এনপিআর ফর্মে কী থাকছে, আর কী বাদ যাচ্ছে তা নিয়ে বিভ্রান্তি চরমে। পাইলট পর্বে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার পর ফর্ম থেকে ছেঁটে ফেলা হয়েছে প্যান নম্বর সংক্রান্ত সারণী। কিন্তু বিতর্ক তাতে থামছে না। এনপিআর প্রশ্নমালায় থাকা মা-বাবার জন্মের তারিখ ও জন্মস্থান জানানোর মতো বিষয়গুলোকে নিয়ে আপত্তি তুলছেন অনেকে। এর মধ্যেই আরও একটি বিষয় নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। এনপিআরের ফর্মে এবার আপনাকে পূরণ করতে হবে আপনার মাতৃভাষা কী, সেই পংক্তিও। কিন্তু কেন মাতৃভাষা জানা জরুরি বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় সরকার? এই প্রশ্নেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বিরোধী রাজনীতিবিদরা।
আগামী এপ্রিল মাসের প্রথম দিন থেকে সেপ্টেম্বর মাস অবধি দেশে চলবে জনগণনার প্রথম ধাপ। সমান্তরালভাবে চলবে এনপিআরের কাজও। সেই এনপিআর ফর্মেই এবার ঢোকানো হয়েছে মাতৃভাষা সংক্রান্ত প্রশ্ন। অর্থাৎ, এনপিআর ফর্ম পূরণ করতে গিয়ে আপনাকেও জানাতে হবে আপনার মাতৃভাষা কী।
শুরুতে না থাকলেও এবার এনপিআরের জন্য কেন মাতৃভাষা জানতে চাইছে কেন্দ্র? কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের দাবি, দেশের কোন অংশে কোন ভাষাভাষীর মানুষ কত সংখ্যায় বাস করেন, তা জানার উদ্দেশেই এই অন্তর্ভুক্তি। একইসঙ্গে কোন ভাষাভাষীর মানুষের দেশের কোনও অংশে কত মাইগ্রেশন হয়েছে, সে সম্পর্কেও বিস্তারিত তথ্য মিলবে।
কিন্তু বিরোধীদের সাফ কথা, এনআরসির প্রথম ধাপ এনপিআর। তাই এনপিআরে মাতৃভাষার তথ্য নেওয়ার অর্থই হল তা এনআরসিতে কাজে লাগানো। যদিও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে এনআরসির সঙ্গে এনপিআরের যোগের কথা অস্বীকার করা হয়েছে। খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ একাধিকবার এই দাবি করলেও মানতে নারাজ বিরোধীরা।
বিরোধীদের যুক্তি, জনগণনার সময় মাতৃভাষা সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করার রেওয়াজ আজকের নয়। তাহলে কোন যুক্তিতে এনপিআরেও তা অন্তর্ভুক্ত করা হল? সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাদের অভিযোগ, ভাষা চিহ্নিতকরণের মধ্যে দিয়ে আসলে বাংলাভাষী মানুষদের ধরে ধরে হেনস্থা করার পথ প্রশস্থ করা হচ্ছে।
এর স্বপক্ষে তৃণমূলের যুক্তি, উত্তর-পূর্ব হোক কিংবা কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র কিংবা উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, সর্বত্র বাংলাভাষীদের কোনঠাসা করার জাতীয় প্রয়াস শুরু করে দিয়েছে আদতে বাঙালি বিরোধী বিজেপি। যাতে বাংলাভাষী হলেই তাদের বাংলাদেশী তকমা দেওয়া যায়।
বাঙালির জাতীয়তাবাদ নিয়ে মাঠে ময়দানে আন্দোলন করা সংগঠন বাংলা পক্ষের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং অধ্যাপক গর্গ চ্যাটার্জি বলছেন, আমরা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, এনআরসি এবং এনপিআরের সর্বাত্মক বিরোধিতা করছি। ভাষার ক্ষেত্রে কেবলমাত্র বেছে বেছে বাঙালিদেরই টার্গেট করা হচ্ছে। তাঁর মতে, রাষ্ট্রীয় অর্থে ভাষার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ভেদাভেদের বিষ আরও ছড়িয়ে দেওয়ার পথ নিয়েছে সরকার। এটা বাঙালির আত্মপরিচয়ের উপর রাষ্ট্রীয় আক্রমণ। একে রুখতে বাঙালিদের একজোট হতেই হবে, মনে করেন গর্গ।
সব মিলিয়ে এনপিআর ফর্ম নিয়ে বিভ্রান্তি যেন কমার পরিবর্তে চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়ে চলেছে। তাতে সর্বশেষ সংযোজন মাতৃভাষা অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত।
Comments are closed.