করোনা আতঙ্কে দেশে ২১ দিনের জন্য লকডাউন চলায় চরম অসুবিধায় পড়েছেন হাজার হাজার অভিবাসী শ্রমিক। কারও মাথার উপর ছাদ নেই, কেউ দু’বেলা খাবার জোগাড় করতেই হিমশিম খাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে তাঁদের মুখে খাবার তুলে দিতে কর্মসূচি গ্রহণ করল নির্বাচনী স্ট্র্যাটেজিস্ট প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা আই-প্যাক। রবিবার থেকে আগামী ১০ দিন তারা ভারতের ২০ থেকে ২৫ টি শহরে লকডাউনে আটকে পড়া শ্রমিকদের মুখেই খাবার তুলে দেবে। ‘সব কী রসুই’ নামে এই কর্মসূচিতে প্রতিদিন গড়ে দেড় লক্ষ খাবারের প্যাকেট বিলি করবে বলে জানিয়েছে পিকে- র সংস্থা ইন্ডিয়ান পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটি বা আই-প্যাক।
লকডাউনের কারণে কল-কারখানা, হোটেল ইত্যাদি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কাজ বন্ধ লক্ষ লক্ষ কর্মীর। এদিকে বাস, ট্রেন থেকে সমস্ত গণ পরিবহণ বন্ধ থাকায় তাঁরা অনেকে বাড়িতেও ফিরতে পারছেন না। কেউ কেউ হেঁটে ঘরে ফিরতে গিয়ে রাস্তাতেই প্রাণ হারিয়েছে। দিল্লি, মুম্বই থেকে সব বড় শহরে আটকে থাকা এই অভিবাসী শ্রমিক ও অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীদের বেশিরভাগই রাস্তায় অভুক্ত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন, গত কয়েক দিনে এমন ছবিও ধরা পড়েছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায়। এই পরিস্থিতে সরকার থেকে অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এগিয়ে এলেও অনেকেরই খোলা আকাশের নীচে না খেয়ে দিন গুজরান হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে আগামী ৫ এপ্রিল থেকে দেশের ২৫ টি শহরে এমন আটকে থাকা শ্রমিক ও কর্মীদের দুপুরের খাবার তুলে দেওয়ার উদ্যোগ নিল প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা। প্রতিদিন এতগুলি জায়গায় এত মানুষের জন্য খাবার তৈরি, প্যাকেট করা এবং বিলি করার জন্য আই-প্যাকের সঙ্গে তিনটি সংস্থা কাজ করছে। করোনাভাইরাসের জেরে খাবার তৈরি থেকে সেগুলি প্যাকেট বন্দি করে মানুষের হাতে তুলে দেওয়া, এই তিন দফায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে বাড়তি নজর দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে লকডাউনের সময় সরকারি গাইডলাইন মেনে যাতে এই কর্মসূচি সফল করা যায় তার যাবতীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানায় আই-প্যাক। ৫ এপ্রিল থেকে ১০ দিন প্রথম দফায় ১৫ লক্ষ মিল তৈরি ও বিলির জন্য এক হাজারের বেশি কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবী কাজ করছেন আই প্যাকে। এই উদ্যোগে কেউ অংশ নিতে চাইলে তাঁদেরও স্বাগত জানিয়েছে প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর লকডাউন ঘোষণার পর এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছিলেন প্রশান্ত কিশোর। ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটে বিজেপি-র নির্বাচনী ছক তৈরি করে দেওয়া প্রশান্ত কিশোর ট্যুইটারে লিখেছিলেন, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে এই লকডাউনের সিদ্ধান্ত হয়ত জরুরি, কিন্তু আগাম প্রস্তুতি ছাড়া তিন সপ্তাহ ধরে এই লোকডাউনের ফলে প্রবল সমস্যায় পড়বেন গরিব মানুষ। এরপর সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিক বার্তা ও ভিডিয়ো পোস্ট করে অভিবাসী শ্রমিকদের অবস্থা তুলে ধরে কেন্দ্রের মোদী সরকার ও বিহারের নীতীশ কুমার সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চান নীতীশ কুমারের দলের প্রাক্তন সহ সভাপতি।
Comments are closed.