মন থেকে ভয় দূর করুন, আত্মবিশ্বাস হারাবেন না। কোভিড-১৯ থেকে সেরে উঠে পরামর্শ ইন্দোরের পুরুষ নার্স রাজেশ আসওয়ারার।
করোনা জয় করে তাঁর কর্মক্ষেত্র, এম ওয়াই হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ডিউটি করতে তৈরি তিনি, জানালেন এই মুহূর্তে সবচেয়ে আতঙ্কের রোগের সঙ্গে লড়াই করে ফিরে আসা রাজেশ আসওয়ারা। জানান, শীঘ্রই কাজে ফিরছেন তিনি।
করোনায় আক্রান্ত হওয়া থেকে মৃত্যুভয় আর তাকে জয় করে সুস্থ ও শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসার কথা জানালেন সংবাদমাধ্যমকে।
রাজেশের কথায়, করোনা থেকে সেরে উঠে আমি আগের থেকে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী। অন্যরাও যাতে এই রোগ জয় করে সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন, তার জন্য সবরকম সাহায্য করতে চাই। বিশ্বের নানা প্রান্তে করোনা মোকাবিলায় কাজ করা নার্সদের উদ্দেশে ৪৮ বছরের এই পুরুষ নার্সের বার্তা, প্রথমত নিজের মন থেকে ভয় মুছে ফেলুন। দ্বিতীয়ত, করোনা আক্রান্তের দেখভালের আগে অবশ্যই পার্সোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) কিট ব্যবহার করুন। পিপিই ছাড়া কাজ করবেন না।
রাজেশের সুস্থ হয়ে ওঠা…
রাজেশ হাতে শুধু গ্লাভস আর মুখে মাস্ক পরে করোনা আক্রান্তের সেবা করেছিলেন। গত ২২ মার্চ ইন্দোর থেকে ধরা পড়া প্রথম করোনা রোগীর সেবায় যুক্ত ছিলেন তিনি। ২৫ মার্চ ওই রোগীর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তাকে খাওয়ানো থেকে সেবা, সব কাজ কেবল মাস্ক আর গ্লাভস পরেই করে গিয়েছেন বলে সংবাদমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেন তিনি। রাজেশের কথায়, আমি জানি না কীভাবে সংক্রমিত হয়ে পড়েছিলাম। শুধুমাত্র আক্রান্তকে ছোঁয়ার মাধ্যমেও তো করোনা ছড়াতে পারে। দুনিয়াজুড়ে কত মানুষ মারা যাচ্ছেন এই ভাইরাসে, কোনও প্রতিষেধকও নেই। এই আতঙ্ক গ্রাস করেছিল। আর আশঙ্কা সত্যি করে ২৬ মার্চ করোনায় আক্রান্ত হন রাজেশ। তিনি জানান, তাঁর করোনা পজিটিভ জানার পর, প্রায় ১৫ মিনিট সর্বশরীর কাঁপছিল। আর হাসপাতাল ওয়ার্ডে প্রথম দিনটা কাটানোই সবচেয়ে কঠিন, নিজের অভিজ্ঞতা জানান রাজেশ। তিনি জানান, শ্বাসকষ্ট, জমাট বাঁধা কফে প্রচণ্ড কষ্ট হত। এদিকে প্রতিদিন হাসপাতালে দু’জন করে করোনা রোগীর মৃত্যুসংবাদ কানে আসছে। সেসময় খালি মনে হতো, এবার বুঝি আমার পালা। কষ্ট, আতঙ্কে দিনে ঘণ্টা দুয়েকের বেশি ঘুমই আসতো না।
রাজেশের পরিবার থাকে রাজস্থানের দুঙ্গারপুরে। নিজের অসুস্থতার কথা বাড়িতে জানাতে চাননি। কিন্তু সবাই জেনে ফেলে। আর তারপরেই শুরু কান্নাকাটি।
আস্তে আস্তে যখন নিজের বাঁচার আশা হারিয়ে ফেলছেন রাজেশ, সে সময় চিকিৎসকদের তাগিদ, সহকর্মী নার্সদের প্রার্থনাই তাঁকে নতুন করে লড়ার সাহস জোগায়। হাল না ছেড়ে চিকিৎসকদের প্রতিটি পরামর্শ মেনে চলেন। দিনে দশবার গরম জলে শ্বাস নেওয়া, উষ্ণ গরম জল পান করা, জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল খান। তাছাড়া ইমিউনিটির জন্য ভিটামিন ও হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন নেওয়া শুরু করেন রাজেশ। আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠতে থাকেন তিনি, ফিরে আসে আত্মবিশ্বাস। ‘ঘাবড়ানা নেহি’, চিকিৎসকরা বারবার এই বলে আশ্বস্ত করতেন, বলছেন রাজেশ। ১২ বছর কাজের সুবাদে হাসপাতালের প্রতিটি লোক তাঁকে চিনতেন। তাঁরা অভয় দিয়েছেন, পাশে থেকেছেন। অবশেষে ৬ এপ্রিল সন্ধ্যে সাড়ে পাঁচটায় রাজেশই প্রথম যিনি ইন্দোর থেকে কোভিড-১৯ জয় করে একেবারে সুস্থ হন। ছাড়া পান হাসপাতাল থেকে। এখন হোম আইসোলেশনে রাত ১১ টা থেকে সকাল ৮ টা পর্যন্ত গভীর ঘুম হয়। যে বাড়িতে ভাড়া থাকেন, তার মালিক থেকে প্রতিবেশীরাও পাশে থেকেছেন বলে জানান তিনি। এখন তিনি আরও আত্মবিশ্বাসী, করোনা লড়াইয়ে সবাইকে সাহায্য করতে চান, জানান রাজেশ আসওয়ারা।
Comments are closed.