মার্ক্সবাদী দেবেশ রায় জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অটুট বিশ্বাস রেখেছেন বামপন্থায়, আর ভেবে গেছেন জলপাইগুড়ির কথা

‘গণেশ রায় (গণেশ চন্দ্র রায়, বিশিষ্ট নট, নির্দেশক, আবৃত্তি শিল্পী ও জলপাইগুড়ির গণনাট্য আন্দোলনের পুরোধা) দইলা দা হলে, হীরু হয় ভাইপো, আর তুমি তাহলে নাতি। আমার নাগাল তো হীরু অবধি। তাঁর নীচে অবধি পোঁছায়নি। তাঁর ছেলে এতটা লায়েক হয়েছে কোনও খবরই আসেনি আমার কাছে।’
দেবেশ রায়ের সঙ্গে আমার প্রথম ফোনালাপের প্রথম সংলাপ এটাই। বলেছিলেন, ‘তোমাদের বাড়ি যে আমার কাছে কী ছিল, সেটা আমি তোমায় বোঝাবো কী করে? আমার লেখক জন্মের আঁতুড়ঘর’।
বলেছিলাম, ‘বরিশালের যোগেন মণ্ডল করতে চাই’…, শুনে বললেন, ‘বইটা পড়েছ’!
‘হ্যাঁ, দুই’বার’।
‘১১০০ পাতার বই দুই’বার! এই বই তো একবারও শেষ করতে পারে না কেউ! আমার নাতির বয়সী কেউ এই বইটা পড়েছে এবং সেটা থেকে একটা নাটকও করতে চায়, এ আমার ভাবনারও বাইরে’।
তাঁর কন্ঠের উচ্ছ্বাস আমাকে স্পর্শ করছিল ৮৫০ কিলোমিটার দূর থেকেও। তিনি বলেই চললেন, ‘সুমন (মুখোপাধ্যায়) যখন ‘তিস্তাপার’ করতে চেয়েছিল, তখন ওর রিহার্সাল দেখে তারপর আমি অনুমতি দিই। কিন্তু তুমি আমার বাড়ির ছেলে, আমার নাতি, তোমাকে সবরকম স্বাধীনতা দিলাম’।
আমার হৃৎপিণ্ডের লাবডুব নিজের কানেই দামামার মতো বাজছিল।
‘তবে আর যাই করো, সংলাপ-টংলাপ পাল্টিও না হে। বড় পরিশ্রম করে, গবেষণা করে নিক্তি মেপে মেপে লেখা। এর কোনও পরিবর্তন আমি সহ্য করতে পারব না’। ভালো অভিনেতা থাকলে করেই ফেলো, দেখব মঞ্চের উপন্যাস পাঠ।’

এই ছিল তাঁর সাথে এই অর্বাচীনের কথালাপের শুরুয়াত। তারপর অনেকদিন ঘন্টার পড় ঘন্টা টেলিফোনিক আলাপ হয়েছে। আলাপ তো নয়, ক্লাস। ভারতবর্ষের স্বাধীনতার পঙ্কিল ইতিহাস নাট্যের নানা অংকের যবনিকা একের পর এক যেন আমার সামনে উন্মোচিত হচ্ছিল। রাজনীতির নানা গোলকধাঁধা, অজানা গল্প, দেশভাগের তীব্র অভিঘাত, সব কিছুই যেন ছবির মতো স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। আলোচনায় অক্লান্ত ছিলেন তিনি। প্রশ্নের উত্তর দেওয়াতে ছিল কখনও নির্বোধ ছাত্রকে সহনশীল অধ্যাপকের প্রশ্রয়, কখনও যেন অবুঝ নাতিকে শিখিয়ে পড়িয়ে নেবার স্নেহ। জলপাইগুড়ি আনন্দ চন্দ্র কলেজে ১৯৫৯-৭৪ এ দীর্ঘ অধ্যাপনায় এভাবেই গড়ে তুলেছেন অনেক ছাত্রকে স্নেহে, প্রশ্রয়ে। তাঁর কৃতি ছাত্র, বিশিষ্ট লোকগবেষক বিমলেন্দু মজুমদারের ভাষায়, ‘আমরা যে কজন ছাত্র তাঁকে খুব কাছে থেকে দেখবার সুযোগ পেয়েছি, তাঁর প্রতিভাদীপ্ত ব্যক্তিত্ব এবং রৌদ্র দীপ্ত পর্বত শিখরের মতো জ্ঞান দীপ্তির কাছে আমাদের মাথা ঝুঁকে থেকেছে, কিন্তু আমাদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করেছেন দাদা ভাইয়ের।’

তিনি নিজেকে কথোয়াল বলে পরিচয় দিতে ভালোবাসতেন। এক গ্রাম্য কথাকার, গল্প শুনিয়ে যাওয়া যার পেশা (মাঝি যেমন ঘাটোয়াল, গরুর গাড়ি চালক গাড়োয়াল)। চিরনবীন এই কথোয়াল এর কাছে টেলিফোনেই শুনতে পেয়েছি এই এপিক উপন্যাসের গড়ে ওঠার গল্প। এ তো শুধু বিস্মৃত জননেতার জীবনচরিত নয়, বাংলার সর্বপ্রথম অবিসংবাদী দলিত নেতার রাজনৈতিক জীবনের আখ্যান নয়, ‘বরিশালের যোগেন মণ্ডল’ হল ১৯৩৬-১৯৪৭, এই দশ বছরে জাতীয় রাজনীতি থেকে বাংলার প্রতিনিধিত্ব এবং গুরুত্ব কমতে কমতে মিলিয়ে যাবার ইতিহাস। সুভাষ চন্দ্র, এ কে ফজলুল হক এবং যোগেন কীভাবে যেন এক সূত্রে গাঁথা হয়ে যান–নিজের অজান্তেই যেন হয়ে যান ইতিহাসের ট্র্যাজিক নায়ক।
‘ইতিহাসের চোখে একজন ভিলেনকে নায়ক করে তোলা বড় শক্ত হে’, বলেছিলেন তিনি। বড় শক্ত সমাজের ‘অপর’কে পাদপ্রদীপের আলোতে উজ্জ্বল করে তোলা। শুধু এই উপন্যাসই নয়, তাঁর লেখালেখির সিংহভাগই দখল করে রয়েছে ‘অপর’কে জানবার সাধনা। আমাদের মধ্যবিত্ত, নাগরিক যাপনে যাঁদের অস্তিত্বই আমাদের কাছে অলীক, সেই বাঘারু, সেই মাদারি, তাঁর মা, বুড়ি মার গোতের বুড়িমা তাঁদের জীবন যুদ্ধের দলিলই তিনি লিখে গেছেন আজীবন। যোগেনের জন্য যেমন ঘাঁটতে হয়েছে দুষ্প্রাপ্য সব নথি, তেমনই চষে বেড়িয়েছেন ওপার বাংলার বরিশাল সহ অনেক জেলার অজ পাড়া গাঁ (যদিও তাঁর জন্ম ১৯৩৬ এ পাবনা জেলায় এবং ৪৩ এ তাঁর ঠাকুরদা পরিবার সহ চলে আসেন জলপাইগুড়ি)। তিনি দেখেছেন দুই বাংলাতেই পুরনো গোঁড়া ব্রাহ্মণেরা এখনও যোগেনকে কতটা ঘৃণা করে। দেশভাগের জন্য দায়ী করেন অনেকেই। কিন্তু নমশূদ্র সমাজের কাছে এখনও তিনি প্রণম্য।
আমি জানতে চেয়েছিলাম স্বাধীন পাকিস্তানের প্রথম আইনমন্ত্রী হবার পর যখন তিনি প্রায় পালিয়েই দেশে ফিরে এলেন এবং তার পরে এক অকিঞ্চিৎকর রাজনৈতিক জীবন পালন করলেন। সেই পরাজয়টা এই উপন্যাসে এলো না কেন? উনি বলেছিলেন, এই প্রশ্নের সম্মুখীন তাঁকে অনেকবার হতে হয়েছে। তিনি সবাইকেই একই কথা বলেছেন যে, ব্রাহ্মণ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে দলিত নেতা হিসেবে যোগেনের আন্দোলনের গুরুত্ব বাবাসাহেব আম্বেদকারের চেয়ে কম কিছু ছিল না। কিন্তু পাকিস্তানে চলে যাওয়ায় ভারতবর্ষের ইতিহাস তাঁকে সচেতনভাবে ‘ইরেজ’ করে দিয়েছে। এই বিস্মৃতির জাল ছিন্ন করে তাঁকে ইতিহাসে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতেই তিনি কলম ধরেছেন। যোগেনের স্বপ্ন সত্যি হয়ত হয়নি, কিন্তু তাঁর তত্ত্ব যে মিথ্যে ছিল না, মিথ্যে ছিল না তাঁর সংগ্রাম, সেটা আজকের শাসকের এই ভয়ঙ্কর উগ্র মনুবাদী রূপ আরও স্পষ্টভাবে প্রত্যয়িত করছে প্রতি নিয়ত। যোগেনের স্পষ্ট উচ্চারণ এখনও ধ্বনিত হয় ভারতের নানা প্রান্তে অরণ্যে, বন্দরে, জনপদে–’আমি হিঁদুও না মুসলমানও না, আমি শুদ্র-এক স্বতন্ত্র জাত’।

আমাদের নাটকও উপন্যাস অনুসারী হয়ে যোগেনের দেশত্যাগের যাত্রা দিয়েই শেষ হয়। উচ্চারিত হয় সেই অমোঘ সংলাপ-‘যোগেন নিজেকে দেখতে চায়, ভারতবর্ষ নামে হাজার-হাজার বছরের ধ্যানের একমাত্র প্রতিনিধি সে, এক শুদ্র। চলেছে পাকিস্থানে। সেই ধ্যানের স্বদেশকে সত্য রাখতে। শুদ্র ছাড়া সে দায় আর কে নেবে?’ কিন্তু দুর্ভাগ্য, আমাদের ১০ টি শো’র একটিও তাঁকে দেখাতে পারিনি। যদিও নাটকের পোস্টার, ছবি, রিভিউ সবই তাঁকে পাঠিয়েছিলাম। প্রথম শো এর আগে তাঁর আশীর্বানী সহ একটি চিঠিও এসে পৌঁছায় আমাদের হাতে। যখন যে সূত্রটি প্রয়োজন হয়েছে, যখন যেখানে আটকে গেছি তখনই শরণাপন্ন হয়েছি আমার জেঠু কাম দাদুর কাছে (বাবার ছিলেন দেবেশ দা) পরম স্নেহে সহ্য করেছেন সময়-অসময়ের উপদ্রব। জানি না হয় তো জলপাইগুড়ির টানেই নাকি আমার বাড়ির যোগসূত্রে। আমাদের রায় বাড়ির সাথে দেবেশ রায়ের ছিল আত্মার টান। সন্ধ্যাবেলার প্রগতিশীল কবি, সাহিত্যিক, নাট্যকর্মী, সঙ্গীত শিল্পীদের ঠেকই তো ছিল পাওয়ার হাউসের পিছনের রায়দের একান্নবর্তী কুঠি। গণেশ রায়ের সান্নিধ্যেই তৈরি হচ্ছিলেন দেবেশ রায়, কার্ত্তিক লাহিড়ী, অমিতাভ দাশগুপ্ত, সুরজিৎ বসু, সমর চৌধুরীদের মতো বম্বশেল। তাঁর অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হয়ে বামপন্থী আন্দোলন, খাদ্য আন্দোলনের লড়াই, পরে পার্টি ভাগ হয়ে যাবার পর সিপিআইতে থেকে গিয়ে সি পি এমের সাথে দ্বান্দিক তাত্বিক সংগ্রাম, আবার সত্তরের উত্তাল সময়ে দুষ্কৃতীদের কাছে আক্রান্ত হওয়া কিংবা ফ্যাসিবিরোধী প্রগতিশীল সাহিত্য সভা, কিংবা রবীন্দ্র জন্ম শতবর্ষে পাঁচদিনব্যাপী নাট্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সক্রিয় অংশগ্রহণ, সবেরই সাক্ষী ছিল আমাদের বাড়ি, আমার দাদু, জেঠু এবং আমার বাবা। মার্ক্সবাদী দেবেশ রায় জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অটুট বিশ্বাস রেখেছেন বামপন্থায়, আর ভেবে গেছেন জলপাইগুড়ির কথা। তিস্তা নদী, তাঁর অববাহিকায় গড়ে ওঠা জনপদের ইতিহাস, ভূগোল, সমাজ বিজ্ঞান তাঁর ভাবনার একটা বড় অংশ নিয়ে ছিল আজীবন। একদিন আমি, গৌতম দা (কবি গৌতম গূহ রায়), আমার মামা (চিত্র পরিচালক সুদীপ্ত সেন) বসেছিলাম তাঁর শেয়ালপাড়ার বাড়ির উঠোনে। কিছুক্ষণ পর তিনি উদয় হলেন টোটোতে চড়ে, টোটোওয়ালার পাশে বসে। হাতে ঝোলানো থলেতে উঁকি দিচ্ছে গোটা চারেক ফলি মাছ।
‘দিন বাজারে জ্যান্ত পেলাম, তিস্তার ফলি, আজ খেয়েই যেও’। কথা হচ্ছিল ‘তিস্তা পুরান’ নিয়ে। হাসতে হাসতে বললেন, ‘তিস্তা পুরান’ খুবই অপাঠ্য এক উপন্যাস। পুরোটা শেষ করা যায় না। আমি নিজেও করিনি।’ যদিও আমার অভিমত একেবারেই ভিন্ন। ‘তিস্তা পুরান’ এর বহুমাত্রিকতা যেন কোথাও কোথাও ‘তিস্তাপার’কেও ছাপিয়ে যায়। সেটা বলবার সাহস পেলাম না। উনি বলে চললেন, ‘কিন্তু একটা দারুণ এপিসোড আছে জানো। এক জোতদার ও এক রাজবংশী ঘাটোয়ালের (মাঝি) একটা জার্নি, আপল চাঁদের মধ্য দিয়ে তিস্তাকে ছুঁয়ে।’ এখানে দুটো শ্রেণির দুটো মানুষ গভীর অরণ্যে পথ হারিয়ে ফেলে। গুলিয়ে যায় তাঁদের শ্রেণি চরিত্র। জোতদার হারিয়ে যাবার ভয়ে মাঝি ছেলেটাকে ‘ভুলা মাসান’ দেবতা ঠাউরে বসেন। প্রার্থনা করেন উদ্ধার করে দেবার। কীভাবে সমাজ চেতনার সাথে মিলে মিশে যায় প্রকৃতি চেতনা, মিথ। একটা ফিল্মের পরিকল্পনা হয়ে যায়। চিত্রনাট্য লেখার দায়িত্ব পড়ে আমার উপর (শুনেছি সুমন মুখোপাধ্যায়ও লিখেছিলেন, কিন্তু তাঁর মনপুতঃ হয়নি)।
‘রাজবংশী ভাষা জানা আছে’?
আমি মাথা নাড়ি। ‘শিখে নেব’।
‘আপলচান্দ এ গিয়েছ?’
‘দু’একবার’।
‘একবার আমার সাথে যাবে’, জায়গাটা হাতের তালুর মতো চিনি আমি। আর ডায়লগটা আমিই লিখে দেব। একটু তাড়াতাড়ি কোর, চলে যাবার আগে যেন দেখে যেতে পারি। ৮০ ছুঁয়ে ফেলেছি’।
তারপর কাজ শুরু হয়েছিল। চিত্রনাট্যের খসড়া দেখে অনেক কারেকশনও করে দিয়েছিলেন। যদিও সে কাজ রয়ে গিয়েছে অসম্পূর্ণ। কিন্তু সেদিনের সেই আড্ডা, আমার সাথে তাঁর শেষ আলাপচারিতা ছিল আমার জীবনের এক অবিস্মরণীয় দুই ঘন্টা, কিংবা বলা যায় শ্রেষ্ঠতম ক্লাস। যেখানে উঠে এসেছে কুরোসাওয়া (তাঁর প্রিয় পরিচালক) থেকে সত্যজিৎ। শম্ভু মিত্র থেকে সুমন মুখোপাধ্যায়। রবীন্দ্রনাথ থেকে স্বপ্নময় চক্রবর্তী (উচ্ছ্বসিত ছিলেন ‘হলদে গোলাপ’ নিয়ে)। লিটল ম্যাগাজিন (কলকাতা ছাড়াও নানা জেলার, বিশেষ করে জল শহরের প্রায় সব লিটিল ম্যাগ এর নিয়মিত পাঠক ছিলেন)। ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন ‘উন্নয়ন’ নামক মানব উচ্ছেদকারী জনপদ, প্রকৃতি ধ্বংসকারী শব্দবন্ধের প্রতি। কত ‘খেতখেতু’, ‘চ্যারকেটু’, ‘মাদারি’, ‘বাঘারু’কে বাস্তুচ্যুত করেছে এই ‘পরিকল্পনাহীন’ তিস্তা ব্যারেজ’, সেই কথা তিনি বারবার বলেছেন, লিখেছেনও অনেক পত্রিকায়। শেষে বলেছিলেন যে, আক্ষেপ একটাই রয়ে যাচ্ছে এই সর্বগ্রাসী বিশ্বায়ন, প্রবল ভোগবাদ, প্রযুক্তির প্রায় দাসে পরিণত হওয়া মধ্যবিত্ত বাঙালির ক্রমাগত পালটে যাওয়ার ডক্যুমেন্টেশনটা ঠিক ধরে রাখতে পারলাম না। কাজটা তিনি কিন্তু শুরু করেছিলেন ‘প্রজন্ম’, ‘সারফিং’, ‘অতলের জলে’, ‘বিতানের এই বয়সটুকুর মধ্যেই’ প্রভৃতি গল্প, উপন্যাসে। আর নতুন করে শুরু করেছিলেন হাঁটা, সেই প্রিয় নদীটির চড়ে। দীর্ঘ আরেক উপন্যাসের ক্যানভাসে আঁকছিলেন ত্রিস্রোতা অববাহিকায় জনপদ গড়ে ওঠার ইতিহাস–’নদী ও শহরের যুগল গীত’ এই নামে একটু একটু করে। লিখছিলেন স্মৃতিকথা ‘জলের মিনার জাগাও’।

তাঁর চিরসখা স্ত্রী কাকলি রায় (রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী) তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন বছর দুই আগে। বড় একা হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। শরীর হয়ে উঠেছিল অশক্ত, তবুও লেখা থামাননি। বলতেন, লিখতেই ভালো লাগে সবচেয়ে বেশি। কলমটা হয়তো থেমে থাকলো, অসমাপ্ত থাকল ‘তিস্তা পারের’ আরো কিছু বৃত্যান্ত! তবু যা পড়ে রইল, তা পাথেয় হয়ে রইল আমাদের প্রজন্ম ও প্রজন্মান্তরের কাছে ।
‘হাঁটছে বাঘারু ভাঙতে ভাঙতে যাচ্ছে, কথকের দেওয়া অপমানের অন্ধকার আবরণকে ছিন্ন করে যাচ্ছে মাটির বঞ্চনা, ভুমি আধিপত্যকে। হাঁটছে বাঘারু… চলেছে যেন নেই দেশ, নেই সময়, নেই ঘর, নেই স্বজন, নেই সমাজ, নেই রাষ্ট্র, নেই ইতিহাস, নেই ভূগোলের দেশে…’।
বাঘারুরা তো আজও হেঁটে চলেছে…আমাদের এই পোড়া দেশের রাজপথ দিয়ে হাজার হাজার কিলোমিটার, এক ইনফিনিটির পথে। কথোয়াল এর কথা থামলেও ওঁদের হাঁটা থামবে কি?

(লেখক জলপাইগুড়ি শহর তথা রাজ্যের গণনাট্য আন্দোলনের অন্যতম মুখ। দেবেশ রায়ের সঙ্গে পারিবারিক যোগাযোগ বহু দশকের। সম্প্রতি দেবেশ রায়ের লেখা বরিশালের যোগেন মণ্ডলের নাট্যরূপ এবং তা মঞ্চস্থ করার অনুমতি চেয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন পেশায় অধ্যাপক তমোজিৎ রায়। অনুমতি দেন লেখক। মঞ্চস্থ হয় বরিশালের যোগেন মণ্ডল।)

Comments are closed.