পুলওয়ামা জঙ্গি হামলার এক বছর: জানা যায়নি কোথা থেকে এসেছিল আরডিএক্স, জমা পড়েনি চার্জশিট! এনআইএ তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে প্রশ্ন

পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারানো ৪০ জন সিআরপিএফ জওয়ানের স্মৃতিতে সৌধ তৈরি হয়েছে জম্মু কাশ্মীরের লেথপোরায়। যদিও এক বছরের মধ্যেও ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ) খোঁজ পায়নি, কোথা থেকে এত বিস্ফোরক জমা হয়েছিল সেই আত্মঘাতী জঙ্গি হামলায়! এখনও পর্যন্ত কোনও চার্জশিট দিতে পারেনি এনআইএ, যেহেতু কোনও সন্দেহভাজনই আর বেঁচে নেই বলে দাবি করা হয়েছে।

পুলওয়ামা জঙ্গি হামলার এক বছর

২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সিআরপিএফের ৭৮ টি কনভয়ে থাকা ২,৫০০ জন জওয়ান জম্মু থেকে শ্রীনগর যাওয়ার পথে বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ আত্মঘাতী বিস্ফোরণের মুখে পড়েন। বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ি এসে ধাক্কা সজোরে ধাক্কা মারে সেনা কনভয়ে। মারা যান সিআরপিএফের ৭৬ তম ব্যাটিলিয়নের ৪০ জন জওয়ান। হামলার দায় স্বীকার করে জঙ্গি সংগঠন জৈশ-ই-মহম্মদ। আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটানো জৈশের জঙ্গি আদিল আহমেদ দারের বাড়ি ছিল পুলওয়ামা অঞ্চলেই।

তদন্তের গতি-প্রকৃতি

এক পদস্থ সরকারি অফিসার জানান, যে পরিমাণ আরডিএক্স এই হামলায় ব্যবহার করা হয়েছিল তা কারও একার পক্ষে কেনা সম্ভব নয়। কারণ, যুদ্ধবিগ্রহে ব্যবহৃত এই সামরিক সম্ভার সাধারণত সামরিক ভাণ্ডারেই পাওয়া যায়। ফরেনসিক রিপোর্ট বলছে, ১৪ ফেব্রুয়ারির ওই হামলায় প্রায় ২৫ কেজি আরডিএক্স ব্যবহার হয়েছিল। এনআইএ জানিয়েছে, যে গাড়িতে বিস্ফোরক মজুত করা হয়েছিল তাতে ছিল অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, নাইট্রো-গ্লিসারিন এবং আরডিএক্স।
কিন্তু তদন্তে নেমে প্রতি মুহূর্তে বাধার মুখে পড়তে হয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থাকে। এখনও পর্যন্ত তদন্তের চার্জশিট গঠন করতে পারেনি তারা। কারণ হামলায় যে মূলচক্রীদের সন্দেহ করা হয়েছে, তাদের প্রত্যেকেই মৃত!
জঙ্গি হামলার দুই মূল সন্দেহভাজন, মুদাসির আহমেদ খান ও সাজ্জাদ ভাট গত বছর মার্চ ও জুনে নিরাপত্তারক্ষীর এনকাউন্টারে নিহত হয়েছে।

জৈশ-ই-মহম্মদের ভিডিয়ো

পুলওয়ামা হামলার পর একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করে ঘটনার দায় নেয় পাক জঙ্গি সংগঠন জৈশ-ই-মহম্মদ। তারা নিজেরাই এই বিস্ফোরণের আক্রমণকারীর পরিচয় দিয়ে জানায়, সে পুলওয়ামার কাকাপোড়ার বাসিন্দা। ২০১৮ সালে জৈশে নাম লেখায় আদিল আহমেদ দার নামে ওই যুবক। ভিডিয়োতে দারকে দেখা যায় উন্নত আগ্নেয়াস্ত্রের সঙ্গে এবং তার সামনে সাদা-কালো পতাকা। ভিডিয়োয় বলা হয়, এই দৃশ্য যখন সবাই দেখবে দার তখন হয়তো স্বর্গে।

এনআইএ তদন্ত

তদন্তে জানা যায়, যে গাড়িটি বিস্ফোরণে ব্যবহার হয়েছিল তা ২০১১ সালে বিক্রি হয়। একাধিকবার বিক্রি হয়ে তা সাজ্জাদ ভাটের হাতে আসে। গত বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি ওই গাড়িটি কেনে সাজ্জাদ। আর বিস্ফোরণের মাত্র ১০ দিন আগে মুদ্দাসির আহমেদ খান নামে অপর সন্দেহভাজন বিস্ফোরক জড়ো করে ফেলেছিল। বিস্ফোরণের পর গাড়িটি গড়িয়ে পাশের নদীতে পড়ে যাওয়ায় ‘ইঞ্জিন ব্লক’ পাওয়া যায়নি বলে জানান এক তদন্তকারী অফিসার।
কিন্তু তদন্তের আগে মূল সন্দেহভাজনদের এনকাউন্টারে মৃত্যু, যে গাড়িটি ব্যবহার হয়েছিল তার একাধিকবার হাতবদল হওয়ায় তদন্তের একাধিক প্রশ্নের উত্তর এখনও পাওয়া যায়নি বলে জানান ওই অফিসার। আর এক অফিসার সংবাদমাধ্যমকে জানান, এই ঘটনার তদন্ত বাধা পেয়েছে প্রচুর প্রযুক্তিগত প্রমাণ উদ্ধার না হওয়ায়। সেই সঙ্গে মূল অভিযুক্তরা নিহত হওয়ায় বয়ানও পাননি তাঁরা। তবে ভেঙেচুরে যাওয়া ওই গাড়ি থেকে যে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ হয় তা দারের বাবার ডিএনএ- এর সঙ্গে মিলে যাওয়ায়, আত্মঘাতীর পরিচয় পেতে অসুবিধে হয়নি।
অন্যদিকে জঙ্গি হামলার আরও এক সন্দেহভাজন কারি মুফতি ইয়াসিরও চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি এক এনকাউন্টারে মারা গিয়েছে। কামরান নামে আর এক সন্দেহভাজন গত বছরের ২৯ মার্চ এনকাউন্টারে নিহত হয়েছে। অন্যদিকে দারের এই ভিডিয়োটি যে প্রকাশ করেছিল, সে হল জৈশ-ই-মহম্মদের মুখপাত্র মহম্মদ হাসান। কিন্তু কম্পিউটারের যে আইপি অ্যাড্রেস পাওয়া গিয়েছে তা পাকিস্তানের বলে এনআইএ-র দাবি।

সময়ের মধ্যে চার্জশিট গঠন হয়নি

ইউএপিএ আইন অনুযায়ী, ৯০ দিনের মধ্যে এনআইএ- কে আদালতে চার্জশিট জমা দিতে হয়। তবে অভিযুক্তরা মৃত হলে এবং কিছু কারণে আরও সময় দেওয়া হয় তাদের।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডি রাজ্যসভায় লিখিত জবাবে জানান, পুলওয়ামা হামলায় তদন্তকারীদের ব্যর্থতা নেই কোনও, এনআইএ এখনও তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।

বিরোধীদের অভিযোগ

পুলওয়ামা জঙ্গি হামলায় কারা সবচেয়ে বেশি ফায়দা তুলল? মোদী-শাহকে নিশানা করে শুক্রবার একটি ট্যুইট করেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। এই জঙ্গি হামলাকে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে অভিযোগ করেছিল বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি থেকে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এই হামলার ‘প্রকৃত সত্য’ জানতে চেয়েছিলেন। তারপর কেটে গিয়েছে একটা গোটা বছর।

 

Comments are closed.