মুখ্যমন্ত্রীর বহিরাগত আক্রমণের অন্যতম লক্ষ্য তিনি। সেই জে পি নাড্ডার বাংলা যোগ জানেন? তিনি বাংলার জামাই। স্ত্রী মল্লিকা প্রবাসী বাঙালি।
১৯৬০ সালের ১০ মার্চ মধ্যপ্রদেশে জব্বলপুরে জন্ম মল্লিকার। বাবা সুভাষচন্দ্র ব্যানার্জি, মা জয়শ্রী ব্যানার্জি। পড়াশোনা জব্বলপুরের সেন্ট জোসেফস কনভেন্ট সিনিয়ার সেকেন্ডারি স্কুলে। রানি দুর্গাবতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক করেন মল্লিকা ব্যানার্জি। তারপর সমাজ সেবার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। রাজনীতির আশেপাশে তাঁকে দেখা না গেলেও, বাড়ির রাজনৈতিক পরিমণ্ডলেই বড়ো হয়ে ওঠা।
মা জয়শ্রী ব্যানার্জি জনসঙ্ঘের নেত্রী। মল্লিকার বয়স তখন ১২। ১৯৭২ সালে মা জয়শ্রী মধ্যপ্রদেশ বিধানসভায় জনসঙ্ঘ প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়ান। সেবার হারের মুখ দেখতে হলেও জয়শ্রী ব্যানার্জি ৭৭ সালে জনতা পার্টির হয়ে আবার ভোটে দাঁড়ান। নির্বাচনী রাজনীতিতে প্রথম জয় পান তিনি। তারপর থেকে কখনও মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ সদস্য, আবার কখনও সংগঠনের কাজে গ্রামে গ্রামে ঘোরা, মল্লিকার মা তখন প্রকৃত অর্থেই মহাব্যস্ত। ১৯৯৯ সালে প্রথমবার লোকসভা ভোটে দাঁড়ালেন জয়শ্রী ব্যানার্জি। বিজেপি প্রার্থী হয়ে বিপুল ভোটে জিতে পৌঁছে গেলেন লোকসভা।
কিন্তু মধ্যপ্রদেশের গ্রামে গ্রামে রাজনীতি করা জয়শ্রী ব্যানার্জি এবার পড়লেন মহা মুশকিলে। আদব-কায়দা যে কিছুই জানা নেই! কী করবেন আর কী করবেন না, জানা নেই কিছুই। সেই সময় জয়শ্রী ব্যানার্জি পাশে পেয়েছিলেন আর এক ব্যানার্জিকে। জানেন, কে তিনি? তিনি আর কেউ নন, সেই লোকসভার আরেক ব্যানার্জি, মমতা। তৃণমূল সাংসদ মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে জয়শ্রী ব্যানার্জির বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল স্বাভাবিকভাবেই, নিজেদের রাজনৈতিক প্রভেদ তাতে বাধা হয়নি কোনওদিন।
আদতে হিমাচলের বাসিন্দা জেপি নাড্ডার বাবা তখন পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছেন। ছেলে জগতপ্রকাশ দুরন্ত সাঁতারু। সেই সঙ্গে পড়াশোনাতেও অধ্যাপক বাবার মান রাখছে সে নিয়মিত। দিল্লিতে জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতায় বিহারের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন জে পি নাড্ডা। পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাশ করে জগতপ্রকাশ ফিরে যান হিমাচলপ্রদেশ। সেখানে আইনে স্নাতকোত্তরের পাশাপাশি এবিভিপির সঙ্গে কাজ করা শুরু করেন।
পাটনায় বাবার চাকরি সূত্রেই জব্বলপুরের ব্যানার্জি বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ। যে যোগাযোগ স্থায়ী হয় ১৯৯১ সালের ১১ ডিসেম্বর। মল্লিকার সঙ্গে বিয়ে হয় জগতপ্রকাশ নাড্ডার। জে পি নাড্ডার ঘনিষ্ঠ মহলে চালু রসিকতা, বিয়ের পর থেকেই তাঁর রাজনৈতিক আকাশে ধূমকেতুসম উত্থান। ১৯৯৩ সালে হিমাচলের বিলাসপুর থেকে প্রথম বিধানসভা ভোটে জেতেন নাড্ডা। ৯৮ সালে ফের জেতেন।
বিজেপির রাজনীতিতে জে পি নাড্ডার ভূমিকা অনেকটাই। মোদী-অমিত শাহের অত্যন্ত বিশ্বাসভাজন জে পি নাড্ডার সবচেয়ে বড়ো গুণ, তাঁর নাকি রাগ নেই। কখনও কোনও অবস্থাতেই মুখের হাসি মেলায় না হরিশ-গিরিশের বাবার। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল বলে এই হাসি অটুট রাখেন হোম মিনিস্টার।
রাজনীতিতে সরাসরি না নামলেও ছোট থেকেই রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে উঠেছেন দাদা সঞ্জয় আর বোন মল্লিকা। নারী স্বাধীনতা নিয়ে অনেকদিন ধরেই কাজ করছেন তিনি। ২০১৫ সালে মোদীর বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও প্রকল্পে কাজ করেছিলেন তিনি। সেই সময় নারী স্বাধীনতা নিয়ে তাঁর বক্তৃতা নজর কেড়েছিল সবার।
এবার স্বামীর সঙ্গেই আসবেন নাকি রাজ্যে প্রচারে? বঙ্গ বিজেপি সূত্রে খবর মল্লিকা নাড্ডাকে প্রচারে আনতে চায় তাঁরা। মল্লিকা নাড্ডা নিজেও উৎসাহী।
Comments are closed.