বাংলায় এনআরসি নয়, ফের হুঁশিয়ারি মমতার

তিন বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ততই এনআরসি নিয়ে সুর চড়াচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। আর পাঁচ দিন পরেই করিমপুর, কালিয়াগঞ্জ এবং খড়গপুর বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন। মমতা ভোটের প্রচারে এখনও পর্যন্ত যাননি। যাওয়ার কোনও কর্মসূচি তাঁর নেই বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, করিমপুর এবং কালিয়াগঞ্জ কেন্দ্র দুটি একেবারে বাংলাদেশের সীমান্ত লাগোয়া বলেই মমতা এনআরসি নিয়ে কেন্দ্রকে হুঁশিয়ারি দিয়ে চলেছেন। এনআরসির ব্যাপারে সীমান্তের জেলাগুলির বাসিন্দারাই বেশি আতঙ্কিত। তাই মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের অভয় দিচ্ছেন।
মঙ্গলবার মালদহের প্রশাসনিক বৈঠকে মমতা জানিয়েছিলেন, রাজ্যে এনআরসি হতে দেওয়া যাবে না। বুধবার মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘিতে একগুচ্ছ সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাসে মুখ্যমন্ত্রী ফের হুঁশিয়ারি দেন রাজ্যের কোথাও এনআরসি চালু করতে দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার যতই বলুক এনআরসি চালু হবে। আমরা পশ্চিমবঙ্গে কিছুতেই তা চালু করতে দেব না। এনআরসির নামে কেন্দ্র হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা করছে। জনতার উদ্দেশে তাঁর মন্তব্য, আগুন লাগলে কেউ রক্ষা পায় না। কেন্দ্রের এই এনআরসি নামক ‘খুড়োর কলে’ একদম বিশ্বাস করবেন না। অসমে এনআরসির সময়ই বলা হয়েছিল, কোনও হিন্দুর নাম তালিকা থেকে বাদ যাবে না। কিন্তু চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর দেখা গেল, ১২ লক্ষ হিন্দুর নামই বাদ চলে গিয়েছে। তাদের স্থান হয়েছে ডিটেনশন ক্যাম্পে। বাংলায় আমরা এসব হতে দিতে পারি? কোনও একটা পরিচয়পত্র আপনাদের সঙ্গে থাকলেই হবে। অহেতুক মানুষকে ভয় দেখানো হচ্ছে।
দু’দিন আগেই কোচবিহারের এক জনসভায় মমতা নাম না করে অল ইন্ডিয়া মজলিশ-ই ইত্তেহাদুল মুসলিমিন -এর ( এআইএমআইএম) প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসির বিরুদ্ধে বিজেপির কাছ থেকে টাকা নেওয়া, উগ্রপন্থায় মদত দেওয়ার মতো নানা অভিযোগ করেছিলেন। মঙ্গলবারই দিল্লি থেকে তার জবাবও দেন ওয়াইসি। তাঁর অভিযোগ, ভয় ও হতাশা থেকে তৃণমূল নেত্রী এসব মন্তব্য করছেন। ওয়াইসির আরও অভিযোগ ছিল, মমতার জন্যই পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির এত বাড়বাড়ন্ত হয়েছে। বুধবারও একইভাবে মমতা নাম না করেই ফের আক্রমণ করেন ওয়াইসিকে। বলেন, হায়দরাবাদ থেকে এসে কোনও কোনও নেতা বলবেন, আপনাদের জন্য লড়াই করব। কিন্তু লড়াই করবেন কি! তাঁরা তো বিজেপির কাছ থেকে টাকার থলি নিয়ে বসে আছেন। নাম উল্লেখ না করলেও হায়দরাবাদ বলে মমতা যে ওয়াইসিকেই নিশানা করছেন তা স্পষ্ট। মঙ্গলবার মমতার অভিযোগের জবাবে ওয়াইসি বলেছিলেন, বাংলায় সংখ্যালঘুদের যে উন্নয়ন হয়নি, তা বলা মোটেই কট্টরপন্থা বা অসহিষ্ণুতা নয়।
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন কাশ্মীরে উগ্রপন্থীদের হাতে খুন হওয়া পাঁচ বাঙালি শ্রমিকের বাড়িতেও যান ওই সভা শেষ করার পর। প্রতি পরিবারের হাতে আরও পঞ্চাশ হাজার টাকা করে তুলে দিয়ে জানান, সরকার তাদের পাশে আছে।

Comments are closed.