বিদ্যুৎ উৎপাদন, বণ্টন এবং বিক্রয় প্রক্রিয়ার আমূল বদল চাইছে কেন্দ্র। এ নিয়ে মোদী সরকারের সঙ্গে নয়া সংঘাতে রাজ্য। প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে প্রতিবাদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির।
করোনা পরিস্থিতির মধ্যে গত ১৭ এপ্রিল বিদ্যুৎ মন্ত্রকের তরফে বিদ্যুৎ সংশোধনী বিল প্রকাশ করা হয়। প্রতিটি রাজ্যকে তার খসড়া পাঠিয়ে তাদের মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে। এই নিয়েই ক্ষুব্ধ মমতা ব্যানার্জি। তাঁর মন্তব্য, এই বিলের মাধ্যমে একটি স্বশাসিত কমিশন গঠন করতে চাইছে কেন্দ্র। যার মাধ্যমে রাজ্য সরকারের থেকে বিদ্যুৎনীতি সংক্রান্ত সমস্ত অধিকার একপ্রকার নিজেদের হাতে নিয়ে নিতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। শুধু রাজ্যের অধিকার খর্ব করাই নয়, এর ফলে বিদ্যুতের বিল ব্যাপক হারে বাড়বে বলে আশঙ্কা মমতার।
সরাসরি ভর্তুকি তুলে দিয়ে গ্রাহকদের ব্যাঙ্কে ডিরেক্ট ক্যাশ ট্রান্সফার প্রথা নিয়ে আসতে চাইছে কেন্দ্র। যা কৃষক বিরোধী, অসংগঠিত শ্রমিক বিরোধী, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকার গ্রাহকদের ক্ষেত্রে ব্যাপক অসুবিধার। এতে প্রথমে বিরাট অঙ্কের বিল জমা দিতে হবে। তারপর অপেক্ষা করতে হবে, কখন ভর্তুকির টাকা ব্যাঙ্কে আসে। এ নিয়ে মোদীকে দেওয়া চিঠিতে মমতা লিখেছেন, আমরা লক্ষ্য করেছি, এই ডিরেক্ট ট্রান্সফার প্রথা নিয়ে প্রচুর অভিযোগ রয়েছে। আমরা চাই সরাসরি ভর্তুকি। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই বিদ্যুৎ সংক্রান্ত প্রস্তাবিত সংশোধনের সম্পূর্ণ বিরোধী বলে সাফ জানান মুখ্যমন্ত্রী। খসড়া বিল কেন জনস্বার্থে বিপজ্জনক, তা জানিয়ে কেন্দ্রকে এই বিল নিয়ে আর না এগোতে অনুরোধ জানিয়েছেন মমতা। অভিযোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে খর্ব করে রাজ্য সরকারের একের পর এক অধিকারে হস্তক্ষেপ করছে মোদী সরকার। এ নিয়ে সর্বভারতীয় স্তরে প্রতিবাদ চান মুখ্যমন্ত্রী। তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা, ছত্তিশগড় এবং মহারাষ্ট্রও এই ই-বিলের চরম বিরোধিতা করেছে।
কিন্তু কী আছে খসড়া বিদ্যুৎ (সংশোধনী) বিলে?
আগামীদিনে ইলেকট্রিসিটি কন্ট্রাক্ট এনফোর্সমেন্ট অথরিটি (ইসিইএ) গঠনের কথা বলা হয়েছে খসড়ায়। এই অথরিটির ক্ষমতা হবে দেওয়ানি আদালতের তুল্য। যা উৎপাদনকারী এবং বণ্টনকারী সংস্থাগুলির মধ্যে বিদ্যুৎ কেনাবেচা সংক্রান্ত বিবাদের মীমাংসা করবে। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, রাজ্য বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বিভিন্ন বিদ্যুৎ সংক্রান্ত কেনা-বেচা, দাম নিয়ে বিবাদের মীমাংসা করে। কিন্তু এই বিলে রাজ্যের অধিকার খর্ব করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। ইসিইএ যে সিদ্ধান্ত নেবে, তা কোনও রাজ্য সরকার বদলাতে পারবে না। অ্যাপিলেট অথরিটি বা সুপ্রিম কোর্টে যেতে হবে। এমনকী যে চুক্তির ভিত্তিতে এই বিদ্যুৎ বিক্রি হচ্ছে, তার উপর নজরদারি তো বটেই, প্রয়োজনে নির্দেশিকাও জারি করবে এই অথরিটি। বণ্টনকারী সংস্থাগুলি অপ্রচলিত বিদ্যুৎ শক্তির উৎস থেকে একটা নির্দিষ্ট অংশ কিনতে বাধ্য থাকবে। যা অমান্য হলে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। এমনকী বিদ্যুৎ বণ্টনে সাব-লাইসেন্স ও ফ্র্যাঞ্চাইজি ব্যবস্থা নিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে এই খসড়া বিলে। যা একপ্রকার বেসরকারিকরণ বলে অভিযোগ। সেক্ষেত্রে রাজ্য বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের কোনও অনুমতিরই প্রয়োজন হবে না। কেন্দ্রীয় লোড ডেসপ্যাচ সেন্টারই স্থির করবে, চুক্তি অনুযায়ী দেশের কোন প্রান্তে কতটা বিদ্যুৎ যাবে এবং কীভাবে যাবে।
প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে মমতার প্রশ্ন, কেন কেন্দ্রীয় সরকার গঠিত কমিশন বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করবে? তার চেয়েও বড় কথা, প্রস্তাবিত এনফোর্সমেন্ট অথরিটিতে রাজ্যের কোনও প্রতিনিধিত্বই থাকছে না! মুখ্যমন্ত্রীর আশঙ্কা, হঠাৎ করে বিদ্যুৎ বণ্টনে ফ্র্যাঞ্চাইজি আমদানির অর্থ হল, কেন্দ্র নিজেদের পছন্দসই সংস্থাকে নিয়ে আসবে। আর ন্যাশনাল সিলেকশন কমিটির মাধ্যমে গোটা ব্যবস্থার নজরদারি করা হবে। মমতা ব্যানার্জি-সহ বিরোধী দলগুলির ক্ষোভ, রাজ্যগুলির সঙ্গে আগেভাগে কোনও আলোচনা ছাড়াই কেন্দ্র লকডাউনের মধ্যে আচমকা এরকম বিল কেন তৈরি করল?
Comments are closed.