যে অজিতের বিরুদ্ধে কেলেঙ্কারির বিস্তর অভিযোগ বিজেপির, তাঁর সঙ্গেই হাত মিলিয়ে মহারাষ্ট্রে ফের মুখ্যমন্ত্রী ফড়নবিস

শনিবার সকাল থেকে মহারাষ্ট্র তো বটেই, সারা দেশের রাজনৈতিক মহলের আলোচনায় উঠে এসেছে একটি নাম, তিনি অজিত পাওয়ার। শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেস জোট সরকারে তেমন আলোচনায় না থাকা এই নামই পাল্টে দিল মহারাষ্ট্রের সরকার গঠন প্রক্রিয়া।
কে এই অজিত পাওয়ার?
এনসিপি দলের অন্দরে শরদ পাওয়ারের ভাইপো অজিতকে সবাই উচ্চাকাঙ্খী রাজনৈতিক নেতা হিসেবে জানেন। বিধায়ক কিংবা মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী হিসেবে বারবার বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন অজিত। কখনও আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছেন। কখনও ভোট না পেলে গ্রামবাসীদের জল সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। ২০১৩ সালে খরা বিধ্বস্ত মহারাষ্ট্রের ড্যামে জল না থাকায় যখন সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন কৃষকরা, পাওয়ারের কটাক্ষ, জল না থাকলে কী করা যাবে, আমরা কি প্রস্রাব করে ড্যাম ভরিয়ে দেব?
এইভাবে আর্থিক দুর্নীতির প্রশ্নে ও বেফাঁস মন্তব্য করে একাধিকবার দলকে অস্বস্তিতে ফেলেছেন তিনি। গত মাসেই পিএমসি ব্যাঙ্কের ২৫ হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারি মামলায় নাম জড়ায় অজিতের। তাঁর নাম ওঠে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টোরেটের (ইডি) খাতায়। যা নিয়ে খোঁচা দিতে ছাড়েনি আগের ফড়নবিস সরকার। সেই অজিত পাওয়ারের হাত ধরেই নিজের দ্বিতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার লক্ষ্য পূরণ করে ফেললেন দেবেন্দ্র ফড়নবিস!
২০১০ সালের নভেম্বর থেকে ২০১২-র সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী ছিলেন অজিত পাওয়ার। সেচ কেলেঙ্কারিতে নাম জড়ানোর পর ইস্তফা দিয়ে জানান, এই অভিযোগ থেকে নিজের নাম মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমি বিধায়ক হিসেবে সেবা করব। কোনও মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করব না। সে সময় বিদর্ভের উন্নয়ন খাতে ১৩,৫০০ কোটি টাকায় দুর্নীতিতে নাম জড়ায় তাঁর।
২০১৪ সালে দেবেন্দ্র ফড়নবিস প্রথমবার মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী হয়ে অজিতের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেন। ফড়নবিস ঘোষণা করেন, শীঘ্রই অজিতের জায়গা হবে আর্থার রোড জেলে। এই অক্টোবর মাসে বিধানসভা ভোটের আগেও ইডির তদন্ত হয়। এর জেরে বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেন অজিত। শুধু অজিত নন, তাঁর কাকা তথা এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ার সহ দলের ৭০ জন নেতার বিরুদ্ধে তদন্ত করছে ইডি।
এহেন অজিত শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেস জোটের হবু সরকারকে বিশ বাঁও জলে ফেলে কেন ফড়নবিসের সঙ্গে হাত মেলাতে গেলেন?
শিবসেনা মুখপাত্র সঞ্জয় রাউতের অভিযোগ, অজিতের বিরুদ্ধে তদন্তকারীদের লেলিয়ে দিয়ে চাপে ফেলতে চেয়েছিল বিজেপি, চেয়েছিল এনসিপি-র অন্দরে ভাঙন ধরাতে। উল্লেখ্য, এদিন শরদ পাওয়ারের মেয়ে তথা অজিতের বোন সুপ্রিয়া সুলে তাঁর হোয়াটসঅ্যাপ স্টেটাসে লেখেন, ‘দল ও পরিবারে ভাঙন’। প্রশ্ন উঠেছে, দলের বিরুদ্ধে বা বা আরও পরিষ্কার করে বললে কাকা, মারাঠা স্ট্রংম্যান শরদ পাওয়ারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে অজিত কি সত্যিই পাওয়ার ও এনসিপি পরিবারের মধ্যে ভাঙন ধরালেন? দুর্নীতিতে নিমজ্জিত অজিতকে কটাক্ষ করে শিবসেনার মন্তব্য, এখন থেকে মহারাষ্ট্রের মন্ত্রিসভার বৈঠক কি আর্থার রোড জেলেই হবে?

Comments are closed.