বর্তমান এনআরসি বাতিল করে নতুন করে হোক নাগরিকপঞ্জি, দাবি অসম সরকারের

৩১ অগাস্ট প্রকাশিত এনআরসি খারিজ করে জাতীয় এনআরসির অংশ হওয়ার দাবি তুলল অসম সরকার। বুধবারই সংসদে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, সারা দেশেই এনআরসি হবে। অমিত শাহের সেই মন্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে অসমের বিজেপি সরকার দাবি তুলেছে, ৩১ অগাস্ট যে এনআরসি তালিকা প্রকাশ হয়েছে তা কেন্দ্রকে খারিজ করতে হবে এবং অসমকে জাতীয় এনআরসির আওতায় এনে নতুন করে প্রক্রিয়া চালাতে হবে।

বুধবার গুয়াহাটিতে অসমের অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেন, বর্তমান এনআরসি বাতিল করে অসম জাতীয় স্তরে যে নাগরিকপঞ্জি তৈরি হবে, তার অংশ হতে চায়। তবে এব্যাপারে এখনও পর্যন্ত কোনও আনুষ্ঠানিক আবেদন পত্র কেন্দ্রের কাছে পাঠায়নি অসম সরকার।

তিনি বলেন, অসম রাজ্য বিজেপি এবং অসম সরকার মনে করে সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে এবং প্রতীক হাজেলার তত্ত্বাবধানে অসমে যে নাগরিকপঞ্জি তৈরি হয়েছে, তা অসমবাসীর আকাঙ্খা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। এই তালিকায় যে বহু ভ্রান্তি এবং ভুল রয়েছে তা ইতিপূর্বে প্রকাশ্যে এসেছে। অসমের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এই তালিকার বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনও জানিয়েছে। আমাদের দাবি, বর্তমান এনআরসিকে খারিজ করে যখন জাতীয় স্তরে নাগরিকপঞ্জী তৈরি হবে, অসমকে তার অংশ করে নেওয়া হোক।

বিশ্বশর্মা আরও বলেন, আমার মনে হয় গোটা ভারতে একটিই সময়সীমা ধার্য করা হোক, যার অংশ হিসেবে থাকুক অসম। এটা ১৯৬১, ১৯৬৬ কিংবা ১৯৭১ হতে পারে। এজন্য অসম অ্যাকর্ড বাতিল করার প্রয়োজন নেই। একই দেশে ভিন্ন ভিন্ন ধার্যসীমা রাখার কোনও অর্থ হয় না বলেও মন্তব্য অসমের অর্থমন্ত্রীর। গোটা দেশে এনআরসি লাগু করার সময় অসম মডেল অনুসরণ করা যেতে পারে বলেও কেন্দ্রকে পরামর্শ অসম বিজেপির এই দাপুটে নেতার। সূত্রের খবর, ১৯৭১ এর বদলে গোটা দেশের মতো অসমেও ১৯৫১ কে ধার্যসীমা ধরার ব্যাপারে কেন্দ্রের প্রাথমিক সম্মতি রয়েছে। তবে অসম অ্যাকর্ডকে বাতিল না করে ধার্যসীমা কীভাবে বদলাবে, তার উত্তর অধরা।

তাহলে কি নাগরিক তালিকা থেকে ১৯ লক্ষ মানুষের নাম বাদ পড়াতেই অশনি সঙ্কেত দেখছে অসম বিজেপি? অসমের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের দাবি সেই তালিকার সিংহভাগই হিন্দু ধর্মাবলম্বী। সরাসরি সেই উত্তর না দিয়ে হিমন্ত বিশ্বশর্মা পাহাড় প্রমাণ ভ্রান্তির দায় চাপিয়েছেন কো অর্ডিনেটর প্রতীক হাজেলার উপর। যেভাবে প্রতীক হাজেলা নিজের উদ্যোগে গোটা ব্যাপারটি সামলাতে চেয়েছিলেন, তা সবচেয়ে বড় ভুল বলে মনে করছে অসম বিজেপি। এই প্রেক্ষিতে প্রতীক হাজেলার করা ভুলের খেসারত কেন অসম বিজেপিকে দিতে হচ্ছে, সেই প্রশ্নও তৃণমূল স্তরে উঠতে শুরু করেছে বলে জানা যাচ্ছে। ফলে ভুলে ভরা এনআরসি নিয়েই এখন সিঁদুরে মেঘ দেখছে অসম বিজেপি। তাই তড়িঘড়ি এনআরসি বাতিল করে জাতীয় স্তরের এনআরসির অংশ হতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন হিমন্ত বিশ্বশর্মারা, এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

Comments are closed.