দু’দিনের বাংলা সফর সেরে দিল্লি ফিরেছেন অমিত শাহ। কিন্তু তাঁর বঙ্গ সফর নিয়ে শুরু হয়েছে নজিরবিহীন চাপানউতোর। মুখ্যমন্ত্রী গত দু’দিনে বারবার সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। নাম না করে তাঁর অভিযোগ বাংলার কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে। মমতার অভিযোগ নয়া মাত্রা পেয়েছে সোমবার তৃণমূলের ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোরের একটি ট্যুইটে।
সোমবার প্রশান্ত কিশোর ট্যুইটে দাবি করেন, সমর্থক সংবাদমাধ্যমের হাজারো ঢক্কানিনাদ সত্ত্বেও বিজেপি দুই অঙ্ক পেরোতে হিমশিম খাবে।
সমর্থক সংবাদমাধ্যম বলতে কাকে নিশানা করলেন পিকে? মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিই বা কোন মিডিয়াকে নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন?
রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলছে, সমস্যার সূত্রপাত রবিবার অমিত শাহের বোলপুরের রোড শো নিয়ে। দুপুরের ওই অনুষ্ঠান লাইভ দেখিয়েছে বাংলার সবকটি ২৪ ঘণ্টার নিউজ চ্যানেল। কিন্তু তার মধ্যে কিছু চ্যানেল আলাদা করে নজর কেড়েছে। কীভাবে? তৃণমূলের অভিযোগ ওই চ্যানেলগুলো অমিত শাহের রোড শো-কে এমনভাবে পরিবেশন করেছে যেন বিজেপির বাংলা জয় এখন স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। সম্প্রচারের এই পদ্ধতি পছন্দ হয়নি রাজ্যের শাসক দলের। সেই ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে মুখ্যমন্ত্রীর কথায় বা পিকের ট্যুইটে।
কী হয়েছিল?
২০ ডিসেম্বর বোলপুর শহরে রোড শো করেন অমিত শাহ। সকাল থেকেই সেই অনুষ্ঠান নিয়ে খবর সম্প্রচার করেছে সংবাদমাধ্যম। কিন্তু মমতা ব্যানার্জির আপত্তি শাহের সভার লাইভ টেলিকাস্ট সম্প্রচার সংক্রান্ত।
তৃণমূল সূত্রে খবর, মূলত এবিপি আনন্দ, জি ২৪ ঘণ্টা, নিউজ ১৮ বাংলা এবং সিএন নিউজে শাহের শোর লাইভ টেলিকাস্ট চলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। নেওয়া হয়নি কোনও ব্রেক। নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে তারা কেবল শাহের র্যালিই দেখিয়ে যায়। রাজ্যের শাসক দলের প্রশ্ন, টানা ৫-৬ ঘণ্টা লাইভ দেখানোর মানে হল সেটাই সবচেয়ে বড়ো খবর কিন্তু সত্যিই কি তাই? রাজ্যজুড়ে আর কোনও গুরুত্বপূর্ণ খবর কি হয়নি? তাহলে সব বাদ দিয়ে কেবল শাহকেই দেখিয়ে যাওয়া কীসের ইঙ্গিত? সূত্রের খবর, একটানা কভারেজ দিয়ে বাংলায় বিজেপির পক্ষে হাওয়া তোলার কাজ করছে কিছু মিডিয়া গোষ্ঠী বলে মনে করছে তৃণমূল নেতৃত্ব।
তারপরেই পিকে ট্যুইট করে কটাক্ষ করেন বিজেপির সমর্থক মিডিয়াকে এবং বলেন হাজার ঢক্কানিনাদ সত্ত্বেও বিজেপির ১০০ আসন পেতে ঘাম ছুটবে।
একইভাবে অসন্তোষ ব্যক্ত করেছেন মমতা ব্যানার্জিও। সোমবারের পর মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠক থেকে তাঁর খোঁচা, ভালো করলেও আমাদের জায়গা হবে না। কিন্তু অমিত শাহ ফিতে কাটলেও তা নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তা দেখানো হবে।
মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে সংবাদমাধ্যমের বিবাদ অবশ্য নতুন নয়। ২০১৬ বিধানসভা ভোটের সময় বাংলার সবচেয়ে বড়ো সংবাদ গোষ্ঠীর সঙ্গে সমস্যা হয়েছিল। মমতা ব্যানার্জির অভিযোগ ছিল বিরোধী জোটকে (বাম-কংগ্রেস) ভোটে মাইলেজ দিতে এক তরফা খবর পরিবেশন করছে আনন্দবাজার পত্রিকা ও এবিপি আনন্দ। সংবাদমাধ্যম রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করছে বলে দাবি করেছিল তৃণমূল। তারপর গঙ্গা-পদ্মা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে। ফের একটি বিধানসভা ভোটের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে বাংলা। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এবারও সেই সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ তৃণমূল নেত্রীর গলায়।
Comments are closed.