সব রেকর্ড ভেঙে একদিনে সংক্রমিত ৭,৯৬৪, মৃত্যু ২৬৫ জনের, ভারতে ক্রমেই ঘোরাল করোনা পরিস্থিতি, আরপিএফের রিপোর্টে রেলে মৃত্যু নিয়েও বাড়ছে উদ্বেগ
চতুর্থ দফায় লকডাউন শেষের পথে। কিন্তু সংক্রমণ কমার কোনও লক্ষণ নেই, উল্টে তা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলেছে। বৃহস্পতিবার দেশে সংক্রমিত হয়েছিলেন ৭ হাজারেরও বেশি মানুষ। শুক্রবার দেখল দৈনিক সংক্রমণ এবং মৃত্যুর সর্বকালীন রেকর্ড। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমিত হলেন ৭,৯৬৪ জন। একদিনে মৃত্যু হয়েছে ২৬৫ জনের। সব মিলিয়ে ভারতে করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা বেড়ে হল ১,৭৩,৭৬৩। মোট মৃত্যু হয়েছে ৮,৯৭১ জনের। তবে আশার কথা হল, একই দিনে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ১১ হাজারেরও বেশি মানুষ। এখনও পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৮২,৩৭০ জন।
এদিকে লকডাউন ওঠার ঠিক মুখে এমন সংক্রমণের হারের বিপুল বৃদ্ধি সরকারি কর্তৃপক্ষের কপালের ভাঁজ আরও চওড়া করেছে। বড়সড় প্রশ্নের মুখে পড়েছে শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনের পরিচালন। বিভিন্ন রাজ্য সরকার কেন্দ্রের পরিযায়ী শ্রমিক পরিবহণ নীতি নিয়ে সোচ্চার হয়েছে। মমতা ব্যানার্জির সুরে সুর মিলিয়ে রেল মন্ত্রকের তীব্র সমালোচনা করেছেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। প্রশ্ন উঠছে, করোনা সংক্রমণের হার যে সমস্ত রাজ্যে বেশি, সেখান থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের বিনা পরীক্ষায় অন্য রাজ্যে পাঠানোর ফলেই সংক্রমণ দেশব্যাপী আরও বিপুল হারে ছড়িয়ে পড়ছে কিনা। শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনে অমানবিকভাবে পরিযায়ী শ্রমিকদের আনা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠছে। যদিও এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন রেলমন্ত্রী। কিন্তু শনিবার ইংরেজি দৈনিক হিন্দুস্তান টাইমসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন কেন্দ্র এবং রেলমন্ত্রকের এই দাবিকে বড়সড় প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে।
বুধবার সংবাদসংস্থার তরফে একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানানো হয় শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। যদিও রেল মন্ত্রক দ্রুত তা খারিজ করে। দায় ঝেড়ে তারা বলে, মৃত্যুর কারণ ট্রেন যাত্রা না, বরং আগে থেকেই তাঁরা অসুস্থ ছিলেন। ঘটনাচক্রে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে ট্রেনে কিংবা প্ল্যাটফর্মে। কিন্তু শনিবার সকালে প্রকাশিত ইংরেজি দৈনিক হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন জানাচ্ছে, রেলওয়ের প্রোটেকশন ফোর্স বা আরপিএফের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে ৯ মে থেকে ২৭ মের মধ্যে শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনে মৃত্যু হয়েছে মোট ৮০ জনের। ১ মে থেকে ট্রেন যাত্রা শুরু হলেও ৮ তারিখ পর্যন্ত কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।
রেলের সুরক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর রিপোর্টে চরম বিড়ম্বনায় পড়েছে রেল মন্ত্রক। শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন নিয়ে যখন সমালোচনায় বিদ্ধ কেন্দ্র, ঠিক তখনই আরেকটি ঘটনায় তোলপাড়। ফের অভিযোগ কেন্দ্রের পরিকল্পনাহীনতার। তবে এবার আর ট্রেন নয় প্লেন।
জানা গিয়েছে, শনিবার সকাল ৭ টায় রাশিয়ায় আটকে পড়া ভারতীয়দের আনতে ফাঁকা এয়ারবাস A320NEO বিমান নিয়ে দিল্লি থেকে মস্কোর উদ্দেশে রওনা দেন পাইলট। তারপর জানা যায়, পাইলট করোনা সংক্রমিত। তড়িঘড়ি তাঁকে ফিরতে নির্দেশ দেওয়া হয়। মাঝপথ থেকে বিমান ঘুরিয়ে বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ আবার দিল্লি ফিরে আসেন পাইলট। বিমানের বাকি ক্রু’দের কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। কীভাবে এই গাফিলতি হল তার তদন্ত হবে বলে জানিয়েছে ডিজিসিএ।
Comments are closed.