লকডাউন প্রবেশ করেছে শেষ সপ্তাহে। ১৪ তারিখ কি লকডাউন উঠে যাচ্ছে, তা নিয়ে প্রবল জল্পনা সাধারণ মানুষের মধ্যে। এই পরিস্থিতিতে এপ্রিলের ১৪ তারিখের পরও লকডাউন চালিয়ে যাওয়ার কথা ভাবতে শুরু করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রকে এ ব্যাপারে ভাবতে বাধ্য করেছে কয়েকটি রাজ্য সরকার। তারা সরাসরি লকডাউন না তোলার আবেদন রেখেছে কেন্দ্রের কাছে। একই দাবি নিয়ে কেন্দ্রের দ্বারস্থ হয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও। তাঁদেরও দাবি, লকডাউন চালু রাখার পক্ষেই। এই পরিস্থিতিতে সরকারি সূত্রের খবর, গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে প্রস্তাব।
এখন প্রশ্ন হল, লকডাউনের মেয়াদ যদি বাড়ে, তাহলে কতদিনের জন্য?
সূত্রের খবর, দেশের রাজ্যেগুলোর মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকেই লকডাউন পরবর্তী কর্মপন্থা নিয়ে আলোচনা শুরু করে দিয়েছিল কেন্দ্র। প্রাথমিকভাবে ভাবা হয়েছিল, করোনা আক্রান্তের সংখ্যা অনুযায়ী জেলা ধরে ধরে হটস্পট চিহ্নিত করা হবে। সেই অনুযায়ী হটস্পটগুলোতে জারি থাকবে লকডাউন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে কয়েকটি রাজ্য জানায়, এভাবে হটস্পট বেছে নেওয়ার প্রক্রিয়া যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং। যেখানে এখনও করোনাভাইরাসকে বোতলবন্দি করা সম্ভব হয়নি, সেই সময় এই পদ্ধতি কার্যকরী হবে কি?
বর্তমানে যে জল্পনা অক্সিজেন পাচ্ছে তা হল, আপাতত ২ সপ্তাহের জন্য লকডাউন বাড়ানো হবে। অর্থাৎ গোটা এপ্রিল মাস।
দেশের বেশিরভাগ বড় রাজ্য যেমন উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, তেলঙ্গানা এবং রাজস্থান ইতিমধ্যেই লকডাউন বাড়ানোর দাবি জানিয়ে রেখেছে। ৩০০-র কাছাকাছি জেলায় অন্তত একজন করে করোনা আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রধানমন্ত্রী কয়েকদিনের মধ্যেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন, উচ্চপদস্থ সরকারি আমলাকে উদ্ধৃত করে দাবি ইকনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে।
তবে এক্ষেত্রে রয়েছে কিছু বাস্তব সমস্যা। দিল্লি, মুম্বই, হায়দরাবাদ কিংবা বেঙ্গালুরু, ভারতের অন্যতম বাণিজ্যিক হাব। লকডাউনের জেরে যা স্তব্ধ। এই পরিস্থিতিতে অর্থনীতিকে বাঁচাতে দীর্ঘদিন লকডাউন যে দাওয়াই নয়, তা সহজবোধ্য। কিন্তু ভাইরাসকে কাবু করতে না পারলে, সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার প্রভূত আশঙ্কা থাকছেই। তাই বলতে গেলে শাখের করাতে কেন্দ্রীয় সরকার। একদিকে বন্ধ অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ শুরু করার হিমালয়সম চাপ, আবার অন্যদিকে জনজীবনকে মারণ ভাইরাসের খপ্পর থেকে বাঁচানো।
এই পরিস্থিতিতে নতুন করে কেন্দ্রীয় সরকারের রক্তচাপ বাড়িয়েছে তবলিগি জামাত কাণ্ড। যা নতুন করে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে কেন্দ্রের ২১ দিনের লকডাউনের সিদ্ধান্তকে। দেখা যাচ্ছে, দেশে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশেরই রয়েছে জামাত-যোগ। যা কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের মেয়াদ বৃদ্ধির পক্ষে একটি বড় যুক্তি।
দ্য ইকনমিক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখনও বেশ কয়েকটি রাজ্যে তবলিগের জমায়েতে হাজির হওয়া ব্যক্তিদের সবাইকে চিহ্নিত করে উঠতে পারেনি।
এই প্রেক্ষিতেই সরকারি মহল সূত্রে খবর, দেশজুড়ে জরুরি পণ্য পরিষেবা স্বাভাবিক হওয়ার পথে। তাঁরা মনে করছেন, এই সময় লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হলেও, তা সাধারণ মানুষের উপর বিশেষ চাপ ফেলবে না।
এদিকে রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীরা সাফ জানিয়েছেন, মানুষের জীবন বাঁচানোই এখন অগ্রাধিকার। সেজন্য লকডাউনের মেয়াদ বাড়াতে হলে বাড়ানো হোক।
এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকার কথা বলছে বাণিজ্য সংগঠনগুলোর সঙ্গেও। কীভাবে তা অংশত সচল করা যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা গতি পেয়েছে। মূলত খুচরো বাজার, জরুরি পণ্য উৎপাদন, বৃহৎ কনস্ট্রাকশন এবং পরিকাঠামো নির্মাণ, কঠোর সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং নিয়মাবলী মেনেও এই গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলো কীভাবে চালু করা যায়, তা নিয়েই এখন ব্যস্ত কেন্দ্রীয় সরকার।
Comments are closed.