প্রথম বিশ্বের দেশে মোটা মাইনের চাকরি বাগিয়ে দেশ ছাড়া বেশিরভাগ মেধাবী পড়ুয়ার স্বপ্ন। কিন্তু হেলায় সেই চাকরি ছেড়ে দেশে ফিরে চাষবাস আর গো পালনের ইচ্ছেপ্রকাশ বোধহয় তেমন কেউ করেননি। এমনটা ভাবার সাহসই হয়ত পান না অনেকে। এবার এই স্টিরিওটাইপ ভেঙে দিলেন গায়ত্রী ভাটিয়া। আমেরিকার বস্টনে একটি পরিবেশ রক্ষা সংস্থায় অ্যানালিস্টের লোভনীয় চাকরি ছেড়ে দেশে ফিরে অর্গানিক চাষকেই নিজের পেশা বেছেছেন তিনি।
জন্ম ও বেড়ে ওঠা মুম্বইয়ে। মার্কিন মুলুকে পরিবেশ বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে বস্টনের নামী সংস্থায় পরিবেশ বিশেষজ্ঞ হিসেবে যোগ দেন গায়ত্রী ভাটিয়া। কিন্তু ২০০৯ সালে হঠাৎ চাকরি ছেড়ে দেশে ফেরেন গায়ত্রী। লক্ষ্য ছিল জৈব চাষ।
পুরাণে কৃষ্ণের ছেলেবেলার জায়গা বলে খ্যাত বৃন্দাবন। সেই বৃন্দাবনে ১০ একর জায়গা জুড়ে অর্গানিক চাষ করছেন গায়ত্রী ভাটিয়া। একসময় কর্পোরেট কর্মী গায়ত্রীকে এখন দেখা যায়, কখনও লুঙ্গি-শার্ট পরে চারা গাছের যত্ন নিচ্ছেন, আবার কখনও গরুকে চারা খাওয়াচ্ছেন।
কিন্তু বিদেশের চাকরি, উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ছেড়ে চাষাবাদ করার সিদ্ধান্ত কেন? আবার তাকেই একমাত্র পেশা করার পেছনে কারণ কী? পরিবেশ বিশেষজ্ঞ গায়ত্রী ভাটিয়ার কথায়, দীর্ঘদিন পরিবেশ নিয়ে কাজ করে বুঝেছেন, এই শিল্পচালিত সমাজ ব্যবস্থায় ইতিমধ্যেই মাটি, বাতাস তথা সমগ্র পরিবেশের বিপুল ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। তাই চাষবাসকেই এই দূষণমুক্তির একমাত্র মাধ্যম বলে মনে হয়েছে তাঁর। আর বড় চাকরি ছেড়ে চাষবাসকে পেশা করার প্রশ্নের জবাবে গায়ত্রী জানান, পৃথিবী দ্রুত বদলাচ্ছে। সেই সঙ্গে বদলাচ্ছে উপার্জন বা জীবিকা নির্বাহের রাস্তাও। যাঁরা ৯ টা-৫ টার অফিসে হাঁপিয়ে ওঠেন, মন না চাইলেও নিজের সংসারের জন্য চাকরি করতে বাধ্য হন, তাঁরা চাইলেই খুঁজে নিতে পারেন স্বাধীন জীবিকা। তবে গায়ত্রী ভাটিয়া শুধু স্বাধীন জীবিকার খোঁজেই নয়, পরিবেশের প্রতি নিজের দায়বদ্ধতার কারণেই চাষবাসকে নিজের ‘ফুল টাইম’ পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
গায়ত্রী যখন বৃন্দাবনে ১০ একর জায়গা কিনেছিলেন, তখন সেখানে শুধু আম বাগান ছিল। কয়েকটা নারকেল গাছ, আর কাজু বাদামও ফলত। এখন পুরো জমিকে ফল আর সবজির ভাণ্ডার বললেও কম বলা হয়। জৈব চাষের মাধ্যমে গায়েত্রী ভাটিয়া ফলিয়েছেন আম, কলা, পেপে, আনারস, কাঁঠাল, জাম, কাজু, টম্যাটো। মশলার মধ্যে রয়েছে হলুদ, আদা, গোলমরিচ। সবজির মধ্যে লেটুস সহ বিভিন্ন রকম শাক, তালিকাটা বেশ দীর্ঘ। বাড়তি ফসল আর বীজ এলাকার অন্যান্য কৃষকদের সঙ্গে ভাগ করে নেন গায়ত্রী, সেই সঙ্গে তাঁদের উৎসাহ যোগান জৈব চাষে।
ইতিমধ্যেই বড় বাজার ধরে নিয়েছে তাঁদের জৈব চাষের ফসল। তাঁর জমির হাজার হাজার কিলো আম বিক্রি হয় মুম্বইয়ের বাজারে। মুম্বইয়ের বড় বড় হোটেল, রেস্তরাঁতেও বিপুল চাহিদা গায়ত্রী ভাটিয়ার অর্গানিক ফসলের।
Comments are closed.