয়া। কিন্তু হর্ষিণী যে অপ্রতিহত। ঠিক করে নিয়েছিলেন আগুন নিয়েই খেলবেন। সেখান থেকেই শুরু আসল লড়াই। প্রতিদিন নিজেকে পুরুষের সমান প্রমাণ করতে হয়েছে। হর্ষিণীর কথায়, ‘ট্রেনিংয়ে যেতে একদিনও দেরি করিনি, একবারের জন্যও নিজেকে দুর্বল ভাবিনি।’ যেহেতু তিনি এনএসএফসিতে একমাত্র মহিলা, তাই ট্রেনিং শেষে বাড়ি ফিরতেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অনুমতি নিতে হয়েছিল।
দীর্ঘ প্রশিক্ষণ শেষে ২০০৬ সালে দেশের প্রথম মহিলা ফায়ার ফাইটার হিসেবে গুজরাতের মেহসানা ফায়ার স্টেশনে যোগ দেন হর্ষিণী কানহেকর। এরপর ২০১০ সালে যোগ দেন মুম্বই ড্রিলিং সার্ভিসে। হেলিকপ্টার চালাতে যেমন পারদর্শী, বাইক চালাতেও সমান তুখোড় তিনি। লে-লাদাখ, খারদুংলা পাস থেকে কারগিল পর্যন্ত বিশ্বের উচ্চতম রাস্তায় বাইক সফরের রেকর্ড গড়েছেন হর্ষিণী কানহেকর।
হর্ষিণী জানান, কোনও কাজই কোনও বিশেষ লিঙ্গের জন্য নয়। নিজের পছন্দ অনুযায়ী পেশা নির্বাচন করার অধিকার সবার আছে, তা সে বাইকার হোক বা তাঁর মতো দমকলকর্মী। দেশের প্রথম মহিলা দমকলকর্মীর কথায়, আমরা একবার বাঁচি, তাই লক্ষ্য পূরণ করার জন্য নিজেকে উজাড় করে দিতে হবে, এটাই যে কোনও কাজে সাফল্যের মূল রহস্য।
Comments are closed.