”আইসিইউ ভালো না। দয়া করে আমায় কোনও বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাও। এখানে কেউ আমাকে দেখছে না।”
মারা যাওয়ার ২৪ ঘণ্টা ভাইকে পাঠানো শেষ টেক্সট মেসেজে এমনই অভিযোগ করেছিলেন হায়দরাবাদের সাংবাদিক মনোজ কুমার। সপ্তাহ দুয়েক আগে করোনা সংক্রমিত হয়ে তেলেঙ্গানা সরকার পরিচালিত গান্ধী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন মদন্নাপেতের বাসিন্দা ৩৩ বছরের ওই সাংবাদিক। জুনের ৬ তারিখ বিকেল ৩ টে ৪৫ মিনিটে ভাই সাইনাথকে পাঠানো মোবাইল টেক্সটে হাসপাতালের অব্যবস্থার কথা জানিয়ে সেখান থেকে তাঁকে বের করে নিয়ে যেতে বলেন মনোজ। কিন্তু তা আর হয়নি। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন সাংবাদিক। গত সেপ্টেম্বর মাসে বিয়ে করেছিলেন মনোজ, এখন স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। কয়েক বছর আগে বোনের মৃত্যুর পর তাঁর সন্তানের দায়িত্বও নিয়েছিলেন মনোজ। তাঁর অকাল মৃত্যুতে কেসিআর সরকার পরিচালিত হাসপাতাল পরিষেবার দিকে আঙুল তুলছেন আত্মীয়রা। মৃত মনোজের পরিবারের দাবি, অক্সিজেন সাপোর্টটুকুও পাননি তিনি।
যদিও সরকারের তরফে যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
‘দয়া করে আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও’ মনোজের লেখা এই শেষ মেসেজ মিডিয়ার সামনে এনেছে তাঁর পরিবার। সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ভাই সাইনাথের সঙ্গে মনোজের শরীরেও করোনাভাইরাস পাওয়া গেলে তাঁদের হায়দরাবাদের নামকরা সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সাইনাথ উপসর্গহীন হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয় তাঁকে। এদিকে দাদার মৃত্যুর পর গান্ধী হাসপাতালের বেহাল পরিস্থিতির একটি ভিডিও মিডিয়ার সামনে আনেন সাইনাথ।
সাইনাথ জানান, গত ৩ জুন বেলা ১১ টায় শরীরে জ্বর ও করোনার উপসর্গ নিয়ে স্থানীয় হাসপাতালে যান দুই ভাই। ওইদিন তাঁদের নমুনা পরীক্ষা করে করোনা পজিটিভ বলে জানানো হয় এবং দু’জনেই গান্ধী হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ডে ভর্তি হন। কিন্তু হাসপাতালে ঢোকার পর থেকে তাঁরা ন্যূনতম পরিষেবা পাননি বলে অভিযোগ সাইনাথের। সেদিন রাতেই দাদা মনোজের প্রবল শ্বাসকষ্ট শুরু হয় বলে জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু সে খবর দেওয়ার জন্য হাসপাতালের কাউকে পাননি বলে দাবি করেছেন তিনি। স্যানিটাইজ করার কর্মীরা তাঁকে জানান, পরের দিন ভোরে ডাক্তার আসবেন। কিন্তু পরের দিন থেকে মনোজের শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে। সাইনাথ জানান, যেহেতু দাদা সাংবাদিক, তাই তাঁর কিছু সহকর্মীর নজরে আনেন এই বিষয়। তাঁদের চাপে হাসপাতালের সুপারিন্টেনডেন্ট আইসিইউ-তে ভর্তি করেন মনোজকে। কিন্তু সেখানেও অব্যবস্থার জেরে অকালে চলে যেতে হল দাদাকে, অভিযোগ সাইনাথের।
এই প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের একাধিক ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছে। যেখানে দেখা গিয়েছে চরম খারাপ পরিস্থিতি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে তেলেঙ্গানা সরকার এইসব অভিযোগ খারিজ করেছে। গান্ধী হাসপাতালের তরফে জানানো হয় করোনা ছাড়াও অন্যান্য অসুখ ছিল মনোজ কুমারের। চিকিৎসকদের চেষ্টা সত্ত্বেও হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয় তাঁর। যদিও মৃত সাংবাদিকের পরিবার সেই দাবি উড়িয়ে হাসপাতালের বেহাল পরিষেবার দিকেই আঙুল তুলছে।
Comments are closed.