বাজার থেকে সদ্য আনা আলু, পেঁয়াজ, দুধ, মাখন, থেকে সংক্রমণ ঠেকাবেন কীভাবে? স্যানিটাইজার না বেকিং সোডা, কী ব্যবহার করবেন?
শিথিল হয়েছে লকডাউন। আনলক ১ এ স্বাস্থ্যবিধি আর নিয়মকে সঙ্গী করে স্বাভাবিকতার পথে হাঁটছে দেশ। ভক্ত ও পুণ্যার্থীদের জন্য খুলেছে ধর্মস্থান। ৭০ শতাংশ কর্মী নিয়ে কাজ শুরু করেছে রাজ্য সরকারি দফতর। কিন্তু করোনা সংক্রমণ থেমে নেই, বরং উত্তরোত্তর তা বাড়ছে। মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস এবং স্যানিটাইজার ব্যবহার করার মতো স্বাস্থ্যবিধি তো মানছেন। কিন্তু তারপরেও বাজার থেকে যে নিত্যপ্রয়োজনীয় শাক-সবজি, ফল, দুধ ইত্যাদি খাদ্যসামগ্রী কিনছেন, সেখান থেকে সংক্রমণ রুখবেন কীভাবে?
কেউ কেউ শাক-সবজি কিনে তাতে স্যানাটাইজার স্প্রে করে দিচ্ছেন, কেউ কেউ আবার গুঁড়ো সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলছেন আলু, পেঁয়াজ, পটল, ঝিঙে । কিন্তু জানেন কি, এতে করোনা সংক্রমণ রুখতে গিয়ে ডেকে আনছেন অন্য বিপদ? তাহলে করণীয় কী?
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসকে জীবাণুমুক্ত রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের কথা জানালেন বিখ্যাত চিকিৎসক সনু গোয়েল।
সম্প্রতি দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে চণ্ডীগড়ের পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ বা PGIMER এর চিকিৎসক তথা অধ্যাপক সনু গোয়েল বেশ কিছু পরামর্শ ও প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন, যা এই মুহূর্তে সব গৃহস্থের জানা বিশেষ জরুরি।
বাজার থেকে কেনা সবজি-ফল কীভাবে জীবাণুমুক্ত করবেন?
ফল ও শাক-সবজিতে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা বেঁচে থাকতে পারে করোনাভাইরাস। তবে তাপের মধ্যে রাখলে ভাইরাসের মেয়াদ মোটামুটি ৪ ঘণ্টা বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসক গোয়েল। তাঁর পরামর্শ, বাজার থেকে শাক-সবজি এনে সঙ্গে সঙ্গে সেগুলি ব্যবহার করবেন না। বাজারের থলি সমেত ঘণ্টা চারেক সেগুলি সরিয়ে রাখুন। তারপর অল্প বেকিং সোডা সহযোগে উষ্ণ গরম জলে ধুয়ে ফেলুন।
ফল ও শাক সবজির উপর কি স্যানিটাইজার ব্যবহার করা যায়?
ডাক্তার গোয়েল বলছেন, একদমই নয়। তিনি জানাচ্ছেন, শাক-সবজি, ফলমূলে থাকা ভাইরাস স্যানিটাইজার দিয়ে নির্মূল করা যায়, এমন কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। বরং স্যানিটাইজারে থাকা কেমিক্যাল পেটে গেলে ফল হতে পারে মারাত্মক। স্যানিটাইজার কেবল হাত, পা অর্থাৎ শরীরের বহিরাঙ্গ জীবাণুমুক্ত করার জন্য। পাশাপাশি, কোনও ধাতব জিনিসে থাকা জীবাণুও নষ্ট করতে পারে স্যানিটাইজার। তাই ফল-মূল, শাক-সবজি জীবাণুমুক্ত করতে শুধু মাত্র উষ্ণ গরম জল ব্যবহার করতে হবে। সেই জলে কয়েক ফোঁটা পটাশিয়াম পার ম্যাঙ্গানেট যোগ করতে পারেন। না হলে বেকিং সোডাই যথেষ্ট, বলছেন ডাক্তার সনু গোয়েল। আর হ্যাঁ, শাক-সবজি ধোওয়ার সময় মুখে মাস্ক লাগাতে ভুলবেন না।
পেঁয়াজ তো গরম জলে ধুয়ে ব্যবহার করা যায় না, সেক্ষেত্রে কী করণীয়?
পেঁয়াজের মতো খাদ্যদ্রব্যকে বাজার থেকে এনে ৩-৪ ঘণ্টা এক জায়গায় সরিয়ে রাখতে পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসক। তারপরে স্বাভাবিক জলে সেগুলি ধুয়ে নিলেই চলবে।
দুধ, মাখন, চিজ
দুধ, মাখন, চিজ ইত্যাদির ক্ষেত্রে কী করা যাবে? সেগুলো তো ঘণ্টা চারেক বাইরে ফেলে রাখা যাবে না।
দুধ, মাখন ইত্যাদি প্ল্যাস্টিক বন্দি জিনিসকে সাবধানে হালকা সাবান জলে ধুয়ে ফেলতে পারেন। তবে খেয়াল রাখুন পরিবারের অন্য কেউ যেন সেই সময় তা ব্যবহার না করে ফেলে। তাছাড়া কোল্ড ড্রিংকের ক্যান ধাতব হলে সেই সার্ফেসে ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে ভাইরাস। সুতরাং, বাজার থেকে কিনে এনেই এইসব জিনিস রেফ্রিজারেটরে ঢুকিয়ে দেবেন না। কয়েক ঘণ্টা বাড়ির তাপমাত্রায় রেখে দিন। আর ক্যান ও প্লাস্টিকের প্যাকেট ধোওয়ার সময় মুখে মাস্ক পরে নিতে ভুলবেন না।
বাইরের প্যাকেটবন্দি খাবার কি নিরাপদ?
PGIMER এর অধ্যাপক-চিকিৎসক গোয়েল জানাচ্ছেন, তৈরি করা খাবারে অসুবিধা নেই। দেখা দরকার প্যাকেটবন্দি হচ্ছে কীভাবে। এবং ডেলিভারি প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করছে সে খাবার কতটা নিরাপদ বা ভাইরাস মুক্ত। অর্ডার করা খাবার এনে সেগুলি প্যাকেট থেকে নিয়ে গরম করে খেতে পারেন। তাতেও সন্দেহ না গেলে আপাতত বাইরের খাবার এড়ানোরই পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসক।
টাকা-পয়সা, জামা-কাপড়, স্টেশনারি দ্রব্য কীভাবে জীবাণুমুক্ত করবেন?
পেপার, বইয়ের কাগজ অথবা নোটের উপর দীর্ঘক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে না করোনাভাইরাস। তবু সেগুলি অন্তত ২-৩ ঘণ্টা বাইরে কোনও নিরাপদ স্থানে রেখে দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসক গোয়েল। এসব জিনিসে স্যানিটাইজার ব্যবহার করা যায় না। আর নতুন জামা-কাপড় কিনলে ধুয়ে শুকিয়ে নিয়ে ব্যবহার করুন।
বাইরে থেকে এসে জুতো ঘরের বাইরে নির্দিষ্ট জায়গায় রাখুন। জুতোজোড়া যদি জলে ধোয়া যায়, ধুয়ে ফেলতে পারেন। নতুন কিনলে দু’দিন স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রেখে দিন।
Comments are closed.