বিশ্বের চিকিৎসক ও গবেষকদের মতভেদের মধ্যেই করোনা ঠেকাতে হাইড্রক্সি-ক্লোরোকুইন ব্যবহারের সুপারিশ করল ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (ICMR)। শুধুমাত্র দুটি ‘ হাই রিস্ক’ গ্রুপের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে তবেই হাইড্রক্সি-ক্লোরোকুইন ব্যবহার করা যাবে বলে জানিয়েছে ICMR।
করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের ১৯০ টিরও বেশি দেশে। এই ভাইরাসকে কীভাবে মোকাবিলা করা যাবে তা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন বিশ্বের নানা প্রান্তের চিকিৎসক ও গবেষকরা। প্রতিষেধক বানাতে গবেষণা চালাচ্ছেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরাও। এর মধ্যে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ জানিয়েছে, করোনা আক্রান্ত রোগীর অবস্থা খুব খারাপ হলে তাঁকে ম্যালেরিয়ার ওষুধ হাইড্রক্সি-ক্লোরোকুইন দেওয়া যেতে পারে। তবে তা রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে। মোট দুই গ্রুপ, যাঁরা এরই মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের পরিবারের লোকজন এবং সংশ্লিষ্ট চিকিত্সক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অ্যান্টি-ম্যালেরিয়ার এই ওষুধ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে ICMR। যদিও করোনাভাইরাসের জন্য গঠিত মেডিক্যাল টাস্ক ফোর্সের হুঁশিয়ারি, সংক্রামিত হওয়া এড়াতে এটাই যথেষ্ট নয়। সব ব্যক্তিকে সমস্ত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সংক্রমণ এড়াতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, বারবার হাত ধোয়ার কথাও বলেছে মেডিক্যাল টাস্ক ফোর্স।
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় আইসিএমআর গঠিত ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্সের এই সুপারিশে মান্যতা দিয়েছে ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া। তাদের জারি করা অ্যাডভাইসরিতে বলা হয়েছে, শুধুমাত্র ইমার্জেন্সি ক্ষেত্রে চিকিৎসক মনে করলে হাইড্রক্সি-ক্লোরোকুইন দিতে পারেন করোনা আক্রান্তকে। করোনা মোকাবিলায় যে ম্যালেরিয়ার এই ওষুধ কার্যকরী তা পরীক্ষা করে জানা গিয়েছে বলে ওই অ্যাডভাইসরিতে বলা হয়েছে। তবে ১৫ বছরের নীচে কোনও আক্রান্তকে এই ড্রাগ দেওয়া যাবে না বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
হাইড্রক্সি -ক্লোরোকুইন দিয়ে কারও থেরাপি চলার সময়, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বাড়িতে গৃহবন্দি হয়ে থাকতে হবে। তিনি রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে পারবেন না। রেজিস্টার্ড ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া এই ওষুধ কেনা যাবে না। এই ওষুধ সেবনের পর কোভিড-১৯ ছাড়া অন্য কোনও লক্ষণ দেখা দিলে, তাঁদের দ্রুত সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করতে বলা হয়েছে অ্যাডভাইসরিতে।
গত শনিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হাইড্রোক্সি-ক্লোরোকুইনের সঙ্গে অ্যাজিথ্রোমাইসিনের কম্বিনেশন নিতে বলেছিলেন করোনা মোকাবিলায়। মেডিসিনের ইতিহাসে এই দুই ওষুধের কম্বিনেশন গেম-চেঞ্জার হতে চলেছে বলে উল্লেখ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আমেরিকা যে এর সুফল পেয়েছে, তা-ও তিনি উল্লেখ করেন।
চিনেও কিছু করোনা আক্রান্তের ক্ষেত্রে এই হাইড্রক্সি-ক্লোরোকুইন ব্যবহার হয় বলে জানা যায়। যদিও করোনা মোকাবিলায় এর ব্যবহার নিয়ে দ্বিমত রয়েছে বিশেষজ্ঞদের।
মার্কিন প্রশাসন ছাড়াও করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় অ্যান্টিভাইরালের পাশাপাশি, ম্যালেরিয়ার ওষুধ ‘হাইড্রক্সি-ক্লোরোকুইন’ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে জর্ডন প্রশাসন। কেবলমাত্র গুরুতর অসুস্থদের ক্ষেত্রে এই নির্দেশ দিয়েছে সে দেশের ‘ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’। তবে জর্ডনের এফডিএ-র প্রধান ডঃ হাই ওবেইদাত একটি রিপোর্টে জানিয়েছেন, সম্প্রতি তাঁর সংস্থা হাইড্রক্সি-ক্লোরোকুইন ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপেও আইনের ভিত্তিতে এটি অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই ওষুধ কোনও ভাবেই করোনাভাইরাসের মতো মারণ রোগ প্রতিরোধ করতে পারে না। কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত ব্যক্তি যখন দ্বিতীয় পর্যায় পৌঁছবে, সে ক্ষেত্রেই এই ওষুধ ব্যবহার করা উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
Comments are closed.