নতুন সরকার পুরোদমে কাজ শুরু করে দিয়েছে কিন্তু ইভিএম নিয়ে ধন্দ যেন কাটতেই চাইছে না। একের পর এক সামনে আসছে ইভিএমে গরমিলের অভিযোগ। যদিও নির্বাচন কমিশন এতে আমল দিচ্ছে না বলে অভিযোগ বিরোধীদের। এই প্রেক্ষিতে ইংরেজি নিউজ পোর্টাল thequint-এ EVM Vote Count Mismatch In 370+ Seats and EC Refuses to Explain শীর্ষক খবরে দাবি করা হয়েছে, প্রথম চার দফায় ভোট হওয়া ৩৭৩ টি কেন্দ্রের ফলাফলে ব্যাপক গরমিল রয়ে গিয়েছে। ভোটের সময় কমিশনের তরফে দুটি পৃথক তালিকা দেওয়া হয়। প্রথম তালিকাটি ইভিএমে মোট ভোটদাতার সংখ্যা সংক্রান্ত তালিকা এবং অপরটি ইভিএমে কত ভোট গোনা হয়েছে তার তালিকা। দুটোই থাকে নির্বাচন কমিশনের সরকারি ওয়েবসাইটে। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, সরকারি ওয়েবসাইটের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, প্রথম চার দফার ভোটে বিভিন্ন কেন্দ্রে ব্যাপক গরমিল রয়ে যাচ্ছে।
thequint-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে,
তামিলনাড়ুর কাঞ্চিপূরম লোকসভা কেন্দ্রে নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে মোট ভোট পড়েছে ১২,১৪,০৮৬ টি। কিন্তু ভোট গোণা হয়েছে ১২,৩২,৪১৭ টি। বাড়তি ১৮,৩৩১ টি ভোট কোথা থেকে এল? thequint-এর দাবি, কমিশনের তরফে এর কোনও উত্তর মেলেনি।
একই রাজ্যের ধরমপুরি কেন্দ্রে কমিশনের তথ্য বলছে মোট ভোট পড়েছে ১১,৯৪,৪৪০ টি। কিন্তু ভোট গোনা হয়েছে ১২,১২,৩১১ টি। অতিরিক্ত ১৭,৮৭১ টি ভোট কোথা থেকে এল? thequint-এর দাবি, কমিশনের তরফে এরও কোনও উত্তর মেলেনি।
তামিলনাড়ুর আরেক কেন্দ্র শ্রীপেরমবদুরেও একই অবস্থা। সেখানে ভোট পড়েছে ১৩,৮৮,৬৬৬ টি আর গণনা হয়েছে ১৪,০৩,১৭৮। অতিরিক্ত ১৪,৫১২ টি ভোটের হিসেব কমিশনের তরফে মেলেনি বলে দাবি ইংরেজি নিউজ পোর্টালটির প্রতিবেদনে।
উত্তরপ্রদেশের মথুরা আসনেও একই ঘটনা ঘটেছে। সেখানে নির্বাচন কমিশনের তথ্য দেখাচ্ছে, ইভিএমে মোট ভোট পড়েছে ১০,৮৮,২০৬ টি। কিন্তু ভোট গোনা হয়েছে মোট ১০,৯৮,১১২ টি। অর্থাৎ এক্ষেত্রে অতিরিক্ত ৯,৯০৬ টি ভোট, যার কোনও ব্যাখ্যা দিতে পারেনি নির্বাচন কমিশন, বলে পোর্টালটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রথম চার দফার ৩৭৩ টি আসনের মধ্যে ২২০ টি আসনেই এমন গরমিল লক্ষ্য করা গিয়েছে বলে দাবি thequint-এর। বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে উল্টো চিত্রও লক্ষ্য করা গিয়েছে বলে দাবি প্রতিবেদনটির। ২৭ শে মে, thequint-এর তরফে নির্বাচন কমিশনকে ই-মেল করে এই সংক্রান্ত অভিযোগ জানানো হয়। কমিশনের তরফে এক আধিকারিক thequint-কে জানান, খুব দ্রুত উত্তর জানানো হবে। সেই উত্তর আসেনি বরং সেদিনই সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশনের ভোটের ফল সংক্রান্ত ওয়েবসাইট eciresults.nic.in থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় চূড়ান্ত ভোট দাতার তালিকা। কেন হঠাৎ সাইটে এই পরিবতর্ন, এই প্রশ্ন thequint-এর তরফে করা হলেও, উত্তর দেয়নি নির্বাচন কমিশন। একই দিনে কমিশনের তরফে একটি মাত্র কেন্দ্রের ভোটের হিসাব মিলিয়ে পাঠানো হয়। যদিও সেই তথ্যও যে সম্পূর্ণ নয়, কমিশন তাও জানিয়ে দিয়েছিল বলে দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে। এরপর thequint-এর তরফে নির্বাচন কমিশনের কাছে সমস্ত তথ্য পাঠানো হয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এবিষয়ে কমিশনের কোনও জবাব আসেনি, এমনই লেখা হয়েছে প্রতিবেদনে। কমিশনের পদাধিকারীদের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেও সুযোগ পাওয়া যায়নি বলে দাবি করা হয়েছে thequint-এর পক্ষ থেকে। আর এখানেই প্রশ্ন তুলছে thequint-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদন। ভোট গণনার চারদিন পরেও নির্বাচন কমিশন thequint-কে জানিয়েছে, এখনও ভোট দাতাদের তালিকা তৈরির কাজ শেষ হয়নি। তাদের প্রশ্ন, কত ভোট পড়েছে, তার হিসেব করতে এত সময় কেন লাগছে নির্বাচন কমিশনের। নিয়ম অনুযায়ী ভোট গণনার দিন প্রিসাইডিং অফিসার বাধ্যতামূলকভাবে প্রতি ২ ঘণ্টা অন্তর উপর মহলে ভোটের হার এবং ভোট পোলড ডেটা জানান। তাহলে কি তা ঠিকভাবে করা হয়নি? তাই কি ভোট পেরিয়ে গেলেও এখনও সম্পূর্ণ হল না ভোটের হিসেব? এই প্রসঙ্গে thequint কথা বলেছিল প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক ও পি রাওয়াতের সঙ্গে। প্রাথমিকভাবে একে অত্যন্ত গুরুতর ব্যাপার বলে মনে হচ্ছে। আমার কার্যকালে এমন ঘটনার কথা শুনিনি। প্রতিক্রিয়া প্রাক্তন কমিশনারের।
thequint-এর প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, মূলত তামিলনাড়ু, বিহার, উত্তর প্রদেশ এবং অরুণাচল প্রদেশে এই বিচ্যুতি নজরে এসেছে। এখন প্রশ্ন হল, ইভিএমে গরমিলের অভিযোগের প্রেক্ষিতে নিজের প্রতিক্রিয়া দিতে এত সময় কেন লাগাচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
Comments are closed.