চুক্তি ভেঙে মুম্বই বিমানবন্দর হস্তান্তর আদানি গোষ্ঠীকে? চুক্তিভঙ্গের অভিযোগে জিভিকে গোষ্ঠীকে আইনি নোটিস বিনিয়োগকারীদের
মুম্বই বিমানবন্দরের বেসরকারিকরণ হয়েছিল আগেই। কিন্তু এবার সেই প্রক্রিয়ায় গোলমালের অভিযোগ তুলে বিমানবন্দর পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত জিভিকে গোষ্ঠীকে আইনি নোটিস পাঠালো বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কনসর্টিয়াম। চিঠির কপি পাঠানো হয়েছে ঋণপ্রদানকারী ব্যাঙ্কগুলোর শীর্ষকর্তাদের। ইংরেজি দৈনিক দ্য ইকনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে এমনই দাবি করা হয়েছে।
মুম্বই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বেসরকারিকরণের পর দায়িত্ব পায় জিভিকে গোষ্ঠী। সেই প্রক্রিয়ায় জিভিকে গোষ্ঠীতে কনসর্টিয়াম গড়ে অর্থ বিনিয়োগ করে আবুধাবি ইনভেস্টমেন্ট অথরিটি (ADIA), কানাডার পাবলিক সেক্টর পেনশন (PSP) এবং ভারতের ন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফান্ড (NIIF)।
এবার এই কনসর্টিয়ামই আইনি নোটিস পাঠাল জিভিকে গোষ্ঠীকে। নোটিসে বলা হয়েছে, মুম্বই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (MIAL) আদানি গোষ্ঠীকে বিক্রি করে দেওয়া হলে তা হবে চুক্তিভঙ্গের সামিল। কনসর্টিয়ামের সদস্যরা জানিয়েছেন, তাদের এই সন্দেহের মূল কারণ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টের ভিত্তিতে তৈরি হওয়া জল্পনা। যেখানে দাবি করা হয়েছে, বিমানবন্দর জিভিকের হাত থেকে নিয়ে নিতে উদ্যোগ নেওয়া শুরু করেছে আদানি গোষ্ঠী।
বিষয়টি যদি সত্যি হয় তাহলে তাকে চুক্তিভঙ্গ হিসেবেই দেখবে আবু ধাবি ইনভেস্টমেন্ট অথরিটি (এডিআইএ), কানাডার পাবলিক সেক্টরস পেনশন (পিএসপি) এবং এনআইআইএফ এর বিনিয়োগকারী সংঘ। হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়ে আগেই প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর দফতরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এবার আইনি নোটিস গেল জিভিকে গোষ্ঠীর কাছে।
ঠিক কী অভিযোগ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের?
জিভিকে গোষ্ঠীর জিভি সঞ্জয় রেড্ডি ছাড়াও এসবিআই চেয়ারম্যান রজনীশ কুমার, এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান দীপক পারেখ, গোল্ডম্যান স্যাকস ইন্ডিয়ার শীর্ষকর্তা প্রমুখকে চিঠি দিয়ে বিনিয়োগকারী কনসর্টিয়ামের দাবি, আদানি গোষ্ঠীকে মুম্বই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (MIAL) বিক্রির সিদ্ধান্ত চুক্তিভঙ্গের সামিল। এই গোটা বিষয়ে তারা একটি স্বচ্ছ সমাধান চেয়েছে। চিঠিতে বিদেশি সংস্থাগুলির দাবি, ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত এক্সক্লুসিভিটি চুক্তি রয়েছে তাদের। অর্থাৎ, এর মধ্যে অন্য কোনও সংস্থাকে শেয়ার কিনতে অগ্রাধিকার দেবে না জিভিকে। তার পরেও আদানি গোষ্ঠীকে স্টেক বিক্রির ব্যাপারে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে কেন, প্রশ্ন তুলেছে তারা।
গত বছর অক্টোবরে এডিআইএ, পিএসপির সঙ্গে চুক্তি হয় জিভিকে গোষ্ঠীর। স্থির হয় মুম্বই এয়ারপোর্টে জিভিকের ৭৯ শতাংশ শেয়ার ৭,৬১৪ কোটি টাকার বিনিময়ে কিনবে এই দুই গোষ্ঠী। মুম্বই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং নভি মুম্বইয়ের গ্রিনফিল্ড বিমানবন্দরে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করে গত ন’মাসে ৩০ কোটি ডলার বন্ড হিসেবে জমা দিয়েছে তারা। এই অবস্থায় এডিএআই এবং পিএসপি কিছুতেই পিছিয়ে যেতে চায় না।
কিন্তু জানা গিয়েছে, মুম্বই বিমানবন্দরে জিভিকের হাতে থাকা ৫০.৫ শতাংশ অংশীদারি কিনে নিতে চলেছে গৌতম আদানির সংস্থা। এ নিয়ে জিভিকে গোষ্ঠীর সঙ্গে কথাবার্তাও এগিয়ে গিয়েছে অনেকটা। এরপরেই আপত্তি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও অর্থ মন্ত্রকের দ্বারস্থ হয় এডিআইএ, পিএসপি। তবে গত সপ্তাহেই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক জানিয়েছে, বিষয়টি বেসরকারি সংস্থার মামলা। তাই মন্ত্রক এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। এবার জিভিকে গোষ্ঠী এবং অন্যান্য বিনিয়োগকারীদের চিঠি দিয়ে চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ আনল এডিআইএ ও পিএসপি। এই প্রসঙ্গে অবশ্য আদানি গোষ্ঠীর তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি বলে জানাচ্ছে ইংরেজি সংবাদপত্র দ্য ইকনমিক টাইমস।
Comments are closed.