সম্প্রতি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানিয়েছেন, ১৫ জুনের মধ্যে দিল্লিতে করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা ৪৪ হাজারে ঠেকবে। ৩০ জুনের মধ্যে সংক্রমিত ১ লক্ষ পেরোতে পারে। ১৫ জুলাই সংক্রমিতের সংখ্যা বেড়ে হতে পারে ২ লক্ষ ২৫ হাজার এবং জুলাইয়ের শেষে দিল্লিতে সংক্রমিতের সংখ্যা ৫ লক্ষে গিয়ে ঠেকতে পারে বলে আশঙ্কা কেজরিওয়াল সরকারের। দিল্লি সরকারের কি হাসপাতালে অত বেড বা চিকিৎসা পরিকাঠামো আছে? রাজধানী দিল্লিতেই যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে সারা দেশে কী হবে?
এমন অনেক প্রাসঙ্গিক প্রশ্নের মাঝেই জানিয়ে রাখা ভালো, কেজরিওয়াল সরকার যে পদ্ধতিতে এই ভবিষ্যৎ পরিসংখ্যান বের করেছে, তার আদত নাম ম্যাথমেটিক্যাল ডিজিস মডেলিং। এর অর্থ হল, তথ্যের উপর নির্ভর করে আগামীতে কী হতে পারে তা দেখানো। এক্ষেত্রে যেমন, বর্তমান সংক্রমণের হারের উপর ভিত্তি করে কেজরিওয়াল সরকার ভবিষ্যতে সংক্রমণের সংখ্যা হিসেব করেছে। যদিও করোনা পরিস্থিতিতে ডিজিস মডেলিং নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে।
ভারতে করোনা পরিস্থিতি আগামী দিনে কেমন হতে পারে, এ নিয়ে সরকারি একাধিক সংস্থা বিভিন্ন মডেল তৈরি করেছে। বিতর্কের সূত্রপাত কেন্দ্রের একটি দাবিকে ঘিরে। তৃতীয় পর্বের লকডাউনের শেষে লকডাউনের উপযোগিতা নিয়ে বিরোধীরা যখন প্রশ্ন তুলেছিলেন, তখন কেন্দ্রের তরফে দাবি করা হয়েছিল, লকডাউন না করা হলে দেশে ২৯ লক্ষ মানুষ করোনায় সংক্রমিত হতেন এবং মৃত্যু হোত ৭৮ হাজার মানুষের। কেন্দ্রের দেওয়া গাণিতিক বিশ্লেষণ তোলপাড় ফেলে বিশেষজ্ঞ মহলে।
এরপরই আসে বস্টন কনসালটেন্সি গ্লোবের সমীক্ষা রিপোর্ট। তাতে বলা হয়, লকডাউন করা না হলে দেশে ২ লক্ষ ১০ হাজার মানুষের মৃত্যু হোত। বলাই বাহুল্য তাতে বিতর্কে ঘৃতাহুতি পড়ে। এবার সামনে এল সাম্প্রতিকতম রিপোর্ট। যে রিপোর্টে প্রাপ্ত ফলাফল, অর্থাৎ মৃতের সংখ্যা কেন্দ্রের এবং বিসিজির রিপোর্টের ধারেকাছে নেই।
দেশে সংক্রমিত এবং মৃতের সংখ্যা কোথায় গিয়ে ঠেকতে পারে, তা নিয়ে নিরন্তর গবেষণা করে চলেছে ইন্ডিয়ান সায়েন্টিস্টস রেসপন্স টু কোভিড ১৯। তারাই সম্প্রতি গাণিতিক মডেলটি পেশ করেছে। তাতে দাবি করা হয়েছে, ভারতে এই মুহূর্তে ১ কোটি অশনাক্ত কোভিড সংক্রমিত আছেন। সরকারি মৃত্যুর তথ্য বিশ্লেষণ করে তাঁরা দেখতে পেয়েছেন, ভারতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ফলে কমপক্ষে ৮ হাজার এবং সর্বোচ্চ ৩২ হাজার মানুষ মারা যেতে পারেন। ওই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত অধ্যাপক তথা ভারতে ডিজিস মডেলিংয়ে বিশেষজ্ঞ গৌতম মেনন বলছেন, কম-বেশি ২৬ হাজার মানুষের মৃত্যুর কথা আমরা সরকারি তথ্যের গাণিতিক বিশ্লেষণ করে পাচ্ছি। জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে অগাস্ট মাসের পুরো সময় ধরে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের পিক চলবে বলে মনে করছে ইন্ডিয়ান সায়েন্টিস্টস রেসপন্স টু কোভিড ১৯।
এই মুহূর্তে আগামীতে কী হতে চলেছে, তা জানা সম্ভব নয়। কিন্তু ধারণা তৈরির জন্য গাণিতিক বিশ্লেষণের বিকল্প নেই। ভারত যখন করোনাভাইরাস মোকাবিলা করছে, তখন সরকারের পাশাপাশি তথ্য বিশ্লেষণের কাজ করে চলেছেন বহু গবেষক। এক একটি রিপোর্টে আসছে এক একরকম ফল। ফলে কোন রিপোর্টে ভরসা করবেন সাধারণ মানুষ, এটাই এখন বড় প্রশ্ন।
Comments are closed.