‘অপরাধ করলে মুসলিম বলে ছাড়বেন না’, মুখ্যমন্ত্রীকে খোলা চিঠি শহরের মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত বিশিষ্টজনদের একাংশের
প্রথমে এনআরএসের ঘটনা তারপর মঙ্গলবার মধ্যরাতে প্রাক্তন মিস ইন্ডিয়া ঊষসী সেনগুপ্তের অ্যাপ ক্যাবে বেপরোয়া বাইকের ধাক্কাকে কেন্দ্র করে গোলমাল। দু’ক্ষেত্রেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের নাম জড়ানোকে কেন্দ্র করে আলোচনা, সমালোচনা শুরু হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এমনকী এন আরএস কাণ্ডে মুসলিম সপ্রদায়ের নাম করে অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। এবার কলকাতায় বসবাসকারী মুসলিম সম্প্রদায়ের একাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তি সরাসরি চিঠি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। আবেদন জানালেন, সম্প্রদায়ের রঙ না দেখে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার। তাতে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে আড়াল করা হচ্ছে না, সমাজে এই বার্তা যাবে, বলে চিঠিতে লিখেছেন তাঁরা।
কদিন আগেই রোগী মৃত্যুর জেরে রোগীর পরিজনদের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন এনআরএসের জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশ। তা নিয়ে উত্তাল হয় রাজ্য রাজনীতি। জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি চলাকালীন প্রথম তাতে ধর্মীয় অ্যাঙ্গেল আনেন বিজেপি নেতা মুকুল রায়। জুনিয়র ডাক্তারদের উপর হামলাকারী হিসেবে সরাসরি একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের দিকে ইঙ্গিত করেন। তারপর ঘটনায় ধর্মীয় রঙ লাগাতে নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের তত্ত্ব এগিয়ে নিয়ে যান বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ-সহ অন্যান্য নেতারা। সোশ্যাল মিডিয়াতেও একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে টার্গেট করে আক্রমণ চলছে। এরই মধ্যে মঙ্গলবার মধ্যরাতে শহরের এক মডেলের অ্যাপ ক্যাবে হেলমেটহীন বাইক আরোহীদের ধাক্কা দেওয়াকে কেন্দ্র করে গোলমাল বাধে। ঘটনাচক্রে সেখানেও ধৃতরা মুসলিম সম্প্রদায়ের। তা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়।
এই প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিলেন রাজ্যের মুসলিম সম্প্রদায়ের একাংশ। চিঠিতে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন, দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিন। মুসলিম বলে অভিযুক্তদের যেন রেহাই না দেওয়া হয়। তারপর বন্ধনীতে লিখেছেন, মানুষ এমনটাই মনে করছেন। দোষীদের ধর্ম না দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদনের পাশাপাশি তাঁরা চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, এতে সমাজে একটি বার্তা পৌঁছে দেওয়া যাবে যে, কোনও একটি বিশেষ সম্প্রদায়কে ইচ্ছাকৃতভাবে আড়াল করা হচ্ছে না। তারপর আবার বন্ধনী লেখা হয়েছে, যেটা বেশিরভাগ মানুষ বিশ্বাস করছেন। চিঠির শেষে নিজেদের ‘নীরব ভুক্তভোগী’ বা ‘সাইলেন্ট সাফারার্স’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। চিঠিতে সাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন মুদার পাথেরিয়া, মামুন আখতার, হেনা নাফিস সহ আরও অনেকে।
এনআরএস কাণ্ড কিংবা মঙ্গলবার রাতে বেপরোয়া বাইকারদের দাপাদাপি, দুটি ঘটনাতেই অভিযুক্তদের একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ভুক্ত বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে। কিন্তু অপরাধীর কোনও ধর্ম হয়? দেশের আইনেও সম্প্রদায়ভিত্তিক কোনও বিভাজন নেই। তাহলে অপরাধীদের একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ভুক্ত বলে আলাদা করা কেন? এই প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ। তবে নিজের সম্প্রদায়কে কালিমালিপ্ত করার প্রয়াসের বিরুদ্ধে নাগরিকদের একাংশের মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা এই চিঠিকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
Comments are closed.