ইস্টবেঙ্গল যুব দলের হয়ে যখন অনুশীলন করতেন, পাশেই দেখতেন লাল হলুদ সিনিয়র দলের ফুটবলারদের (Kolkata Football)। তাদের নিয়ে কত হুড়োহুড়ি। কত মাতামাতি। তাদের পেছনে দৌড়াচ্ছেন ক্যামেরা হাতে সাংবাদিকরা। একখানা ছবি তোলার জন্য আবদার তো লেগেই আছে। বেলঘরিয়ার সোমনাথ নায়কও স্বপ্ন দেখতেন একদিন ইস্টবেঙ্গল সিনিয়র দলে খেলবেন। বেলঘরিয়া হাইস্কুলের ঢিল ছোড়া দূরত্বে থাকেন সোমনাথ। তার মা একটি আবাসনের কেয়ারটেকার। সেই আবাসনের নিচে একটি ঘর নিয়ে থাকেন সোমনাথ। বেলঘরিয়া ব্যায়ামাগার থেকে ফুটবল খেলা শুরু। তারপর শ্যামনগর তরুণ সংঘ। দুর্গাপুরের মোহনবাগান একাডেমি।
সদ্য তরুণ সোমনাথ তখন স্বপ্ন দেখছেন। বড় দলে খেলার স্বপ্ন। ফুটবল খেলে ছোটবেলা থেকে দেখে আসা দারিদ্রকে মুছে ফেলার স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন সফল হওয়ার দিকেও চলে গিয়েছিলো। একটি প্রতিযোগিতায় ভালো খেলে ডাক পেলেন ইস্টবেঙ্গল যুব (Kolkata Football) দলে। তিন বছর ইস্টবেঙ্গল যুব দলের আক্রমণভাগের দায়িত্ব সামলেছেন। তার সমসাময়িক জিতেন মূর্মু এখন বাংলা ফুটবলের পরিচিত মুখ। সিনিয়র দলে সুযোগ দেওয়ার জন্য তাকে ট্রায়ালে দেখাও হয়েছিল। কিন্তু সে যাত্রায় শিকে ছেঁড়েনি।
সই করলেন কালীঘাট এম এসে। হঠাৎই হাঁটুতে চোট। স্বপ্নে বড়সড় ধাক্কা লাগল সোমনাথের। যা হয় মফস্বলের ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখা গরিব বাড়ি থেকে উঠে আসা ছেলেদের। সোমনাথের সঙ্গেও তাই হয়েছে। প্রতিমুহূর্তে লড়তে হয়েছে সেই লড়াই। ফুটবল ছেড়ে দেওয়া নাকি ফুটবলার হওয়ার স্বপ্নটাকে নিয়েই বেঁচে থাকা।
চোট দারিদ্র্যের মত প্রতিপক্ষকে হারিয়ে সোমনাথ কিন্তু আজও সবুজ মাঠে দৌড়ে যাচ্ছেন। বছর ২৩-এর এই ফুটবলার আজও স্বপ্ন দেখেন বড় দলে খেলবেন। সংসার চালাতে খেপ খেলতে হয় সোমনাথকে। কিন্তু তাওবা কত টাকা পাওয়া যায়। সোমনাথের পরিবারের একটা ছোট্ট দোকান আছে। জামাকাপড়ের। যে সোমনাথের সব ঠিক থাকলে খেলার কথা ছিল ইস্টবেঙ্গলে, তাকে এখন সন্ধ্যাবেলা বসতে হয় দোকানে। তবু হার মানছেন না সোমনাথ। বলছেন, ‘লড়াইটা এখনও চালিয়ে যাচ্ছি। ফুটবল নিয়েই বেঁচে থাকতে চাই। দেখাই যাক না কোনও দলে সুযোগ হয় কিনা।’ সোমনাথ লড়ছেন। ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন বুকে তাঁর মতোই লড়ে যাচ্ছে সারা বাংলার আরও হাজারো সোমনাথ।
Comments are closed.