লকডাউনের জেরে বন্ধ স্কুল ও কলেজের পঠনপাঠন। কিন্তু তাতে কী। মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ কিংবা ডেস্কটপ থাকলেও হল। আর তাঁর সঙ্গে হেডফোন। ব্যাস, তাহলেই আর কোনও সমস্যা নেই। সঙ্গে রয়েছে খাতা আর পেন। শুনে শুনে নোট ডাউন করছে ছাত্র-ছাত্রীরা। করোনা মোকাবিলায় এই লকডাউনের জেরে এই ভাবেই চলছে প্রায় গোটা দেশের স্কুল ও কলেজের ক্লাস।
নভেল করোনা ভাইরাসের এই অতি দ্রুত সংক্রমণ থমকে রেখেছে গোটা বিশ্বকে। যার প্রভাব স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির মতোই পড়েছে শিক্ষা ব্যবস্থার উপরও। প্লে-স্কুল থেকে কলেজ সব মিলিয়ে বহু ছাত্রছাত্রী ঘরবন্দি। বন্ধ ক্লাসরুমও। কিন্তু তাই বলে তো পড়াশোনা থেমে যেতে পারে না। তাই পড়া চালিয়ে যাওয়ার তাগিদেই এই আধুনিক প্রযুক্তির যুগে দাড়িয়ে ছেলেমেয়েরা ও তাঁদের শিক্ষকেরা বেছে নিয়েছেন অনলাইন বা ভার্চুয়াল শিক্ষা পদ্ধতিকেই।
কম্পিউটার বা স্মার্ট ফোনের সৌজন্যে ছাত্রছাত্রীরা কাছে পেয়ে যাচ্ছে তাঁদের প্রিয় স্যরদের। দিব্যি চলছে নোট নেওয়া, প্রশ্নোত্তর পর্ব, আর ক্লাস টেস্ট। স্ক্রিনেই দেখানো হচ্ছে শিক্ষকদের নোট, পাওয়ার পয়েন্ট অডিও-ভিডিও প্রেজেন্টেশন। লকডাউনের প্রথম পর্বে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়লেও শিক্ষাদানের এই আধুনিক পদ্ধতিতে ক্রমেই সড়গড় হয়ে উঠেছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। দেশের প্রায় ৩০ কোটি ছাত্রছাত্রী এই অনলাইন শিক্ষা পদ্ধতির সঙ্গে যুক্ত হলেও এখনও অনেকেই ডিজিটাল ক্লাসে অংশগ্রহণ থেকে দূরে সরে রয়েছেন। বিশেষ করে জেলার ছেলেমেয়েরা। দেশের মাত্র ২২ শতাংশ পড়ুয়া এই আধুনিক ক্লাস করতে পারছে। বাকি ৭৮ শতাংশই বঞ্চিত। এর মূলে রয়েছে প্রধানত দুটি কারণ। প্রথমত এদের অনেকেরই ক্ষমতা নেই একটি স্মার্ট ফোন কেনার। দ্বিতীয়ত, দেশের অনেক জায়গাতেই এখনও পৌঁছয়নি উন্নতমানের ইন্টারনেট পরিষেবা। যদিও বর্তমান পরিস্থিতিতে দাড়িয়ে ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে অবিভাবকেরা সকলেই এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছেন।
এটা তো ঠিকই যে এখনও পর্যন্ত বলা কঠিন ঠিক কতদিনে আমরা মুক্তি পাব এই গৃহবন্দি দশা থেকে। তাই কীভাবে টেলি-যোগাযোগ ব্যাবস্থাকে দ্রুত উন্নত করে আরও বেশি সংখ্যক ছাত্রছাত্রীকে এই অনলাইন পদ্ধতির মধ্যে নিয়ে আসা যায় তা নিয়েই মাথা ঘামাতে হচ্ছে গোটা দেশকেই। আসলে শুধু কিছু ছাত্রছাত্রীর মুখে হাসি ফোটালেই চলবে না, দেশের সকল পড়ুয়া যাতে ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থার সুযোগ পেতে পারে, সেই জন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। গড়তে হবে আরও উন্নত পরিকাঠামো।
Comments are closed.