মাওবাদী অধ্যুষিত ছত্তিসগড়ের বস্তারের অচেনা গ্রাম পেড্ডাকর্মা। দেশের বহু গ্রামের মতো এখানেও ইন্টারনেটের সিগনাল মেলে না। এদিকে লকডাউনে ভার্চুয়াল ক্লাসই একমাত্র পথ। তাই সিগন্যালের খোঁজে রোজ ১০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে বিজাপুর শহরের কাছে পৌঁছতে হয় বছর সতেরোর মোদিয়াম সুখলালকে। যেদিন অনলাইন ক্লাস থাকে বিজাপুরের পথে চেরপাল গ্রামে আত্মীয়ের বাড়িতে সাইকেল চালিয়ে যায় সুখলাল। সেখানে ২-৩ ঘণ্টা ‘অনলাইন পাঠ’ শেষ করে আবার সাইকেল চালিয়ে ঘরে ফেরা, এভাবেই করোনা পরিস্থিতিতে পড়াশোনা চালাচ্ছে ওই ছাত্র।
মোদিয়াম সুখলালের কথায়, আমার গ্রামে মোবাইল সিগনাল মেলে না। চেরপালে মোটামুটি সিগনাল পাওয়া যায়। তাই অনলাইন ক্লাস থাকলে ১০ কিমি রাস্তা উজিয়ে যেতে হয় সাইকেল চালিয়ে।
করোনা পরিস্থিতিতে ‘নিউ নর্মাল’ এর জেরে অন্যান্য অঞ্চলের মতো ছত্তিসগড়ের পড়ুয়াদেরও শিক্ষার মাধ্যম এখন অনলাইন। কিন্তু সেখানে বেশিরভাগ জায়গাতেই ইন্টারনেট পরিষেবাও নেই, নেই ঘরে ঘরে স্মার্টফোন। তথ্য বলছে, ছত্তিসগড়ে মাত্র ১৫.২ শতাংশ পরিবারে ইন্টারনেট পরিষেবা আছে। দেশে এই পরিসংখ্যানটা ২৩.৮ শতাংশ। ২০১১ সালের সোশিও-ইকনমিক কাস্ট সেন্সাসের তথ্য অনুযায়ী, ছত্তিসগড়ের মোবাইল ফোনের ব্যবহার হয় ২৯ শতাংশ। যা দেশে সর্বনিম্ন।
এদিকে গত ৭ এপ্রিল ছত্তিসগড় রাজ্য শিক্ষা দফতর ‘পড়হাই তুমহার দ্বার’ নামে একটি অনলাইন পোর্টালের উদ্বোধন করেছে। যেখানে রাজ্যের ৬০ লক্ষ পড়ুয়ার মধ্যে ২০ লক্ষ নাম নথিভুক্ত করেছে। এছাড়া সরকারি, বেসরকারি স্কুল মিলিয়ে ২ লক্ষ শিক্ষক নাম তুলেছেন এই পোর্টালে।
কিন্তু যে রাজ্যে বেশিরভাগ মানুষের কাছে কম্পিউটার বা স্মার্টফোন নেই, ইন্টারনেট সিগন্যাল পাওয়া যায় না, সেখানে অনলাইন পাঠ কতটা সহজ হবে তার একটা উদাহরণ বস্তারের ১৭ বছরের ছাত্র সুখলাল। সপ্তাহখানেকের মধ্যে অনলাইন মাধ্যমে পড়ার মাধ্যম তৈরি করে ফেলেছে ছত্তিসগড়। কিন্তু দারিদ্র ও শিক্ষার হার নিম্নমুখী এই রাজ্যের পড়ুয়ারা অনলাইন ক্লাস করতে গিয়ে পদে পদে হোঁচট খাচ্ছে।
অনেক অভিভাবকই অনলাইন পোর্টালের নামটুকু মাত্র শুনেছেন। কিন্তু স্মার্টফোন নেই! তাই গত ক’মাসে রাজ্যের বেশিরভাগ বাড়ির কচিকাঁচার পড়াশোনা ডকে উঠেছে। অনেক বাসিন্দা অবশ্য জানাচ্ছেন, এই অতিমারির সময় সরকারের তরফে চেষ্টা জারি রয়েছে। অনলাইন শিক্ষা পদ্ধতিতে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছে কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও। কিন্তু এই ‘ডিজিট্যাল ইন্ডিয়া’য় অনলাইন ক্লাসের সুযোগ ছত্তিসগড়ের মতো পিছিয়ে পড়া রাজ্যের সব পড়ুয়াকে দেওয়া এখনও দূর অস্ত। পড়ুয়ারা তাকিয়ে আছে স্বাভাবিক স্বাভাবিক হওয়ার দিকে, যাতে তাঁরা আবার স্কুলে গিয়ে পড়তে পারে।
Comments are closed.