মুকুলের গুগলিতে বেসামাল বিজেপি। শুক্রবার দুপুরে যখন ছেলেকে নিয়ে সল্টলেকের বাড়ি থেকে বেরিয়ে তৃণমূল ভবনের দিকে পা বাড়িয়েছেন, তা দেখে টনক নড়ে গেরুয়া নেতৃত্বের। দিল্লি থেকে আসতে শুরু করে একের পর এক ফোন। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটের ভক্ত মুকুল জানেন, হাত থেকে একবার বল বেরিয়ে গেলে আর ফেরানো যায় না। হতচকিত বিজেপি নেতাদের ফোন ধরেননি সর্বভারতীয় সহ সভাপতি মুকুল রায়।
মুকুলের আচমকা সিদ্ধান্তের পর রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ অবশ্য বিজেপির মুকুল হারা হওয়াকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাননি। বলেছেন, যদি তৃণমূল ছেড়ে আসার পর তৃণমূলের ক্ষতি না হয় তাহলে বিজেপি ছেড়ে গেলে বিজেপির ক্ষতি হবে কেন? মুখে বললেও বঙ্গ বিজেপির অন্দরে মুকুল রায়ের তৃণমূলে যোগ দেওয়া নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
দুপুর ২ টো নাগাদ তৃণমূল ভবনে পৌঁছয় মুকুল রায়ের গাড়ি। তার একটু আগেই ঢুকেছে মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়। কিছুক্ষণের মধ্যে তৃণমূল ভবনে পৌঁছয় অভিষেক ব্যানার্জির কালো ফর্চুনার। একে একে শীর্ষই নেতৃত্বও হাজির। তৃণমূল ভবনে মুড়ি-চানাচুর সহযোগে চলছে তুমুল আড্ডা। ঘড়িতে সময় দুপুর ৩ টে বেজে ২ মিনিট। বিজেপির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে তখনও সর্বভারতীয় সহ সভাপতি হিসেবে মুকুল রায়ের ছবি।
মুকুল রায়কে নিয়ে প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ। তার আধ ঘণ্টার মধ্যে বদলে যায় মুকুল রায়ের ট্যুইটার হ্যান্ডলও।
বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি লেখা বায়োর জায়গা নেয় সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস লেখা লাইন।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে বঙ্গ বিজেপিকে ২০১৬ বিধানসভায় ১০% ভোট থেকে ২০১৯ লোকসভায় ৪০% এ পৌঁছে দেওয়ার দৌড়ে দিলীপের পাশাপাশি মুকুল রায়ের অবদান অস্বীকার করার নয়। কিন্তু একুশের বিধানসভায় ভরাডুবির পর যখন বিজেপি ঘুরে দাঁড়ানোর পথ খুঁজছে তখন মুকুল রায়ের মানের নেতার শাসক শিবিরে যোগ দেওয়ার ব্যঞ্জনা ভিন্ন। শুক্রবার মমতা ব্যানার্জি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, মুকুলের লোকেদের নিতে আপত্তি করবে না দল। অর্থাৎ বিজেপিতে গিয়ে তৃণমূল ভাঙ্গানোর যে কাজ করতেন মুকুল রায়, বলে শোনা যেত, তৃণমূলে ফিরেও সেই ভূমিকার বদল না হওয়ার ইঙ্গিত। এবার কি তাহলে বিজেপিতে আরও বড় ভাঙ্গন? শুক্রবার তৃণমূল ভবন থেকে তেমনই ইঙ্গিত পাচ্ছেন পর্যবেক্ষকরা। এই পরিস্থিতিতে বিধায়ক-সাংসদদের ধরে রাখতে কী পদক্ষেপ নেবে বিজেপি? এখন এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
Comments are closed.