বিজেপিতে যাচ্ছেন, না তৃণমূলেই! ১৬ জানুয়ারি জানাবেন রাজীব? ফেসবুক পোস্ট ঘিরে জল্পনা
শনিবার লাইভে এসে কী বলবেন তরুণ মন্ত্রী তা নিয়ে জল্পনা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে
করোনার আনুষ্ঠানিক শেষের শুরুর দিন কি রাজীব ব্যানার্জির তৃণমূলে শেষ দিন? সম্প্রতি ফেসবুকে রাজীব জানান, ১৬ জানুয়ারি, শনিবার তিনি লাইভে আসবেন, সব জানাবেন।
১৬ তারিখ কী বলবেন তিনি তা নিয়ে জল্পনা শুরুর পাশাপাশি গতি পেয়েছে আরও একটি প্রশ্ন, তা হল, ডোমজুড়ের তৃণমূল বিধায়ক কি বিজেপিতে যাচ্ছেন?
ভোটের আবহে বঙ্গ রাজনীতিতে যেন ফুটবলের দলবদলের মরসুম। পুরনো দলের বিরুদ্ধে তোপ দেগে প্রতিপক্ষে যোগ দেওয়ার হিড়িক পড়ে গিয়েছে। বিজেপি থেকে তৃণমূলে যেমন আসছেন লোকেরা ঠিক তেমনই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাচ্ছেন। এই মরসুমে হেভিওয়েট নম্বর ওয়ান শুভেন্দু অধিকারী হলে তর্কাতিত ভাবে দু’নম্বরে আছেন রাজীব ব্যানার্জি। তবে তিনি এখনও তৃণমূলেই। যদিও বাজারে জোর গুঞ্জন রাজীবের গেরুয়া শিবিরে যাওয়া প্রায় পাকা। এই প্রেক্ষিতে শনিবার লাইভে এসে কী বলবেন তরুণ এই মন্ত্রী তা নিয়ে জল্পনা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ডিসেম্বরের শুরু থেকেই দলের মঞ্চে দেখা যাচ্ছিল না রাজীবকে। তার বদলে অরাজনৈতিক মঞ্চ থেকে একের পর এক মিছরির চাকু ছুড়েছেন দলের একাংশের বিরুদ্ধে। কখনও বলেছেন, স্তাবকতা করতে পারলে নম্বর বেশি আবার কখনও বলেছেন চুনোপুঁটি ধরে লাভ নেই রাঘববোয়ালদের ধরতে হবে। সবমিলিয়ে দলের সঙ্গে দূরত্ব ক্রমেই বাড়ছিল। মন্ত্রিসভার বৈঠকেও নিয়মিত গরহাজিরা দল বদলের জল্পনায় ঘৃতাহুতি দেয়।
নতুন বছরের শুরুতে জানা গিয়েছিল, ১২ জানুয়ারি হাওড়ায় সভা করতে আসছেন অমিত শাহ। ১৯ ডিসেম্বরের স্মৃতি বলছে, তড়িঘড়ি অমিত শাহের সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল মেদিনীপুর কলেজ মাঠে। যেখানে বিজেপিতে যোগ দেন শুভেন্দু। এই প্রেক্ষিতেই প্রশ্ন উঠেছিল তাহলেই কি বিবেকানন্দের জন্মদিনে অমিত শাহের হাওড়ার সভায় পদ্ম পতাকা হাতে তুলে নেবেন রাজীব ব্যানার্জি? পেরিয়ে গিয়েছে ১২ জানুয়ারি। হয়নি অমিত শাহের হাওড়ায় সভা। অতঃপর কী করবেন রাজীব?
শুভেন্দু অধ্যায় থেকে শিক্ষা নিয়ে শুরু থেকেই সতর্ক ছিল তৃণমূলও। মহাসচিব পার্থ চ্যাটার্জির সঙ্গে একাধিক বৈঠক হয় রাজীব ব্যানার্জির। কথা হয় তৃণমূলের ভোট প্রচার বিশেষজ্ঞ পিকের সঙ্গেও। কিন্তু বরফ গলেনি। সূত্রের খবর, রাজীবকে দলনেত্রীর সঙ্গে কথা বলারও প্রস্তাব দেওয়া হয়। যদিও সেই বৈঠক বাস্তবায়িত হয়নি।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে এক্ষেত্রে তৃণমূলের পক্ষ থেকে বৈঠকের প্রস্তাব দিয়ে এটা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে যে দল কথা বলতে প্রস্তুত। ফলে পরবর্তীতে যদি রাজীব দল বদল করেন তখন দলকে যোগাযোগ না করায় দোষী সাব্যস্ত করতে পারবেন না। কারণ তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের একটি অংশ মনে করছে রাজীব ব্যানার্জি দল বদল করার ব্যাপারে মনস্থির করে ফেলেছেন। এখন অকারণ দলকে ল্যাজে খেলাতে চাইছেন তিনি, যে ফাঁদে পা না দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
পাশাপাশি অন্য একটি অংশ মনে করছে রাজীবকে পয়েন্ট অফ নো রিটার্ন ঠেলে দেওয়া ঠিক হবে না। তাহলে কি রাজীবের বিজেপিতে যোগ দেওয়ার বিষয়টি এখনও ঝুলে? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, রাজীব ব্যানার্জির আপত্তির জায়গা ছিল হাওড়া জেলা নেতৃত্ব। যেখানে দায়িত্বপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সভায় তোপ দেগেছেন রাজীব ছাড়াও আরও কয়েকজন নেতা। হাওড়া জেলা তৃণমূলে নেতৃত্ব নিয়ে গোলমাল নতুন কিছু নয় কিন্তু শুধু অভ্যন্তরীণ গোলমালের ক্ষোভে রাজীব ব্যানার্জির মত তরুণ নেতা দল ছাড়লে মানুষের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছতে পারে। তাই আগ বাড়িয়ে রাজীব ব্যানার্জিকে নিয়ে মন্তব্যের পথে যাচ্ছে না ঘাসফুল শিবির। কিন্তু প্রশ্ন হল, এই নীরবতা রাজীবের কাছে অর্থবহ হচ্ছে কি? শনিবার স্পষ্ট করবেন ডোমজুড়ের তৃণমূল বিধায়ক।
Comments are closed.