সাংবাদিক থেকে নেতা, সিউড়ির হৃত গৌরব ফেরানোর লড়াই ভূমিপুত্র জগন্নাথের
সাংবাদিক মহলে অত্যন্ত পরিচিত নাম জগন্নাথ চ্যাটার্জির জন্ম, বড় হয়ে ওঠা সিউড়ি শহরে
বিজেপির প্রার্থী তালিকায় স্থান পেয়েছেন তারকা, আইনজীবী, গায়ক থেকে ডাক্তার। প্রার্থী তালিকা ঘোষণার সময় মুখপাত্র নিজেই জানিয়েছিলেন সে কথা। বৃহস্পতিবার প্রার্থী তালিকায় অন্যতম বড় চমক সাংবাদিক জগন্নাথ চ্যাটার্জির নাম ঘোষণা।
আনন্দবাজার পত্রিকা থেকে সদ্য ইস্তফা দেওয়া জগন্নাথ চ্যাটার্জি সিউড়ি থেকে এবার বিজেপির প্রার্থী। সাংবাদিক মহলে অত্যন্ত পরিচিত নাম জগন্নাথ চ্যাটার্জির জন্ম, বড় হয়ে ওঠা সিউড়ি শহরে। সেই সিউড়ি শহরের হৃত গৌরব ফেরানোই সাংবাদিকতা ছেড়ে রাজনীতির ময়দানে পা রাখা জগন্নাথ চ্যাটার্জির ওয়ান পয়েন্ট এজেন্ডা।
সিউড়ি সত্যানন্দ রামকৃষ্ণ বিদ্যাপীঠ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজে থেকে ফিজিক্স নিয়ে গ্র্যাজুয়েশন। এই কলেজেরই ছাত্র ছিলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রয়াত প্রণব মুখার্জি। মাস্টার্স করতে চলে আসেন কলকাতা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতা নিয়ে স্নাতকোত্তর। পড়া শেষ হতেই যোগ দেন বরুণ সেনগুপ্তর বর্তমান সংবাদপত্রে।
২০০১ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বর্তমান পত্রিকায় চাকরি করেন। তারপর বর্তমান ছেড়ে ২০১২ থেকে ২০২১ পর্যন্ত আনন্দবাজার পত্রিকাতে। ইস্তফা দেওয়ার আগ পর্যন্ত ছিলেন স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।
[আরও পড়ুন- ভোটের সময় গদ্দারটা গুন্ডামি করতে এলে আটকে দেবেন, খেজুরি থেকে তোপ মমতার]
২০২১ সালে বিজেপি প্রার্থী হলেও, ভারতীয় জনতা পার্টির আদর্শে সঙ্গে তাঁর পরিচয় বহুদিনের। ১৯৯৬ সাল থেকেই জগন্নাথ চ্যাটার্জি অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের সদস্য। এমন কী এসএফআই-সিপির প্রবল দাপটের মধ্যে দাঁড়িয়ে সিউড়ির বিদ্যাসাগর কলেজে এবিভিপি প্রার্থী হিসেবে জিতেছেন ছাত্র নির্বাচন। জগন্নাথের কথায়, যতবার প্রার্থী হিসেবে ভোটে লড়েছি কোনওদিন হারিনি। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।
বিজেপির প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে তিনি জানান, গত প্রায় ৬ মাস ধরে বিজেপি নেতৃত্ব তাঁকে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছেন। প্রথম দিকে তিনি রাজি ছিলেন না। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে বিশেষ একজনের ফোনে সিদ্ধান্ত বদলান জেফারসন ফেলো জগন্নাথ চ্যাটার্জি। সেদিনই ইস্তফা দেন আনন্দবাজার পত্রিকায়। বিকেলে তাঁর নাম ঘোষণা হয় দিল্লি থেকে। সময় নষ্ট করেননি জগন্নাথ চ্যাটার্জি। শনিবার থেকেই নেমে পড়েছেন লড়াইয়ে।
শনিবার তারাপীঠ মন্দিরে পুজো দিয়ে প্রচারে নামেন তিনি। প্রথম দিনই যেভাবে সাড়া পেয়েছেন তাতে জয় স্রেফ সময়ের অপেক্ষা বলে মনে করছেন একদা দুঁদে সাংবাদিক জগন্নাথ চ্যাটার্জি।
পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহ্যশালী জেলা বীরভূম। রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনের পাশাপাশি বীরভূম ভক্তিবাদ এবং শাক্তবাদের মিলন স্থল। সদ্য প্রাক্তন সাংবাদিকের আক্ষেপ, অথচ এহেন বীরভূম জেলা বর্তমানে সংবাদের শিরোনামে উঠে আসছে সন্ত্রাসের জন্য।
তাঁর দাবি, ছোটবেলা যে সিউড়িকে দেখেছেন, আজ এত বছর পরেও সপ্তাহ শেষে ছুটিতে বাড়ি গিয়ে দেখেন তাঁর প্রিয় সিউড়ি শহর একই জায়গায় থমকে আছে। জেলা শহর হওয়া সত্ত্বেও কোনও পরিবর্তন নেই। সবকিছুই যেন আটকে গিয়েছে ৩০ বছর আগে। জগন্নাথ বাবু বলেন, ভোটে জিতে তাঁর প্রধান কাজ হবে নিজের শহরের জন্য কিছু করা। বাংলায় চলতি হিংসা ও দুর্নীতি মুক্তির পাশাপাশি সিউড়ির উন্নয়নের দাবি নিয়ে তিনি জনতার দরবারে যাচ্ছেন।
২০১৯ লোকসভার ফল অনুযায়ী সিউড়ি বিধানসভা আসনে বিজেপির লিড আছে প্রায় ১০ হাজার। জগন্নাথ চ্যাটার্জির বিপরীতে সিউড়ি থেকে তৃণমূলের প্রার্থী বিকাশ রায়চৌধুরী। সাংবাদিকের চেয়ারে বসে এতদিন যে ভোটযুদ্ধের বিশ্লেষণ করেছেন, এবার তিনি নিজেই প্রার্থী। সাংবাদিকতা থেকে নেতা হওয়ার এই যাত্রাপথে কতটা সফল হন জগন্নাথ চ্যাটার্জি, সেটা জানতে অপেক্ষা ২ মের।
Comments are closed.