বাংলার বিজেপি বিধায়কদের জন্য কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা রাজনৈতিক দীনতা এবং নিকৃষ্ট সরকারি নীতির উদাহরণ। বলছেন মুম্বই পুলিশের প্রাক্তন কমিশনার তথা গুজরাত ও পাঞ্জাব পুলিশের ডিজিপি জুলিও রিবেইরোর।
সারা দেশ যখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে ত্রাহি রব তুলেছে তখন আরও একটি বিষয় নিয়ে তোলপাড় দিল্লি। তা হল, বাংলায় জয়ী ৭৫ জন বিজেপি বিধায়ককে কেন্দ্রীয় সুরক্ষা প্রদানের প্রসঙ্গ।
অমিত শাহের মন্ত্রকের এই সিদ্ধান্তকে আগেই অসাংবিধানিক বলে দাবি করেছেন দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাক্তন বিশেষ সচিব ভাপ্পালা বালাচন্দ্রন। এবার ইংরেজি দৈনিক দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রবন্ধ লিখে অমিত শাহের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে তুলোধোনা করলেন জুলিও রিবেইরো। লিখলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সিদ্ধান্ত অত্যন্ত খারাপ রাজনীতির উদাহরণ হিসেবে থেকে যাবে।
মরিয়া হয়ে লড়াই করেও বাংলায় বিজেপিকে শোচনীয় হারের মুখে পড়তে হয়েছে। এদিকে ফল প্রকাশের পর থেকেই বিজেপি হামলার অভিযোগ করতে থাকে। ক্ষমতায় এসেই মুখ্যমন্ত্রী রাজনৈতিক হিংসা থামাতে কড়া পদক্ষেপ নেন। পতাকা না দেখে মৃতদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করে নবান্ন। কলকাতা হাই কোর্টও হিংসা মোকাবিলায় রাজ্যের পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করে। এই প্রেক্ষিতে রাজ্যে হিংসা খুঁজতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দলের পাশাপাশি নানা দফতরের দল চলে আসে বাংলায়। তারপরই অমিত শাহের মন্ত্রক জানায়, বাংলায় জয়ী বিজেপি বিধায়কদের কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দেওয়া হবে। যা নিয়ে নতুন করে শুরু হয় বিতর্ক। এই প্রেক্ষিতে এবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তীব্র সমালোচনায় দেশের অন্যতম সেরা পুলিশ অফিসার বলে পরিচিত, মুম্বই পুলিশের প্রাক্তন কমিশনার এবং গুজরাত ও পাঞ্জাবের প্রাক্তন ডিজিপি জুলিও রিবেইরো।
প্রাথমিক ভাবে প্রশ্ন উঠছে, আইন শৃঙ্খলা রাজ্যের এক্তিয়ারে। তাহলে কীভাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক শুধু বিজেপি বিধায়কদের নিরাপত্তা দিতে পারে? প্রশ্ন উঠছে, বিধায়করা কি স্থানীয় থানায় নিরাপত্তার আবেদন করেছিলেন? উত্তর নেই।
এবার এই বিষয়েই কেন্দ্রকে তোপ দাগলেন জুলিও। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে তাঁর প্রবন্ধের ছত্রে ছত্রে আক্রমণ করা হয়েছে সরকারি অঙ্গ প্রত্যঙ্গের রাজনীতিকরণকে। তিনি লিখেছেন, পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি বিধায়কদের জন্য যে সিআরপিএফ এবং সিআইএসএফকে মোতায়েন করা হচ্ছে, সেই ব্যাটেলিয়ন তৈরি করা হয়েছিল কি ভিআইপিকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য? রিবেইরো লিখছেন, এই বাহিনী তৈরির উদ্দেশ্য ছিল ব্যক্তি নয় বরং সম্মিলিত নিরাপত্তা প্রদান। সেই জন্যই এই সব বাহিনীতে কেউ একজন সিদ্ধান্ত নেওয়ার জায়গায় থাকেন না। ৭-৮ জনকে নিয়ে এক একটি সেকশন, ৩ টি সেকশন নিয়ে একটি প্লাটুন এবং ৩ টি প্লাটুন নিয়ে একটি কোম্পানি। প্রাক্তন পুলিশ কর্তা লিখছেন, এর অর্থ হল কোনও জওয়ানকে যেন একা সিদ্ধান্ত নিতে না হয়। জুলিও প্রশ্ন তুলছেন, একজন বিধায়ককে নিরাপত্তা দেওয়ার সময় কখনও এমন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে যে মোতায়েন থাকা কর্মীকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ বিধায়কদের যে কেন্দ্রীয় জওয়ান নিরাপত্তা দেবেন, সেই জওয়ানরা জানেন, রাজ্য পুলিশে অনাস্থাই তাঁদের ডেকে আনার মূল কারণ। এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় পুলিশকে তাঁরা যে নিজেদের কর্মদক্ষতা দেখাতে ব্যগ্র থাকবেন, সেটা বুঝতে পণ্ডিত হতে হয় না। অথচ CISF/CRPF এর ট্রেনিংয়ে এই বিষয় থাকে না। জুলিও রিবেইরোর অভিযোগ, স্রেফ রাজনৈতিক কারণে এভাবে বাহিনীর মূল বিষয়গুলো গুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে বাহিনীর পারফরমেন্সে।
এই পরিস্থিতির কারণ কী? তার উত্তরও দিয়েছেন পাঞ্জাবের প্রাক্তন ডিজিপি। তাঁর মতে বাংলায় নির্বাচনী পরাজয়ের পর এই সব করে মুখ রক্ষার উপায় খুঁজছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কিন্তু তার ফল ভোগ করছে শৃঙ্খলাবদ্ধ বাহিনী।
জুলিও রিবেইরো লিখেছেন, কেন্দ্রীয় বাহিনীর কাজ করার প্রধান শর্ত হল স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ। কিন্তু বাংলার পরিস্থিতিতে আসলে অমিত শাহের মন্ত্রক মমতা ব্যানার্জিকে বলতে চাইল, আপনার পুলিশের উপর ভরসা নেই কেন্দ্রের। আর একে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের রাজনৈতিক দীনতা এবং নিকৃষ্ট নীতি বলে অভিহিত করছেন মুম্বইয়ের প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার। তাঁর মতে, শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিশোধের নেশায় ভয়ঙ্কর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক।
Comments are closed.