বাবা-মা দু’জনেই করোনা সংক্রমিত। তাঁদের ছয় মাসের শিশুর দেহেও যদি সংক্রমণ ঘটে যায়? কে দেখবে? সংক্রমণের ভয়ে বাচ্চাটিকে কাছে রাখতে কেউই যখন রাজি হচ্ছেন না তখন এগিয়ে এলেন এক মহিলা চিকিৎসক। নাম মেরি অনিতা। নিজের কাছেই রেখে দিলেন কোভিড পজিটিভ দম্পতির সন্তানকে। দীর্ঘ এক মাস ধরে চিকিৎসা ও হোম কোয়ারেন্টিন পর্ব শেষ করে এখন রোগমুক্ত বাবা-মা। তারপরেই শিশুটিকে তাঁদের হাতে তুলে দিলেন ওই মহিলা চিকিৎসক। নিজে ভেঙে পড়লেন কান্নায়। বুধবার এমনই মন ছুঁয়ে যাওয়া ঘটনার সাক্ষী থাকল কেরল।
শিশুটির নাম এলভিন। তার বাবা-মা গুরুগ্রামের এক চিকিৎসাকেন্দ্রে স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। সেখানে প্রথম করোনার শিকার হন এলভিনের বাবা। এলভিনকে নিয়ে কেরলের এর্নাকুলাম জেলায় নিজেদের বাড়িতে ফিরে যান মা। কিন্তু হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে থাকতেই মায়ের করোনা পজিটিভ হয়। এবার তো শিশুটিও সংক্রামিত হতে পারে! এই আশঙ্কায় এলভিনকে কারও কাছে কিছুদিনের জন্য রাখার কথা ভাবেন মা। কিন্তু সংক্রমণের ভয়ে কেউই রাজি হননি। মুশকিল আসন হয়ে এগিয়ে আসেন চিকিৎসক মেরি অনিতা।
পেশায় ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট মেরি অনিতা বিশেষভাবে সক্ষম শিশুদের নিয়ে কোচিতে একটি সংস্থা চালান। গত ১৪ জুন চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির কাছে তিনি জানতে পারেন, মাস ছয়েকের শিশুটির মা করোনা সংক্রমিত হয়েছেন। শিশুটিকে কয়েকদিন মায়ের কাছেই থাকতে হয়েছে। তাই শিশুটিরও সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। এখন কার কাছে শিশুটিকে রাখা হবে তাই নিয়ে সংকট দেখা দিয়েছে। মেরি অনিতা সঙ্গে সঙ্গে জানিয়ে দেন তিনি দায়িত্ব নিতে রাজি। তাঁর কথায়, শিশুদের দেখভাল করার অভ্যাস আমার আছে। তাই একটুও না ভেবে এলভিনের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানাই মা-বাবার সুস্থ হওয়া পর্যন্ত শিশুটিকে নিজের কাছে রাখব।
মেরি অনিতার তিন সন্তান। ১৫ জুন হাসপাতাল থেকে এলভিনকে নিয়ে নিজের একটি ফাঁকা ফ্ল্যাটে ওঠেন তিনি। মেরি এবং ওই শিশুটির জন্য বাড়ি থেকে খাবার তৈরি করে পাঠানো হত সেই ফ্ল্যাটে। দরজার কাছে খাবার রেখে দিয়ে ফিরে যেতেন মেরির সন্তানরা। নিয়ম করে ভিডিও কলে এলভিনের মা এবং গুরুগ্রামে থাকা বাবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন ওই চিকিৎসক। এভাবেই এক মাস কেটে গিয়েছে। গত বুধবার বাবা-মা সুস্থ হওয়ার পর এলভিনকে তাঁদের হাতে তুলে দেন মেরি অনিতা। কিন্তু চোখের জল আটকে রাখতে পারেননি। এই একমাসে বড্ড কাছের হয়ে গিয়েছিল যে ছোট্ট এলভিন। শিশুটির মায়ের কথায়, ‘ওই ডাক্তারকে স্বয়ং ঈশ্বর পাঠিয়েছেন। করোনা রোগীদের কাছ থেকে সকলে যখন পালাচ্ছে, তখন আমার শিশুকে দেখাশোনার যে দায়িত্ব উনি নিলেন, সেই ঋণ আমি জীবনে শোধ করতে পারব না।’ চিকিৎসক মেরি অনিতা বলছেন, একজন চিকিৎসক এবং মা হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন মাত্র। তিনি যাই বলুন, ‘মাদার মেরি’র প্রশংসায় এখন পঞ্চমুখ কেরল।
Comments are closed.