কলকাতা তো বটেই সম্ভবত দেশের মধ্যে প্রথম, এক নবজাতককে দত্তক নিলেন ‘সেরিব্রাল পালসি’তে আক্রান্ত এক মহিলা। বালিগঞ্জ ফাঁড়ির বাসিন্দা, বছর ৪৮ এর জিজা ঘোষ জন্ম থেকেই এই শারীরিক প্রতিবন্ধকতায় আক্রান্ত। কিন্তু মনের জোর ও দীর্ঘদিন ধরে লালিত মাতৃত্বের স্বাদ অনুভব করার আকন্ঠ তাগিদে আজ তাঁর কোলে খেলা করছে মাস ছয়েকের ফুটেফুটে এক শিশু কন্যা। আদর করে যার নাম রাখা হয়েছে ভুজঙ্গ। তৎকালীন প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তনী এবং দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাশ করা জিজা পেশায় শিক্ষিকা। ২০১৩ সালে তাঁর বিয়ে হয় একটি ব্যাঙ্কের ল’অফিসার বাপ্পাদিত্য নাগের সঙ্গে। বিয়ের পর থেকেই এই দম্পতি চাইছিলেন একটি বাচ্চা দত্তক নিতে।
কিন্তু পথটা সহজ ছিল না। দীর্ঘ আইনি টানাপোড়েন, নিয়ম কানুনের বেড়াজাল পেরোতে হয়েছে জিজা ও বাপ্পাদিত্যকে। ২০১৬ সালে তাঁরা দত্তক নেওয়ার আবেদন জানান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। এরপর ২০১৮ সালে তাঁরা ওড়িশার কেওনঝড়ের একটি হোমে গিয়ে ভুজঙ্গকে দেখতে পান। প্রথম দেখাতেই নবজাতক এই শিশু কন্যাটিকে পছন্দ হয়ে যায় তাঁদের। এরপর অ্যাডপশন কমিটির কাছে জিজার ‘ফিট সার্টিফিকেট’ জমা দেওয়া থেকে শুরু করে সেন্ট্রাল অ্যাডপশন রিসোর্স অথরিটির সঙ্গে ই-মেল, নথিপত্র চালাচালি, বিগত কয়েক মাসে অনেক পথ পেরোতে হয়েছে জিজা ও বাপ্পাদিত্যকে। নিয়ম অনুযায়ী, শারীরিক, মানসিক এবং আর্থিকভাবে তাঁরা এই শিশুকন্যা দত্তক নিতে সক্ষম কিনা তার একাধিক পরীক্ষা-প্রমাণ জিজা ও বাপ্পাদিত্যকে দিতে হয়েছে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের কাছে। এমনকী জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিকের অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয় তাঁদের। কিন্তু কথায় বলে, সব ভালো যার শেষ ভালো। কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে এখন ছ’মাসের শিশু কন্যার দেখাশোনার দায়িত্ব পেয়েছেন এই দম্পতি। তবে ভুজঙ্গ’র মা-বাবা হিসাবে সরকারি স্বীকৃতি পেতে এখনও মাস দু’য়েক সময় লাগবে তাঁদের।
Comments